শওকত আলম পলাশ
পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কদর বেড়েছে অনলাইন শপের। ঘরে বসেই কাংক্ষিত পণ্য কেনার সুযোগ থাকায় দিনে দিনে কেনাকাটার মাধ্যম হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন শপগুলো। অনলাইন পোর্টালে প্রবেশ করে ঘরে বসেই নিজেদের পছন্দ মত পাঞ্জাবি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ,শার্ট, টি-শার্ট হোটেল ,সিনেমা বা কনসার্টের টিকেট, নারীদের পোশাক এবং আনুষঙ্গিক জিনিস, বই ও চিত্রকলাসহ বাহারি পোশাকের ক্রয়াদেশ দেন। মূল্য পরিশোধ করা যায় ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, মানিগ্রাম,ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে। এ কারণে তরুণ-তরুণীদের আগ্রহ বড়েছে। অনলাইন কেনাকাটায় পুরুষের থেকে এগিয়ে আছেন নারীরা। অন্যদিকে এতদিন যাদের সাথে শুধু অনলাইনে পরিচয় ছিল তাদের সাথে সরাসরি সাক্ষাতে আস্থাও বাড়ছে বলে জানান অনলাইন শপের মালিকরা। তারা জানান, অনলাইন বাজারে সুবিধাজনক এবং নিরাপদে দাম পরিশোধ ব্যবস্থা, পণ্যের মূল্য ইত্যাদি কারণে অনলাইন কেনাকাটা বাজারের পরিধি বাড়ছে। তাছাড়া এ ব্যবসা সুবিধাজনক, লোকজন কম লাগে, বিক্রির জন্য বড় দোকানের প্রয়োজন হয় না।
যানজট আর কর্মব্যস্ততায় মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করা যেন এখন অনেকের জন্যই দুঃসাধ্য ব্যাপার। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত তিন-চার বছরে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ই-কমার্স। এবার ঈদুল আযহা সামনে রেখেও অনলাইন শপে বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। কুরবানি সামনে রেখে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে জমে উঠেছে কেনাকাটা। এখানে প্রতিদিনই বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা। ঈদ উপলক্ষে অনলাইন ব্যবসায়িরা জড়ো হয়েছিলেন একই ছাদের নিচে। রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে বিউটিফুল ইউ ইভেন্টস আয়োজিত এই মেলা চলে তিন সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। একটি সময় ছিল যখন মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে কিনতে হতো পছন্দের পোশাকটি। কিন্তু বর্তমান এই আধুনিকায়নের যুগে আর প্রযুক্তির কল্যানে সেটি পৌছে যেতে পারে নিজ ঘরের দরজায়। আর যাদের ফলে এটি সম্ভব হচ্ছে তারাই হলেন অনলাইন উদ্দোক্তা। রাজধনীর রাওয়া ক্লাবে নিজ নিজ অনলাইন শপের পন্যগুলোর পসরা নিয়ে বসেছিলেন এসব অনলাইন উদ্দোক্তারা।
অনলাইন হোম অ্যাপ্লায়েন্স ফেস্টিভাল
আসন্ন ঈদুল-আযহা উপলক্ষে অনলাইনে দেশের বৃহত্তম হোম অ্যাপ্লায়েন্স ফেস্টিভাল আয়োজন করেছে জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট পিকাবু ডট কম। ৪৭টি ব্র্যান্ডের টিভি, ফ্রিজ ও এসিসহ প্রায় ১,১০০ পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৭৯% ছাড়ের অফার রয়েছে এতে। ক্রেতারা পিকাবু ডট কম থেকে সবধরনের ব্র্যান্ডের পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। ক্রেতাদের শুধু পিকাবু ডট কমের সাইটে গিয়ে অর্ডার করলে ঢাকার ভেতরে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা এবং ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবে ক্রয়কৃত পণ্য। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে অনলাইনে পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডধারীদের জন্য পিকাবু ডট কমে আছে ০% ইন্টারেস্টে ইএমআই বা সহজ কিস্তি সুবিধা। এছাড়া ডেবিট কার্ড ও ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধাতো থাকছেই। এছাড়া ক্রয়কৃত পণ্যে কোনো ক্রটি থাকলে তা পণ্য ক্রয়ের তিন দিনের মধ্যে অভিযোগ করলে তা ফেরৎ নিয়ে আরেকটি নতুন পণ্য দিয়ে পরিবর্তন করা হবে। ঘরে কিংবা অফিসে বসে গ্রাহকরা পিকাবু ডট কমের পণ্য যাচাই করতে পারবেন, ফলে বেঁচে যাবে গ্রাহকের গুরুত্বপূর্ণ সময়। যঃঃঢ়://মড়ড়.মষ/এঋড়চনা সাইটে গিয়ে কিংবা পিকাবু ডট কমের হটলাইন নম্বরে কল করে অর্ডার করলে কম সময়ের মধ্যেই ঘরে পৌঁছে যাবে অর্ডারকৃত পণ্য।
অনলাইনে গরু বেচাকেনা
হাটে গিয়ে পশু কেনাকাটার দিন শেষ। ভিড় ঠেলে ও কাদা মাড়িয়ে কুরবানির পশু কেনার ঝক্কি-ঝামেলা এড়িয়ে এখন ঘরে বসেই পশু কিনছেন অনেকে। ঘরে বসে পশু কেনার এমন সুযোগ দিচ্ছে বেশ কয়েকটি অনলাইন কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান। কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠছে এসব মার্কেট। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে গরু কেনাবেচা। জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিক্রয় ডটকম, বেঙ্গল মিটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কুরবানির গরু-ছাগলের হাট বসিয়েছে। কুরবানির পশু বিক্রির জন্য খোলা হয়েছে ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুক একাউন্ট। যারা হাটের ভিড় পছন্দ করেন না তাদের জন্য অনলাইনে গরু কেনার সুযোগ বাড়ছে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গতবারের মতো এবারো বেঙ্গল মিট তাদের গ্রাহকদের কুরবানির পশু জবাই, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তা গ্রাহকদের বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে। এবার গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বেঙ্গল মিট জীবন্ত গরুও গ্রাহকদের বাড়িতে পৌঁছে দেবে।
কুরবানির পশু জবাইয়ের পরিপূর্ণ পরিষেবা নিতে গরুর আকার ভেদে ১৫ হাজার টাকা থেকে ১৯ হাজার টাকা পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে। এ ছাড়া যারা জীবন্ত গরু ঢাকার মধ্যে সরবরাহ নিতে ইচ্ছুক তাদের জন্য পরিবহন ও শ্রমিক মজুরি বাবদ গরুপ্রতি ৪ হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রয় ডটকমের ওয়েবসাইটে ঝুলছে কুরবানির পোস্টার। যেখানে লেখা রয়েছে ‘হাজারো কোরবানির পশু থেকে বেছে নিন আপনার পছন্দেরটি।’ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রয় ডটকমে রয়েছে কুরবানির আকর্ষণীয় অফার। এই অফারে রয়েছে দেশের বিখ্যাত ‘মীর কাদিম’ এবং ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ গরু। এই গরুগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে এগুলো সেরা জৈব খাদ্য খেয়ে পালিত, এর মাংস উৎকৃষ্ট ও স্বাস্থ্যকর এবং এগুলো ক্ষতিকর ইনজেকশনমুক্ত। এই অফার পেতে আগ্রহী গ্রাহকদের বিক্রয় কুরবানি শপ (যঃঃঢ়:/িি/.িনরশৎড়ু.পড়স/য়ঁৎনধহর) ভিজিট করতে হবে।
অনলাইন কসাই সার্ভিস
কোরবানীর সময় অনলাইনে পশু কেনা-বেচা হলেও এবারই প্রথম অনলাইন কসাই সার্ভিস দেওয়া শুরু হয়েছে। ‘সেবা ডট কম এক্সউয়াইজেড’ নামের একটি অনলাইন শপের মাধ্যমে সেবাটি দিচ্ছে একটি অনলাইন হাউজ হোল্ড সার্ভিস। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আদনান ইমতিয়াজ হালিম বলেন, ‘গত একমাস যাবৎ ঢাকার সবগুলো বাজার থেকে কসাইদের সংগ্রহ করে তাদের তথ্য যাচাইয়ের পর সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছি। যারা কোরবানীতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করবে। প্রতিদিনে কাসাইদের টিম তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সকাল ৯টা, দুপুর ২টা, বিকাল ৪টায়। আলাদা আলাদা সময়ে টিমগুলোকে এলাকাভিত্তিক বুকিং দেয়া হচ্ছে। পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে এই কার্যক্রম শুরু করেছি। সময় এবং এলাকা অনুযায়ী কসাইগুলোকে গ্রাহকদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের বেশ কিছু সুপারভাইজার থাকবে যারা ঈদের দিন এসব কার্যক্রম পরিচালনা করবে।’ তিনি আরও জানান, ‘আমরা প্রথমত ১শ’ জনের প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছি। তবে আশা করছি সবমিলে ১৪০ জন কসাই দিতে পারবো। তাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করেছি বাজার যাচাইয়ের ওপর ভিত্তি করে। যেমন যে দলে প্রায় সবাই পেশাগত কসাই থাকবে সেটাকে বলছি এক্সপার্ট টিম। যে টিমে নূন্যতম একজন পেশাগত কসাই থাকবে সেই দলকে বলা হচ্ছে সেমি প্রফেশনাল টিম। যারা শুধুমাত্র ঈদের সময় কোরবানীর কাজ করে তাদেরকে বলা হচ্ছে সিজনাল টিম। তাদের পেশাগত দক্ষতার ওপরে পারিশ্রমিক ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা মূল্যে ভাগ করেছি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন