বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার এলাকায় একটি মাছ ধরার ট্রলারে রহস্যজনক বিস্ফোরণে ২১ জেলে আহত হয়। এতে অগ্নিদগ্ধ ১২ জেলের ৬ জন মারা গেছেন। বাকি ৬ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। মারা যাওয়া ও চিকিৎসাধীন জেলেদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ও চররমিজ ইউনিয়নে। দগ্ধ জেলেদের মৃত্যুতে স্থানীয় মানুষের মাঝে চাপাকান্না চলছে। অসহায় হয়ে পড়েছেন জেলে পরিবারগুলো।
মৃত জেলেরা হলেন রামগতির চরগাজী ইউনিয়নের দক্ষিণ টুমচর গ্রামের বেলাল হোসেন (২৮), মো. মেহেরাজ (২৬), চর লক্ষ্মী গ্রামের মো. মিলন (৩০), চররমিজ ইউনিয়নের চর গোসাই গ্রামের আবুল কাশেম (৫৫) ও মো. রিপন মাঝি (৩৮)। গত বুধবার বিকেল সোয়া ৩ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. মেহেরাজ উদ্দিন নামে আরেকজন মারা গেছেন।
জানা গেছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার এলাকায় মাছ ধরা অবস্থায় ট্রলারে রহস্যজনক এক বিষ্ফোরণ ঘটে। ১২ জন অগ্নিদগ্ধসহ ট্রলারে থাকা ২১ জেলের সবাই আহত হয়। অগ্নিদগ্ধ আহত ৬ জন ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্বজন ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের শরীরের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই পুড়ে গেছে । ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন চরলক্ষ্মী গ্রামের মো. আলাউদ্দিন, মো. সাহাবউদ্দিন, আবু জাহের, মো. মিরাজ উদ্দিন ও মো. মিরাজ। এছাড়া চরল²ী গ্রামের আবদুর জাহেরর ছেলে মেহেরাজ আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাড়িতেই রয়েছেন। আবদুর জাহেরের আরেক ছেলে মিলন ওই ঘটনায় হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এছাড়া এ ঘটনায় আরো ৯ জেলে আহত হয়ে কক্সবাজারের চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাড়িতে ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। বিস্ফোরণে আহত হয়ে বাড়িতে ফিরে আসা চরলক্ষ্মী গ্রামের মো. শরীফের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনায় মাছ ধরা নিষেধ। এজন্য তারা ২১ জন জেলে কক্সবাজারে যায়। সেখানে গিয়ে সোহেল কোম্পানী নামের এক ব্যক্তির এফবি ওশিন নামের একটি ট্রলার নিয়ে তারা সাগরে মাছ ধরতে যায়। ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে তারা ট্রলার চালিয়েছে। অবশেষে ২৭ ফেব্রুয়ারি তারা সাগরে জাল ফেলে। মধ্যরাতে তাদের ট্রলারে হঠাৎ একটি শব্দ করে।
পরপর আরো দুটি শব্দ হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তাদের কয়েকজন সাগরে পড়ে যায়। আর কয়েকজন কেবিনে এলোপাতাড়ি পড়ে থাকে। ট্রলারে থাকা একজন সাগরে পড়ে যাওয়াদের সাগর থেকে রশি দিয়ে উদ্ধার করে। যারা ট্রলারে ছিলো তারা সবাই দগ্ধ হয়ে পড়েছিল।
আহত শরীফ বলেন, আমরা ভেবেছিলাম ইঞ্জিনে বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে দেখলাম ইঞ্জিনের কিছুই হয়নি। গ্যাস সিলিন্ডারগুলোও ঠিক ছিল। ট্রলারও ঠিক ছিলে। বিস্ফোরণের পুরো ঘটনাটিই রহস্যজনক মনে হয়েছে। ওই বিকট শব্দ কিসের ছিল তা আমরা বুঝতে পারছি না। আমাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর ট্রলার মালিক সোহেল তাদের কোন খোঁজ নেয়নি।
চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন বলেন, আমি ঢাকা হাসপাতালেই আছি। ব্যক্তিগতভাবে নিহত ও আহতদের চিকিৎসাসহ পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। ইউএনওকে বিষয়টি জানিয়েছি। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে আর্থিক সহযোগিতা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে অগ্নিদগ্ধদের ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক।
এ ব্যাপারে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল মোমিন জানান, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসাসহ নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে। তবে বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনকে কক্সবাজার সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দিচ্ছি। কি কারণে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে তখন তদন্তের মাধ্যমে উঠে আসবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন