শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

রূপগঞ্জে মাদকের ছড়াছড়ি

অধরা মাদক সম্রাট নিকুদাস

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। বাড়ছে মাদক ব্যবসায়ীও। তবে মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় নতুন কেউ যোগ হলেও অসাধু পুলিশ ধরে ছেড়ে দেয়ায় স্থানীয়রা একে টম অ্যান্ড জেরি খেলা বলে উল্লেখ করেন। উঠতি বয়সী শিশুরাও জড়িয়ে পড়ছে সর্বনাশা ইয়াবা সেবনের দিকে। স্বচ্ছল পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করে মাদক ব্যবসায়ীরা। এ পর্যন্ত রূপগঞ্জেই হাজারের অধিক কিশোর মাদকসেবীর তথ্য পাওয়া গেছে। এদের বেশিরভাগই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীরা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে রূপগঞ্জে তাদের সাম্রাজ্য। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা থেকে প্রতিদিন পুলিশের হাতে দু’একজন আটক হলেও নানাভাবে তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। কখনো মাদকসহ আটক করলেও জামিনে বেড়িয়ে এসে ফের চালাচ্ছে এসব অপকর্ম। তাছাড়াও পুলিশ মাদকসহ আটক করে অনেক সময় থানায় না নিয়ে এসে কিংবা আটক করেও তদবির ও অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছে। এতে রোধ করা যাচ্ছে না মাদকসেবী ও মাদকের প্রসার। বাড়ছে ছিঁচকে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা। এসব মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের লালন করছে একটি শক্তিশালী পক্ষ। যাদের বেশিরভাগই পুলিশের সোর্স পরিচয়ে সমাজে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও রূপগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের পিতলগঞ্জ ঋষিপাড়া এলাকার গৌরাঙ্গ দাসের ছেলে নিকু দাসের মাদক ব্যবসা চলছে তো চলছেই। পুলিশের তৎপরতা থাকলেও রহস্যজনক কারণে থামছে না তাদের মাদক ব্যবসা। পূর্বাচল উপশহর এলাকার মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত নিকু দাস তার সাম্রাজ্যে যোগ করেছে ভাই বিধু দাস, নিখিল দাস, অখিলকেও। তবে অখিল কাঞ্চন বাজারে কুলির কাজ করায় শুধুমাত্র সেবন করে বলে দাবি করেন তিনি। বাকি ৩ জনই দেদারছে মাদক রাজ্য পরিচালনা করে আসছে গত ৩৫ বছর ধরে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বাড়ি হওয়ায় নদী পথে তার মাদকের চালান অনায়াসে কাঞ্চন, ভোলাবো, দাউদপুর, রূপগঞ্জ সদরের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায়। তার মদ আসে পূর্বাচলের চোলাই মদের কারখানা থেকে। এসব মদের চালান চলে যায়, পূর্বাচল ও এশিয়ান বাইপাশের পাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী রেস্টুরেন্ট ও নদী পাড়ের স্থায়ী পার্ক ও রেস্টুরেন্টে।

অভিযোগ রয়েছে, তাকে শেল্টার দেয় স্থানীয় প্রভাবশালী ও পুলিশ সোর্স পরিচয় দানকারীরা। তাই দীর্ঘ বছর ধরে এ পেশায় তার অনেকটা অবাধ যাত্রা। পুলিশের অভিযানের সময় প্রভাব খাটিয়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রূপগঞ্জ থানা পুলিশের এক সূত্র জানায়, দু’একবার ধর পাকড়ের শিকার হয়ে, একাধিকবার মাদক মামলার আসামি হয়ে ফের জামিনে বেরিয়ে একই পেশায় যুক্ত হয় সে। প্রতিবারই কৌশল পাল্টিয়ে তার সাম্রাজ্য রক্ষা করে।

সূত্র আরো জানায়, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে গোপন আঁতাত করে কতিপয় পুলিশ সদস্য ও সোর্সরা নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়ে সুযোগ করে দিচ্ছে ব্যবসার। সম্প্রতি রূপগঞ্জ উপজেলা ভ‚মি অফিস ও রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের ভবন ভেঙে ও দেয়াল টপকিয়ে চুরির ঘটনায় এসব মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের আটক করলে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। সম্প্রতি রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে ৭শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হলেও মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযানকারী পুলিশের গাড়ির সামনে দিয়েই মাদক ব্যবসায়ী ফারুক পালিয়ে গেছে। সম্প্রতি প্রতিটি চুরি, ডাকাতির সাথে মাদকসেবীদের যোগসাজস পাওয়া গেছে। এতে প্রশাসন অনেকটাই নির্বিকার। উপজেলার বাড়িয়া ছনি এলাকার ঘরে ঘরে মাদক ব্যবসায়ী প্রশাসন জেনেও এক প্রভাবশালীর ভয়ে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করতে পারছে না। মুড়াপাড়ার বেবিস্ট্যান্ড, কাঞ্চনের সোনালী হল মোর, মায়ারবাড়ি, দাউদপুরের বেলদী, খৈসাইর, কালনী, কায়েতপাড়ার চনপাড়া, দক্ষিণপাড়া, সদর ইউনিয়নের ভক্তবাড়ি, গুতিয়াব, সিটি মার্কেট, গোলাকান্দাইলের ৫নং ক্যানেল এলাকা, তারাব পৌরসভার বিশ্বরোড এলাকা, রূপসী কাজী বাড়ি, কাঞ্চনসহ শতাধিক প্রকাশ্য মাদকের হাটখ্যাত এলাকায় অভিযান করলেও রোধ করা যাচ্ছে না মাদক।

রূপগঞ্জ থানার ওসি মুহসিনুল কাদির বলেন, মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী যেমন বেড়েছে তেমনি প্রশাসনের তৎপরতাও বেড়েছে। মাদক বিষয়ে আমার অবস্থান জিরো টলারেন্স। নিকুর মতো আরো যারা আছে সবাইকে ধরতে পুলিশ তৎপর। তবে জামিনের বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে খুব শিগগিরই এসব মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন