শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঘরে বসেই অবসরে পাটের সামগ্রী তৈরি

ঐতিহ্যে ফিরছে বাংলার সোনালি আঁশ পাট

রুবাইয়া সুলতানা বাণী, ঠাকুরগাঁও থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাসের শুরুতেই বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই অবসর সময়টা কেউ হেলায় নষ্ট করেছেন। কারো সময় কেটেছে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে। মফস্বল শহরে একটি পরিবারে যখন মেয়ের বিয়ে হয়, তখন তার সব দায়িত্বটুকুই হয়ে যায় স্বামীর সংসারের প্রতি। বাবা-মা খেয়ে থাক আর না থাক তা সেটি দেখার দায়িত্ব আর মেয়ের থাকে না।

কিন্তু চিরায়ত এই প্রথা যে মেয়েটি ভেঙে দিয়েছেন তার নাম মরিয়ম বেগম। বাবা ও মায়ের জন্য কিছু করার তাগিদ যেন তাকে খুব বেশী তাড়া করে ফিরছিল। বিয়ের আগে কখনোই বৃদ্ধ বাবা-মাকে বুঝতে দেননি ছেলের অভাব। হয়তো টিউশনি করে, কখনো ছোট খাটো চাকরি করে নিজের পড়াশোনা খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবা মায়ের হাতে যেটুকু পারা যায় তুলে দিয়েছেন।
অনেক কষ্টের পর মাস্টার্স শেষ করে এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন মরিয়ম। স্বামী, সন্তান, শ্বশুর, শাশুড়ি নিয়ে দিনগুলো ভালোই চলছিল। করোনা মরিয়মের জীবনের ভাবনায় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। বাবার ছোট একটা ব্যবসা ছিল তা বন্ধ হয়ে যায়। মরিয়মের স্কুলের চাকরিও চলে যায়।
হাজারো দুশ্চিন্তা ঘিরে ফেলে মরিয়মের জীবনকে। স্বামীর সংসারে অভাব নেই। কিন্তু এটা তো তার স্বামীর সংসার। শ্বশুর বাড়িতে থেকে নিজের বাবা-মাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করাটা বিবেকে বাধা দেয়। বাবা-মার জন্য কিছু একটা করতে হবে। এমন ভাবনা থেকেই মরিয়ম সামনের দিকে পা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

সংসারে সময় দিয়ে অবসর বলতে যেটুকু সময় হাতে পান তার পুরোটা কাজে লাগাতে শুরু করেন। নিজের সৃজনশীল প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনের সহযোগিতা নিয়ে ঘরে বসেই তৈরি করতে শুরু করেন অর্থকরী ফসল পাট দিয়ে বিভিন্ন শোপিস। দুই একটা তৈরি করে দেন ঠাকুরগাঁওয়ের অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবারে।
আয়মান হস্তশিল্প নামে তৈরি করে নিজস্ব একটি পেজ খুলে মরিয়ম যে সাড়া পান তাতে বেড়ে যায় কাজের আগ্রহ। তিনি একমাসের একটি প্রশিক্ষণও নেন ঠাকুরগাঁওয়ে ইইএসডিও নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে। কাজের গুণগত মান আরো বেড়ে যায়।

মরিয়ম বলেন তিন হাজার টাকা পুঁজি করে কাজে নামেন। বর্তমানে ১৩ হাজার টাকা পুঁজি। মাসে সাত হাজার টাকার অর্ডার পেলে লাভ থাকে দুই হাজার টাকা। এই টাকা কম হলেও থেমে নেই কাজ। সংসারের সব কাজ শেষ করার পর নিজের আড়াই বছরের সন্তান যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শুরু হয় মরিয়মের জীবনযুদ্ধ।
কাজ করে ভাবেন যেতে হবে অনেকটা পথ। সামনের গন্তব্য কষ্টকর জেনেও তিনি হাল ছাড়তে নারাজ। সবসময় মাথায় একটি চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আর সেটি হচ্ছে যদি বড় ধরনের কোন আর্থিক সহযোগিতা বা সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে যান। আর তেমনটি হলে সামনে চলার পথ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

এক মরিয়মের স্বপ্ন দেশের অর্থকরী ফসলকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। পাট দিয়েই চার দেয়ালে আটকে থাকা হাজারো নারীর হবে কর্মসংস্থান। নিজের তৈরি বিভিন্ন শোপিস, টেবিল ম্যাট, টিস্যু, কলম দানী, ফুল দানী, পুতুল, ব্যাগসহ বহু জিনিস পাঁচটি বিভাগে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করেছেন। নিজের কাজের সহযোগী হিসেবে সব সময় পাশে পেয়েছেন স্বামী রাকিব সাব্বির হিমেলকে। ইচ্ছে আছে পাটের তৈরি জিনিসগুলো দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে পাঠানোর। আর সে স্বপ্ন পূরণ হলে বিদেশে লাল-সবুজের পতাকার বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
মোঃ তরিকুল ইসলাম ঢাকা বাংলাদেশ ২১ মার্চ, ২০২১, ১২:৫৩ পিএম says : 0
মরিয়ম তুমি এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার পিছে ইনশাআল্লাহ। কষ্ট করলে কেষ্ট মিলে।
Total Reply(0)
Md ovi Chowdhury ২১ মার্চ, ২০২১, ৩:৪৯ পিএম says : 0
Assalamualaikum really, Maryam Apu is working so hard to move her life forward as beautifully as possible so that her future days will be very self-reliant and she can bring something good for the country with a healthy lifeEveryone will pray for him so that he can go to the market and showcase his talent. I am also praying that Allah will fulfill the hopes of your mind
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন