বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

সাভারে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

ঢাকার সাভারে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে উঠতি বয়সের কিশোররা। ইভটিজিং থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, মাদক সেবন, অপহরণ, এমনকি হত্যাকান্ডের সাথেও রয়েছে তাদের সম্পৃক্ততা। এলাকাভিত্তিক ছোট-বড় গ্যাং তৈরি করে এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে কিশোর সন্ত্রাসী অর্থাৎ ‘কিশোর গ্যাং’। এদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বাসিন্দারা। উঠতি বয়সি এ ‘মাস্তানদের’ পাশাপাশি সাভারে সন্ত্রাসী ও টপটেররদের দৌরাত্ম্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব সন্ত্রাসীর হাতে রয়েছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র। সাভার উপজেলায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব কিশোর গ্যাং সদস্যদের তথ্য সংগ্রহ করছেন মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায়ই কিশোর গ্যাংয়ের কবলে পড়ে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে অনেককেই। অনেকেই তাদের ভয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ কিংবা কথা বলতেও সাহস পান না। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে সাভারের পৌর এলাকার মধ্যপাড়া মহল্লায় ছুরিকাঘাত করে সুমন রাজবংশী ও শিমুল রাজবংশী নামে দুই যুবককে গুরুতর আহত করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগীর পরিবার।
এদের মধ্যে আল-আমিন, পারভেজ ও রহিম নামে তিন কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর কিছুদিন আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে পৌর এলাকার থানা রোডে এনাম মেডিক্যাল হাসপাতালের সামনে এক তরুণীকে যৌন হয়রানি করে এক দল কিশোর। এর প্রতিবাদ করলে সৌরভ ও আলিফ নামে দুই যুবককে মারধর করে আহত করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তার কয়েকদিন আগে প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রোহান নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তবে এলাকার সচেতনদের দাবি নিজেদের স্বার্থের জন্য অপরাধ কর্মকান্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন অনেকেই। ফলে এক সময় কিশোররা পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন শুধু পাড়া-পড়শিরাই নয়, নিজের পরিবারের জন্যও তারা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তাই অল্পতেই তাদের নিয়ন্ত্রণ না করলে অচিরেই একেক এলাকার জন্য কিশোর গ্যাং আতঙ্ক হয়ে উঠতে পারে।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাতে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে স্কুলছাত্রী নীলা রায়কে তার ভাইয়ের কাছ থেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে যায় কিশোর গ্যাং সদস্য প্রেমিক মিজানুর। পরে নীলাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় সে। গুরুতর জখম অবস্থায় ওই ছাত্রীকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জড়িত কিশোর গ্যাং সদস্য মিজানুরসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে কিশোর গ্যাং লিডার মো. সাকিব হোসেন সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শিরুর ছেলে।
গত বছরের ৩০ আগস্ট বিকেলে দুই কিশোরী চাচা সম্পর্কের দুই তরুণের সঙ্গে আশুলিয়ার গুলিয়ারচক এলাকায় বেড়াতে যায়। সেখানে ১০ থেকে ১২ জনের একটি কিশোর গ্যাং তাদের আটকে রেখে মারধর করে। গ্যাংয়ের অপর সদস্যরা দুই কিশোরীকে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। এর দুই ঘণ্টা পর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের ছেড়ে দেয়। পরে তারা সবাই বাসায় চলে যান। দুই কিশোরীকে ধর্ষণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হলে লোকলজ্জার ভয়ে ওই কিশোরী গ্রামের বাড়ি চলে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় এসব অপর্কম হলেও অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে এসব সন্ত্রাসীরা। রাজনৈতিক ছত্রছায়া, এলাকার কথিত বড় ভাইদের অনুচর হিসেবে সক্রিয় থাকছে এসব উঠতি বয়সি মাস্তানরা।
আশুলিয়া থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভাদাইল ও পবনারটেক এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ তৎপর ছিল। কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় ওই গ্যাংয়ের দলনেতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই মামলায় অন্তত ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাদের সবাই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন