গুড়া পৌরসভায় সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঘটনাকে পর্যবেক্ষকরা ভোটারদের কাছ থেকে এক ধরনের লালকার্ড প্রদর্শন বলে মনে করছেন। অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়কে দলের একাংশের বিশ^াস ঘাতকতার বহিষ্কার হিসেবে উল্লেখ করে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেক নেতাকর্মী বলছেন, বগুড়ায় আওয়ামী লীগের ভোট বিপর্যয়কে কেন্দ্রীয়
তদন্তের আওতায় এনে প্রতিকার করার দাবি জানিয়েছেন ।
গত ২৮ ফেব্রæয়ারী ছিল বগুড়া পৌরসভার নির্বাচন। শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখার ব্যাপারে ছিল কঠোর অবস্থানে। ফলে স্বতঃস্ফুর্তভাবে ভোট কেন্দ্র গুলোতে উপস্থিত হয়ে ৬০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোট ইভিএমের মাধ্যমে প্রদান করে। নির্বাচন চলাকালে মেয়র পদের ৪ প্রার্থীর সকলেই মিডিয়ার কাছে জানায় সম্পুর্ন সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়েছে। ভোটারদের অভিমতও ছিল একই রকম।
যথারীতি নিয়মে ফলাফল ঘোষনার পর দেখা যায় নির্বাচনে ৮২ হাজার ২১৭ ভোট পেয়ে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী রেজাউল করিম বাদশা মেয়র নির্বাচিত হন। তবে বিস্ময়করভাবে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্দ্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ ৫৬ হাজার ৯০ ভোট পেয়ে ২য় স্থান লাভ করেছেন। আর ২০ হাজার ৮৯ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী আবু ওবাইদুল হাসান ববি। সাড়ে ৬ হাজার ভোট পেয়ে ৪র্থ হয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল মতীন।
ফ্রি ফেয়ার ইলেকশনে বগুড়ায় আওয়ামীলীগ প্রার্থীর হার অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করেন বগুড়ার মানুষ। তবে পরাজিত প্রার্থী জামানত হারাবেন এটা অবিশ^াস্য এমন অভিমত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের। নির্বাচন কমিশনে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় ধারাবাহিকভাবেই কমছে আওয়ামী লীগের ভোট।
২০১১ সালের বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী এড রেজাউল করিম মন্টু পান ৫৯৩৫৫ ভোট। ১৫ সালের নির্বাচনে ওই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরই ভোট কমে আসে ৪৯৪১৭ ভোট। আর ২০২১ সালে রহস্যজনকভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয় শহর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আবু ওবায়দুল হাসান ববিকে। যিনি বগুড়ার রাজনীতির অঙ্গনে অপরিচিত একজন মুখ। শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের এই মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ছিল। মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছিল বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলমের প্লান মোতাবেকই ববিকে মনোনয়ন দেয়া হবে যেন ওই প্রভাবশালী নেতার বড়ো ভাই ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম বাদশা অনায়াসে ভোটে জিতে আসে। বাস্তবে প্লান মোতাবেক ঠিক তাই হয়েছে বলেই এখন বলাবলি হচ্ছে আওয়ামী লীগের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। মূলত এই কারণেই আওয়ামী লীগের ভোট কমে এসেছে মাত্র ২০ হাজারে ।
পর্যবেক্ষকরা আওয়ামী লীগের এই ভোট বিপর্যয়কে ভোটারদের পক্ষ থেকে লাল কার্ড প্রদান বলেই মনে করছেন। তবে বগুড়ার আওয়ামী লীগ ঘরানার সিনিয়র সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান মনে করেন, বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট বিপর্যযের কারণ অনুসন্ধানে সেন্ট্রাল থেকে তদন্ত টিম গঠন করে তদন্ত হওয়া উচিৎ। শুধু তাই নয় তদন্তে রিপোর্টের ভিত্তিতে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন