শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ইউনিলিভারের লভ্যাংশে হতাশ বিনিয়োগকারীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেডের ঘোষিত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে, যার বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার দামে। ফলে একদিনেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম ২৯৩ কোটি টাকা কমে গেছে। একই সঙ্গে গত ১০ ফেব্রুয়ারির পর প্রথমবারের মতো তিন হাজার টাকার নিচে নেমে এসেছে কোম্পানিটির শেয়ার দাম।

বহুজাতিক এই কোম্পানিটির পরিচালনা পরিষদ ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৪৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল সোমবার লেনদেন শুরুর আগেই বিনিয়োগকারীদের এ তথ্য জানায় ডিএসই। ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ থেকে নাম বদল হয়ে ‘ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার’ নাম ধারণের পর এই প্রথম কোম্পানিটি লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানাল।

ইউনিলিভারের কাছে শেয়ার বিক্রির আগে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ৫৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগে ২০১৮ সালে ৫৩০ এবং ২০১৭ সালে ৫৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। অর্থাৎ, নাম বদলের পর কোম্পানিটির লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ১০০ শতাংশ কমে গেছে। লভ্যাংশ কমার কারণে গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই ইউনিলিভার কনজ্যুমারের শেয়ার দাম একশ টাকার ওপরে কমে যায়। শেয়ারের দাম কমার ধরা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ফলে দিনের লেনদেন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম ২৪৩ টাকা ৩০ পয়সা কমে ২ হাজার ৮৯৫ টাকা ৭০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ২৯৩ কোটি ৯ লাখ ১ হাজার ৪১ টাকা। অথচ কিছুদিন আগেও মোটা লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে দেখতে দেখতে ২ হাজার ৪৬ টাকা থেকে কয়েক দফা দাম বেড়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩ হাজার ৮৫৯ টাকা পর্যন্ত ওঠে। ইউনিলিভার কনজ্যুমারের লভ্যাংশের বিষয়ে বিনিয়োগকারী রহিম শেখ বলেন, আশা করেছিলাম কোম্পানিটি অন্তত সাড়ে পাঁচশ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে। কিন্তু ঘোষণা আসল ৪৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের। এতে বিনিয়োগকারীরা সবাই হতাশ হয়েছেন। মাহফুজুর রহমান নামে আর এক বিনিয়োগকারী বলেন, ইউনিলিভারের লভ্যাংশ অবশ্য বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে। কোম্পানিটির শেয়ার দাম এ কারণেই এতো পড়ে গেছে। তবে ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা বড় লোকসানের হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবেন।
কারণ ফ্লোর প্রাইসের কারণে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ২ হাজার ৪৩ টাকার নিচে নামার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন সব সময় বিনিয়োগকারীদের মোটা লভ্যাংশ দিয়েছে। খারাপ পরিস্থিতিতেও গত বছর কোম্পানিটি ৫৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। ইউনিলিভার কোম্পানিটি কিনে নেয়ার কারণে সবাই আরও ভালো লভ্যাংশের আশায় ছিল।

হরলিকস, মালটোভা, গ্লাক্সোজ-ডি, সেনসোডাইন’র মতো পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কনজ্যুমার হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিউটিক্যালস দুই ইউনিটের মাধ্যমে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করলেও লোকসান দেখিয়ে ২০১৮ সালে ওষুধ উৎপাদন কারখানা এবং ফার্মাসিউটিক্যালস বিজনেস ইউনিটের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বহুজাতিক কোম্পানিটি।
এরপর সমঝোতার মাধ্যমে গত বছরের ২৮ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বøক মার্কেটের মাধ্যমে জিএসকের শেয়ার কিনে নেয় ইউনিলিভার। ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪টি শেয়ারের প্রতিটি কেনা হয় ২ হাজার ৪৬ টাকা ৩০ পয়সা করে। শেয়ার কিনে নেয়ায় দুই দিনের মধ্যে নতুন এমডি নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। একই সঙ্গে ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ নাম বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেয়া হয় ‘ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার’।

নাম বদল হলেও গত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আগের নামেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছিল। তবে ২৬ নভেম্বর থেকে নতুন নামে লেনদেন শুরু হওয়ার পাশাপাশি ক্যাটাগরিও বদলে যায় কোম্পানিটির। ওষুধ ও রসায়ন খাত থেকে কোম্পানিটি খাদ্য খাতের আওতাভুক্ত হয়।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪৯ টাকা। এর মধ্যে ৯০ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৪ শতাংশ সধারণ বিনিয়োগকারী এবং ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে। আর বিদেশিদের কাছে আছে দশমিক ৩৪ শতাংশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন