বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির ইতিবাচক পদক্ষেপ

প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে এক লাখ ৩৬ হাজার ৫১৪ জন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে নতুন ১০ হাজার উদ্যোক্তা ১৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পঋণ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮৭টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ঋণ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশে ৮৭টি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ছয়টি, বিশেষায়িত দুইটি, বিদেশী নয়টি, বেসরকারি ৩১টি, ইসলামী ব্যাংক আটটি ও নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩১টি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০১৫ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ১৬ হাজার ৮২০ জন নতুন উদ্যোক্তাকে ঋণ দিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৯৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আর জুন ২০১৬ পর্যন্ত ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক নতুন প্রায় সাত হাজার পাঁচ শ’ জন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে রূপালী ব্যাংক নতুন উদ্যোক্তাকে ঋণ দিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। অন্যদিকে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বিতরণে অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আছে। পিছিয়ে আছে বিদেশী ব্যাংকগুলো। তিনি আরো জানিয়েছেন, বিদেশী ব্যাংকগুলো এখন কর্পোরেট ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির খবরটি দেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় অনেকটাই আশার সঞ্চারক। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকগুলোর এগিয়ে থাকার বিষয়টিও ইতিবাচক। মনে করা হচ্ছে, এ ধরনের শিল্পের বিকাশের ফলে একদিকে যেমনি অভ্যন্তরীণভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার পথও উন্মুক্ত হবে। বিদেশে বাংলাদেশী অনেক পণ্যের কদর রয়েছে। অবশ্যই যে কোন শিল্পের বিকাশে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারের উৎসাহমূলক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব যেসব খাতে ঋণ দেয়া হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা মনিটর করা। সেই সাথে ব্যাংক তার টাকা ফেরত পাচ্ছে কিনা তা দেখা, কারণ টাকা ফেরত পাবার সাথেই ঋণের সাফল্য নির্ভর করে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিদেশী ব্যাংকগুলো নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে পিছিয়ে রয়েছে। উপরন্তু তারা কর্পোরেট বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকতে আগ্রহী। এই প্রবণতা নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির ক্ষেত্রে অন্তরায়। কেন এবং কি কারণে বিদেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে এ প্রবণতা বিদ্যমান অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা দরকার। বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি অপরিহার্য। এ বিবেচনায় অবশ্যই ব্যাংকগুলোকে নতুন নতুন ধরনের উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে এগিয়ে আসতে হবে। এসএমই দেশের বিবেচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় খাত হলেও এখাত থেকে দেশের চাহিদার স্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী যোগান অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। তারপরও উদ্যোক্তা সৃষ্টিকে আমরা অভিনন্দন জানাই। নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় এবং গতিশীল হওয়া কাম্য। এর সাথে দেশের কর্মসংস্থানের সম্পর্ক রয়েছে। দেশের আমদানি ব্যয় কমিয়ে অধিক রফতানীমুখী করতে উদ্যোক্তা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, নয়টি বিদেশী ব্যাংকের মধ্যে তিনটি কোন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে পারেনি। বেসরকারি ৩১টি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণে উদ্যোক্তা বেড়েছে ২৩ হাজার ১৪৭ জন। নতুন উদ্যোক্তা ১ হাজার ৭৫ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। দেশের ৮টি ইসলামী ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে নতুন উদ্যোক্তা বেড়েছে ২ হাজার ৪৯০ জন। সব মিলে নতুন উদ্যোক্তা বৃদ্ধির চিত্র আশাপ্রদ না হলেও একেবারে হতাশাজনক নয়। চিত্রটা এগিয়ে যাবার। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে প্রচেষ্টা থাকতে হবে। এজন্য অবশ্যই ব্যাংক ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে আন্তরিক এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে। আমরা মনে করি, দেশের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিক হবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন