রাজধানীর ধানমন্ডির এক বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাজরিয়ান মোস্তফা মৌমিতাকে (২০) হত্যা মামলায় আমির হামজা আদনানকে আবার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (৯ মার্চ) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার এজাহারে ভিকটিমের বাবা উল্লেখ করেন, তার মেয়ে তাজরিয়ান মোস্তফা মৌমিতা (১৯) এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির (এপিইউ) কুয়ালালামপুর শাখায় বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (আইটি) বিষয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছিল। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সে গত বছরের ৭ আগস্ট দেশে ফিরে আসে। গত ২ ফেব্রুয়ারি বিকালে মৌমিতা বাসার ছাদে ঘুরতে যায়। বাসায় তাকে দেখতে না পেয়ে বাবা তার ফোনে মেসেজ পাঠান। সে আসছি বলে সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ পাঠায়। এরপর অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও সে ঘরে ফিরে আসেনি। এজাহারে বলা হয়, বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে মৌমিতাকে ডাকার জন্য বাসার গৃহকর্মী মুজাহিদকে (১০) ছাদে পাঠানো হয়। একটু পরে সে ফিরে এসে জানায়, ছাদে যাওয়ার দরজা অন্য পাশ থেকে আটকানো, তাই সে ছাদে যেতে পারেনি। তবে সে মৌমিতাসহ অনেকের হইচই এবং খেলাধুলার শব্দ শুনতে পেয়েছে।
মৌমিতার বাবা অফিসিয়াল মিলাদ মাহফিলে গিয়ে সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটে মেয়ের খোঁজ নেওয়ার জন্য মেসেঞ্জারে কল করেন। তবে মৌমিতা কল রিসিভ করেনি। তার কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে মায়ের মেসেঞ্জার থেকে মৌমিতার ছোট বোন তার বাবাকে গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলে। ৬টা ৩২ মিনিটে কর্তব্যরত ডাক্তাররা মৌমিতাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৌমিতার মা, তাদের অপর দুই মেয়েসহ হাসপাতালে থাকা উপস্থিত লোকজন জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাদের ভবনের ছাদের পেছনে গ্রিন রোডের স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতরের দিকে কাউকে পড়ে যেতে দেখেন স্থানীয়রা। তারা চিৎকার শুরু করলে বড় বোন তাসনিম মোস্তফা (২৪) জানালা দিয়ে তাকিয়ে মৌমিতার পরা কাপড় দেখতে পান। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
মামলার এজাহারে মৌমিতার বাবা অভিযোগ করেন, ওই ভবনে বসবাসকারী ফাইজার, আদনান, তানভীর, ত্রিনয়, ফাইজারের বান্ধবী অপরাজিতাসহ ফাইজারের আরও কয়েকজন বন্ধু তার নেতৃত্বে নিয়মিত ছাদে এসে আড্ডা দিতো, ক্রিকেট খেলতো ও উচ্ছৃঙ্খলভাবে সময় কাটাতো। মৌমিতা একটানা বাসার ভেতরে থাকাতে একঘেয়েমি কাটাতে মাঝে মধ্যে ছাদে যেতো। সেই সুযোগে ফাইজার ও তার বন্ধু আদনানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তবে মৌমিতাকে ছাদে বিরক্ত করতো তারা। এ বিষয়ে ফাইজারের মাকে জানালে তিনি কোনও প্রতিকার না করে মৌমিতার মাকে গালমন্দ করেন। এ কারণে ফাইজার ও তার বন্ধুরা উত্তেজিত হয়ে প্রতিহিংসাবশত এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে মামলায় অভিযোগ করেন মৌমিতার বাবা।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে আদনানকে কলাবাগান থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর পুলিশ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দুই দিনের রিমান্ড শেষে ২ মার্চ তাকে আদালতে এনে পুনরায় পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আজ (৯ মার্চ) ফের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বাদীপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন