মশার অত্যাচার থেকে চট্টগ্রামের মানুষ কোনো কালেই রেহাই পায়নি। এ অঞ্চলের মানুষ সহ্য করতে শিখেছে তাই এই অত্যাচার সহ্য করে আসছে বিগত এক দশক থেকে। প্রতিবারই চসিকের মেয়রগণ মশা নিধনে ভ‚মিকা রাখবেন বলে আশ্বাস দেন কিন্তু চেয়ারে বসে ভুলে যান সেই কথাটি। মশার অত্যাচর সহ্যসীমার মধ্যে থাকলে হয়তো এই কথা বলতাম না। কিন্তু দিন দিন যেভাবে মশার অত্যাচর বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মনে হয়, এবার বোধহয় রক্ষা নেই! অথচ এই অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনো হস্তক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। জনজীবনের সমস্যাগুলোর মধ্যে এটি একটি মারাত্মক সমস্যা। বর্তমানে যেভাবে মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে, তা বিগত কয়েক বছরেও দেখা যায়নি। মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।
চট্টগ্রামের এমনকোনো স্থান নেই যেকোনো মশার অত্যাচর নেই। অবাক করার বিষয়, যেখানে কখনও মশা খুঁজে পাওয়া যেতো না, এখন সেখানেও মশার মারাত্বক অত্যাচার চলছে। চট্টগ্রামের একটি সেবামূলক ফেসবুক গ্রুপ ‘ডিএসসি’তে আফরাইম সাঈদ নামক এক ব্যক্তি পোস্ট দিয়ে বলেছেন, চকবাজার, দিদার মার্কেট, আন্দরকিল্লা এরিয়াতে মশার উপদ্রব অসহনীয় পর্যায় বেড়েছে। ইউসুফ নামক এক ব্যক্তি পোস্ট দিয়ে জানতে চেয়েছেন, মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন কোনো ডিপার্টমেন্ট কি চট্টগ্রামে আছে কি না! ওই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এজন্য অনেকেই সিটিকর্পোরেশনকে দায়ী করছেন।
প্রতি বছর সিটিকর্পোরেশনকে মশা নিধনের জন্য বিরাট অংকের টাকা দেওয়া হয়। সিটিকর্পোরেশনের অধীনে মশা নিধনের জন্য বেতনভুক্ত কর্মচারীও রয়েছে অনেক। এরপরেও যদি নাগরীকগন মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা না পায়, তবে এটা দুঃখজনক তো বটেই সাথে লজ্জারও বিষয়। উন্নত বিশ্বে এমনটা ভাবাই যায়না। বিগত সালগুলোতে মশা বাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ দীর্ঘদিন রোগে ভূগেছে। নতুন করে আবার মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরবাসীর মনে সেই চিকুনগুনিয়ার আতংকও দেখা দিয়েছে। এছাড়াও এই মশার মাধ্যমে মানুষ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এবং জিকা ভাইরাসের মতো মারাত্বক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সকাল বিকেল মশার ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও তা হয়না। এগুলো যথাযথ ভাবে হওয়া দরকার। এছাড়াও সিটি-কর্পোরেশন মশার যে ওষুধ ছিটায় তা আদৌ কাজ করে কিনা দেখার কেউ নেই। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক মনিটরিং। আশা-করছি বর্তমান মেয়র এই দিকটিও নজরে আনবেন।
শুধু তা-ই নয়, মশার ওষুধ ছিটানোর মধ্যেও বড় অনিয়ম ছিলো বিগত সালগুলোতে। এই ওষুধ দিতে হয় বিশেষ করে প্রজনন স্থলে। বছরের উপযুক্ত সময়ে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে এ ওষুধ ছিটাতে হয়। মশার ওষুধ একই দিনে দু’বার প্রয়োগ করার নিয়ম। একবার ভোরে দিতে হয় মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য। আবার বিকেল বা সন্ধ্যায় দিতে হয় প্রাপ্ত বয়স্ক মশা মারার জন্য। সর্বোপরি মশার ওষুধের গুণগত মান অবশ্যই হতে হয় যথাযথ।
বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রতি নগরবাসীর বর্তমান চাওয়া, মশার এই অত্যাচর থেকে চট্টগ্রামের মানুষকে রক্ষা করা। আমি বিশ্বাস করি চট্টগ্রামবাসী তাঁর প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছে তিনি সেটার যথাযত মর্যাদা রাখবেন। এই নগরকে মশামুক্ত নগরে পরিণত করবেন।
আবার আসা যাক নিজেদের দিকে। চসিকের পাশাপাশি দায়িত্ব কিছু আমার-আপনার আমাদেরও নিতে হবে। আমরা জানি, কচুরিপনা, ডোবা, নালা এবং অপরিষ্কার ড্রেন মশার জন্মস্থল। এগুলো পরিষ্কার রাখা অতীব জরুরি। যদি আমরা পারি তবে আমরা নিজেরাই করবো। যদি চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীর প্রয়োজন হয়, তবে স্থানীয় কাউন্সিলরের নিকট এলাকাবাসীরা যাবো। এছাড়াও রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা থেকেও মশার সৃষ্টি হয়। আমাদের উচিৎ নিজের এলাকা নিজেদের পরিষ্কার রাখা। মনে রাখতে হবে, জনসচেতনতাই সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারে। আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই তবে সিটিকর্পোরেশনের উপর হাজার দায় চাপালেও কোনো সমাধান হবে না। মশার প্রজননের ক্ষেত্রগুলো অনেকাংশই ঘরের মধ্যে থাকে। বাসা-বাড়ির আঙ্গিনা, ফুলের টব, ছাদের বাগান, ভবনের চৌবাচ্চা, এসি ফ্রিজের জমানো পানি থেকে মশার বংশ বিস্তার বেশী ঘটে। এগুলো তো আর সিটি কর্পোরেশনের লোক এসে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তাই মাসে একবার হলেও নিজেদের বাসা-বাড়ি এবং ভবনের আশপাশ পরিষ্কার করা জরুরি।
এভাবেই আমরা সকলেই চাইলে মিলেমিশে মশামুক্ত চট্টগ্রাম গড়তে পারি। এজন্য আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে মশা যেনো জন্মাতে না পারে। কারণ মশা জন্মাতে না দিলে আমাদের আর মশা নিধন করার জন্য ওষুধ ছিটাতে হবেনা। সব ধরনের মশা নিধনের ওষুধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যাক্তিদের জন্য। যাদের হাপানী ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের জন্য বড় ধরনের অসুবিধা এসব ওষুধে। তাই মশার ক্ষেত্র যেমন ধ্বংস করতে হবে, তেমনি মশা যেনো আর না জন্মাতে পারে সেই ব্যপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
লেখক: প্রাবন্ধিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন