চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। এমাসেই ইআরডির সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর শেষে ঠিকাদার মূল কাজ শুরু করবে বলে সংসদীয় কমিটিতে দাখিলকৃত এক প্রতিবেদনে প্রত্যাশা করা হয়েছে। জিটুজি পদ্ধতিতে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ নিয়ে অনুমোদন মেলার পর সময় পেরিয়েছে সাড়ে তিন বছরের বেশি। করোনার কারণে ঋণচুক্তি হয় হয় করেও হয়নি। তবে এবার ঋণচুক্তি নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রমের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উত্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের ডিপিপি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর। একই বছরের ২৯ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয়। গাজীপুর জেলার অংশে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ের বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঢাকা জেলার অংশের ২৪ কিলোমিটারের মধ্যে প্রথম ১২ কিলোমিটার অংশে চূড়ান্ত প্রস্তাব অনুমোদন ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন এবং দ্বিতীয় ১২ কিলোমিটার অংশে যৌথ জরিপের কাজ চলমান। ঢাকা জেলার অংশের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য ১৩টি সংস্থাকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দিয়েছে। অন্যান্য সংস্থাকেও বিভিন্ন তথ্য পাঠানো হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে চীন সরকারের সঙ্গে ঋণ চুক্তি অনুমোদন করেছে। শিগগিরই ইআরডির সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চের শেষে ঠিকাদার মূল কাজ শুরু করবে।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকাই ব্যয় হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণের কাজে। যদিও এ ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো শেষ করা যায়নি।
এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে গৃহীত প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে। শেষ হচ্ছে ২০২২ সালের জুনে। মোট ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি ৫ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা সরকার জোগান দেবে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে নিয়োগ করে সেতু বিভাগ। সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকায় তাদের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করার কথা।
কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া কমিটির সদস্য এনামুল হক, মো. হাসিবুর রহমান স্বপন, মো. আবু জাহির, রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, মো. ছলিম উদ্দীন তরফদার ও রাবেয়া আলীম বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু ও যথাসময়ে শেষ করার জন্য সুপারিশ করা হয়।
সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের ভৌত অংশ নির্মাণেই ব্যয় হবে ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পটি ঢাকা শহর এবং আশুলিয়া-সাভার এলাকার যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ আন্তঃদেশীয় সড়ক যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তা দেশের বিদ্যমান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ঢাকা-জামালপুর মহাসড়ক, ঢাকা-মানিকগঞ্জ-তেঁতুলিয়া মহাসড়ক, ঢাকা-মাওয়া-বরিশাল মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে মহাসড়কের আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি করবে। প্রকল্পটি নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায় সংযুক্ত হবে। এর মাধ্যমে বনানী, মহাখালী হয়ে চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালি পর্যন্ত অনায়াসে যাতায়াত করা যাবে অর্থাৎ ইপিজেড থেকে বাইপাইল, আশুলিয়া, আব্দুল্লাহপুর, এয়ারপোর্ট, বনানী, তেজগাঁও মগবাজার, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে যানজটমুক্তভাবে চলাচল সম্ভব হবে। ফলে ঢাকা শহরের যানজট বহুলাংশে হ্রাস পাবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সেতু বিভাগ জানিয়েছে, সাভার, আশুলিয়া, নবীনগর ও ইপিজেড সংলগ্ন শিল্প এলাকার যানজট নিরসন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন করবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি ব্যবহার করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২০টি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ-ছয়টি জেলার মানুষ সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে রফতানি পণ্য পরিবহনেও রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ডিপিপিতে বলা হয়েছে, বাস্তবায়িত হলে ফাইন্যান্সিয়াল আইআরআর এবং ইকোনমিক আইআরআরের পরিমাণ হবে যথাক্রমে ১৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক বেনিফিট কস্ট রেশিওর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ১ দশমিক শূন্য ৬ এবং ১ দশমিক ১৩। জিডিপিতে শূন্য দশমিক ২১৭ শতাংশ প্রভাব ফেলবে এ উড়ালসড়ক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন