বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের হার উর্ধ্বমূখী হচ্ছে। গতকাল সারা বাংলাদেশে এই হার ছিল ৫.১৩ শতাংশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজী ল্যাবে যা ছিল ১৭ শতাংশ এবং চিকিৎসক আক্রান্তের হার ৩৩%।
আক্রান্তের হার বৃদ্ধির কারণগুলো একজন ভাইরোলজিস্ট হিসেবে আমি মনে করি:
আক্রান্তের হার ২% এর আশে পাশে থাকায় আমরা সবাই মনে করেছি করোনা দূর্বল হয়ে গেছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানায় যথেষ্ট শিথিল হয়েছি। মাস্ক পরছিনা। সামাজিক দূরত্ব মানা তো দূরের কথা অনেক বেশি গেট টুগেদার, পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শন করছি। বিপনি কেন্দ্রগুলোতেও যথেষ্ট পরিমানে ভীড় বেড়েছে।
আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, করোনাভাইরাস চলৎশক্তিহীন, নির্দিষ্ট জীবিত কোষ ছাড়া বংশবৃদ্ধি করতে পারেনা। তাই একে নির্মূল করার একমাত্র উপায় জীবিত কোষের সংস্পর্শে আসতে না দেয়া। জীবিত কোষ ছাড়া ৭২ ঘন্টার বেশী এরা বাঁচতে পারেনা। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা আর নিয়মিত হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করারা মাধ্যমেই ভাইরাসটিকে রুখে দেয়া সম্ভব।
অনেকে মনে করছেন ভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ দেয়ার সাথে সাথেই সুরক্ষিত হয়ে গেলেন, তাই মাস্ক ছাড়া ঘুরাফেরা করা নিরাপদ। সত্যি কথা হচ্ছে, ভ্যাক্সিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার দুই সপ্তাহ পরে প্রোটেক্টিভ এন্টিবডি আপনার রক্তে থাকবে। আর ভ্যাক্সিনের উদ্দেশ্য হচ্ছে মারাত্মক কোভিড-১৯ থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেয়া। এর অর্থ ভ্যাক্সিন দিলেও আপনি উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে পারেন এবং রোগটি ছড়াতেও পারেন। তাই মাস্ক পরার কোন বিকল্প নাই।
নতুন কোন স্ট্রেইনের আশংকাও উড়িয়ে দেয়া যায়না। অনেকে ইউকে স্ট্রেইনের কথা বলছেন। ইউকে স্ট্রেইন মারাত্মক সংক্রামক, যা অন্য স্ট্রেইনের চেয়ে ৭০% বেশী। এছাড়া বারংবার মিউটেশনের ফলে বাংলাদেশেই নতুন কোন স্ট্রেইনের জন্ম হতে পারে। যেহেতু আমাদের দেশে জেনোম সিকুয়েন্সিং একেবারেই নগন্যমাত্রায় হচ্ছে, তাই এখন ও শনাক্ত হচ্ছেনা।
পরিশেষে বলতে চাই, মাস্ক পরুন, সঠিকভাবে মাস্ক পরুন। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখুন! সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভাইরোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন