দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ আতœসাত, কর্মক্ষেত্রে অনিয়মিত উপস্থিতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। আশরাফুল আলম হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দীর্ঘ ৫ বছর অফিস সহকারী-কাম-ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় সম্প্রতি পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে এই উপজেলায় হিসাবরক্ষক পদে কর্মরত আছেন।
অভিযুক্ত হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিদের মৌখিক ও লিখিত নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম গত ৪ নভেম্বর/ ২০২০২ অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক আশরাফুল আলমকে অন্যত্র বদলিসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর সুপারিশ করেন। কিন্তু অদ্যবধি হিসাবরক্ষক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং তিনি কর্মকর্তার নাকের ডগায় বসে বহাল তবিয়তে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, উৎকোচ গ্রহণ, শিক্ষক-কর্মচারীদের হয়রানিসহ অশালীন ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের মাত্রা অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছেন।
একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক আশরাফুল আলমের নিকট আমরা জিম্মি। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জারিকৃতপত্রের চাহিত তথ্য জমাসহ বৃত্তি ও উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার অনলাইন কাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফলাইন/অনলাইন ও কম্পিউটার জনিত যাবতীয় কাজ আমরা নিজে অথবা বিভিন্ন কম্পিউটার সেন্টার থেকে পূরণ করে তার হার্ডকপি ও সফটকপি অফিসে জমা দিতে গেলে কাজের ভুল না থাকলেও নানা অজুহাতে ভুল দেখিয়ে তথ্য জমা না নেয়ার হুমকি দেন। আমাদের করা কাজ তার অপছন্দ এবং পুনরায় কাজ করার নামে অবৈধভাবে নানা রকম হয়রানি করেন। মৌখিক ও জারিকৃতপত্রের চাহিত সকল কাজ তার মাধ্যমে করাতে বাধ্য করেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের ইএফটিসহ সকল কাজ আমরা ৪-৫গুণ বেশি টাকার বিনিময়ে তার মাধ্যমে করতে বাধ্য হচ্ছি। এসকল কর্মযজ্ঞ তিনি অফিসে বসেই চালান। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস যেন এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে।
তারা আরো জানান, প্রধান শিক্ষকদের তিনি ভাই-বোন বলে সম্বোধন করেন। বিশেষ প্রয়োজনে মোবাইল করলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেন না, পরবর্তিতে কল বেক করেন না উপরন্ত সপ্তাহে ২-৩দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। প্রতিষ্ঠানের এমপিও পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে বা হারিয়ে গেলে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তার নিকট থেকে সংগ্রহ করতে হয়। টাকা ছাড়া এ অফিসে কোন কাজই হয়না। সকল প্রকার ফাইল সংক্রান্ত কাজে অর্থ গ্রহণ, বিনামূল্যে সরকারি বই বিতরণে বিদ্যালয় প্রতি অর্থ গ্রহণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করিয়ে দেয়ার নামে উৎকোচ গ্রহণ, শিক্ষক-কর্মচারীদের উচ্চতর স্কেল, বিএড স্কেল, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও সংক্রান্ত অনলাইন আবেদন সেন্ট বাবদ মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন, অনাদায়ে নির্দিষ্ট তারিখের পূর্বেই ফাইল ব্যাক করেন। তার চাহিদা পূরণ না করলে আমাদের নানা রকম হয়রানি, অশালীন, অসৌজন্যমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের স্বীকারসহ তার রোষানলে পড়তে হয়।
অভিযুক্ত আশরাফুল আলম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমি ওইসব অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত নয়। তাকে হয়রানী করার জন্য একটি মহল তার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিন জানান, হিসাবরক্ষক আশরাফুল আলমের অভিযোগের ব্যাপারে আমি অবগত আছি।
হাকিমপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন-উর রশিদ হারুন জানান, হিসাবরক্ষক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি অভিযুক্ত আশরাফুল আলমকে অন্যত্র বদলিসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর সুপারিশও করেছেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিদের মৌখিক ও লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত আশরাফুল আলমকে অন্যত্র বদলিসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর সুপারিশ করেছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন