শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কাদা তুলেই অর্ধ কোটি টাকা লোপাট

মো. মনসুর আলী, আদমদীঘি (বগুড়া) থেকে: | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

আদমদীঘিতে এলজিইডি, পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি এবং ইউনিয়ন পরিষদ এই ত্রি-পরীক্ষায় চুক্তি মোতাবেক শুকনো খাল মাটি কাটা শ্রমিক মাধ্যমে কোদাল ব্যবহার করে খনন করতে হবে এমন নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু খনন করা হচ্ছে এস্কেভেটর বা ভেকু মেশিন ব্যবহার করে। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে খাল খননের কাজ চলছে। ‘আমইল-ইন্দইল খাল পুনঃখনন’ উপ-প্রকল্পে এভাবে খালের কাদা কেটে ৫৫ লাখ টাকার অধিকাংশ টাকা লোপাটের পথ তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মেশিন ব্যবহার করে খননের নামে খালটিকে নালায় পরিণত করা হচ্ছে। এস্কেভেটর মেশিনের বডির মাপ মোতাবেক খালের মেঝের প্রস্থ হচ্ছে ৬-৭ ফুট। মেশিন দিয়ে কাটা কাদা মাটির অধিকাংশ খালের পাড়েই দেয়া হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি খালের স্রোতে গায়ের মাটি খুলে ফের খালে এসে পড়বে এবং দ্রুত খালটি ভরাট হয়ে যাবার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এই খাল পুনঃখননের উদ্দেশ্য হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠির আপদকালিন কর্মসংস্থান, শুষ্ক মৌসুমে ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওা ও প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন মাছ আহরণ করা। যার মাধ্যমে ৫টি গ্রামের অন্তত সাড়ে ৪শ’ অধিক উপকারভোগী খানা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কিন্তু নালার মত করে খনন করা খালের পানিতে ওই পরিমাণের অর্ধেক জমিতেও সেচ দেয়ার পানি এবং মাছও মিলবে না এমনটা দাবি এলাকাবাসীর। মেশিন ব্যবহার করায় কর্ম থেকে বঞ্চিত হয়েছে এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠি। খাল কাটার নামে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না প্রভাবশালীদের হামলা-মামলার ভয়ে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে পাবসস এর নির্বাচিত কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে ৬.১০০কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এলজিইডি এবং জাইকার তহবিল থেকে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করে ২০১৯ সালে। ২০২০ সালে কাজ শুরুর হবার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা হয়নি। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের ‘আমইল-ইন্দইল খাল পুনঃখনন’ প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের দিন থেকে মেশিনে খনন কাজ চলছে অবাধে।
নির্দেশ ও চুক্তিনামায় বলা হয়েছে, চুক্তিবদ্ধ (এলসিএস) গঠন এবং তাদের মাধ্যমে কাজ করার ব্যাপারে প্রথম পক্ষকে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করবে দ্বিতীয় পক্ষ বা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি। এলসিএস দলে যাতে এলাকার দরিদ্র লোকজন যারা মাটির কাজ করে থাকে, বিশেষ করে ছিন্নমুল, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যাক্তা ও দুস্থমহিলাগণ অগ্রাধিকার পান তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এর কোন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মেশিনের মাধ্যমে মাটি নামক কাদা কাটা হলেও বিল তোলা হচ্ছে তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের নামে। এদিকে, উপজেলা প্রকৌশল দফতর প্রতি দলে ২৫ জন করে ১২ শ্রমিকদল গঠন এবং প্রতি দলের সর্দারের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। কিন্তু আদমদীঘি উপজেলা সদর বা পাশের সান্তাহার শহরে একাধিক ব্যাংক থাকা সত্তে¡ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা শহরের অগ্রণী ব্যাংক শাখায় হিসাব খোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, মোট কাজের ৭০ ভাগ মেশিনে এবং ৩০ ভাগ শ্রমিক ব্যবহার করা যাবে। তাহলে মেশিন মালিক বা চালকের নামে বিল তৈরি না করে তালিকাভুক্ত শ্রমিকের নামে করা হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। পাবসস এর নির্বাচিত কমিটি না থাকা সত্তে¡ও খনন কাজ চলা ব্যাপারে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পাবসস কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আহবায়ক কমিটি রয়েছে। যেটির আহবায়ক আমি। যুগ্ম আহবায়ক ছাতিয়ানগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুই জন। তবে খাল খনন বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। আহবায়ক কমিটি কাজটি করতে পারে কি-না প্রশ্নের জবাবে বলেন, যদি পারত তাহলে আমিতো জানতাম এবং দেখভাল করতাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন