শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মুক্তা চাষে সম্ভাবনা

কর্মসংস্থানের সুযোগ হাজারো বেকারের

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

গহনা তৈরিতে মুক্তার কদর ব্যাপক। প্রাকৃতিক মুক্তার পাশাপাশি চাষের মুক্তাও সমানভাবে জনপ্রিয়। বরগুনা সদর উপজেলার লতাবাড়িয়া গ্রামে মুক্তা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন নুরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। ইতোমধ্যে তার মুক্তা চাষের সফলতার গল্প ছড়িয়ে পড়েছে গোটা জেলাজুড়ে।
প্রথমে মুক্তাচাষের প্রদর্শনী খামার গড়ে তুললেও এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন। নুরুল ইসলামের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই এখন মুক্তা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে মুক্তা চাষে। তাই মুক্তা চাষ এনে দিতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। সেই সঙ্গে ভাগ্য খুলে যেতে পারে হাজারো বেকার যুবক-যুবতীর।
বরগুনা সদর উপজেলার লতাবাড়িয়া গ্রামে ব্রাইট এগ্রো নামের কৃষি খামারের মালিক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম। তার ছোটভাই টেকসই উপক‚লীয় মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল ইসলামের পরামর্শে এ এগ্রো ফার্মে ২০১৯ সালে মাছের পাশাপাশি ঝিনুকের মুক্তা চাষের প্রকল্প হাতে নেন। নুরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তিনি সুনামগঞ্জে চাকরি করার সময় মুক্তা চাষ দেখেছেন। সেখান থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরামর্শ নিয়ে মুক্তা চাষ শুরু করেছেন। তার খামারটিতে প্রাকৃতিক জলাধার থেকে মান স¤পন্ন ঝিনুক সংগ্রহ করে ঝিনুকের মুখ ফাঁকা করে ঝিনুকের খোসার গুড়া ও ২ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের সংমিশ্রণে বিভিন্ন ধরনের ডাইচের ভেতরে স্থাপন করা হয়। ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ঝিনুকের ভিতরে মুক্তা আহরণের উপযুক্ত হয়। আর এসকল কাজে ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। বাড়ির পাশে পুকুর ও জলাধারে এরকম মুক্ত চাষ সম্ভব ব্যয়ের পরিমাণ ও খুবই কম। উৎপাদিত মুক্তা প্রতিটি গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।
টেকসই উপক‚লীয় মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, জুয়েলারি, ওষুধ শিল্পে, কসমেটিক্স, পেইন্টস ফরমুলেসনে মুক্তা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মুক্তা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। আমাদের দেশে হাওড় ও বিলে প্রাকৃতিকভাবে মুক্তা পাওয়া যায়। এটি চাষের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলে দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ও অর্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, নদীনালা ও পুকুর থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করে তা বাছাই করে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে রাখা হয় পানিতে। এর পর ৭ মাস থেকে ৮ মাসের মধ্যে পাওয়া যায় কাঙ্খিত মুক্তা। ঝিনুকের জন্য বাড়তি কোনো খাবার দিতে হয় না। ক্যালসিয়ামের জন্য প্রতিমাসে একবার করে পুকুরে চুন প্রয়োগ করতে হয়।
নুরুল ইসলাম আরো বলেন, প্রতিটি ঝিনুক থেকে উৎপাদিত হয় ৬টি মুক্তা। বর্তমানে ৩ হাজারের বেশি মুক্তা উৎপাদিত হয়েছে। কেউ মুক্তা চাষ করতে চাইলে তিনি প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে সহায়তা করবেন বলেও জানান। বরগুনা থেকে গ্রিসে মুক্তা রফতানি করার উদ্যোগ নিয়েছেন নুরুল ইসলাম। সরকারি সহায়তা পেলে মুক্তা চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সফল হতে পারবেন এখানকার চাষিরা।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এলাকার অনেকেই এখন মুক্তা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আগ্রহী চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা জেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বরগুনায় পুকুরে মুক্তা চাষ পদ্ধতি অতি স¤প্রতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। মুক্তা চাষের ব্যাপক প্রশংসা করে তিনি বলেন, এ উদ্যোগ দেখে আমি খুবই উচ্চ্বসিত। তিনি মুক্তা চাষে আগ্রহী কৃষকদের জন্য সরকারি ঋণ সহায়তা পাইয়ে দেবারও আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে মুক্তা চাষকে বাণিজ্যিকীকরণে ৪ বছর ধরে গবেষণা চালাচ্ছে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) একদল উদ্যোমী বিজ্ঞানী। এরই মধ্যে তারা তাদের কাজে সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা জানিয়েছেন, মুক্তা গবেষণা একটি দীর্ঘমেয়াদি, ধারাবাহিক ও জটিল কার্যক্রম। তবে মুক্তা চাষের জন্য নতুন ও উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে তা কৃষক-খামারিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে, মুক্তা আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাইরে চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কানাডা, স্পেন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে প্রণোদিত’ উপায়ে মুক্তা উৎপাদন এবং চাষ করা হচ্ছে। এতে চীন ও জাপান ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া মুক্তা চাষের অনুক‚ল হওয়ায় এদেশেও মুক্তা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মুক্তাচাষ উন্নয়ন বিষয়ক একটি গবেষণা প্রকল্প বিএফআরআই থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) ছোট আকারের মুক্তা উৎপাদনের পাশাপাশি ইমেজ মুক্তা (চ্যাপ্টা আকৃতি) প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন।
ইমেজ মুক্তা সম্পর্কে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট মুক্তা বিজ্ঞানী ড. মোহসেনা বেগম তনু বলেন, এটি এক ধরনের নকশা আকৃতির মুক্তা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মূল্যবান মুক্তার অলঙ্কার প্রচলন থাকলেও এ দেশে এটি একদম নতুন। ইমেজ মুক্তার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এটি উৎপাদন করতে মাত্র সাত থেকে আট মাস সময় লাগে, যেখানে গোলাকৃতির মুক্তা তৈরিতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে। চ্যাপ্টা মুক্তার উৎপাদন খরচও কম। পুকুরে মাছের সঙ্গেও চ্যাপ্টা মুক্তা চাষ করা যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন