দূর থেকে দেখলে মনে হবে চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন। একটু কাছে যেতেই ভুল ভেঙে যাবে আর বুঝা যাবে ধূলায় ধূসরময় চারদিক। এ চিত্র পূর্বাচল উপশহরসহ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার প্রধান কয়েকটি সড়ক ও এর সংযোগ সড়কগুলোর। উপজেলার পূর্বাচল উপশহর, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক, রূপসী কাঞ্চন সড়ক, ডেমরা কালিগঞ্জ সড়ক ও এসকল সড়কের সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত মোট প্রায় ৬০ কিলোমিটার ধূলায় ধূসরময় হয়ে রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষকে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর। এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, এলার্জি, সর্দি কাশিসহ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ-বালাই।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী-কাঞ্চন সড়কের ৯ কিলোমিটার, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের ১৪ কিলোমিটার, কাঞ্চন-ভোলাব সড়কের ৫ কিলোমিটার, ছনপাড়া-ভোলাব ৫ কিলোমিটার ও এ সড়কগুলোর সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত মাছিমপুর, রূপসী, ভুলতা, রূপসী শীতলক্ষ্যা পাড়ের রাস্তার সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশার কারণে ধূলাবালিতে একাকার হয়ে থাকে। এদিকে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) ৩শ’ ফুট সড়ক ও পূর্বাচল উপশহরের সড়কগুলাতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উন্নয়ন কাজ চলায় রাস্তাঘাট খোড়াখুড়ি ও সড়কের পাশে অবৈধ বালুর ব্যবসা করার কারণে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ধুলা বালিতে বিস্তৃত থাকে।
নিয়ম ভঙ্গ করে গাড়ি চালানো, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, ফুট ওভার ব্রিজ না থাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সকাল সন্ধ্যা দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কারণে যানবাহন ফুটপাথ দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করে। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ফুটপাথের কয়েক কিলোমিটার এলাকা ধুলা ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। ধুলাবালিতে একাকার হয়ে থাকে রাস্তার দু’পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি। পথচারীদেরকে কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বন্ধ করে চলাচল করতে হয়। ধুলা-বালির কারণে ফসল, গাছপালাসহ পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। এছাড়াও ধুলাবালি নাক, মুখ দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে মারাত্বক রোগ বালাইয়ের সৃষ্টি করতে পারে। রাস্তাঘাট গুলো ধুলাবালিতে একাকার হয়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেউই নিরসনে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
স্থানীয়রা জানান, তবে ধুলাবালি কমাতে মাঝে মাঝে রাস্তায় পানি দিলেও তপ্ত রোদে তা কয়েক মিনিটের মধ্যে শুকিয়ে গিয়ে পুনরায় ধুলাবালির সৃষ্টি হয়। অবৈধ বালুর ব্যবসা বন্ধ ও রাস্তাঘাট খুব দ্রুত সংস্কার করা হলে ধুলাবালি অনেকটা কমে যাবে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়সাল আহমেদ বলেন, ধুলাবালি চোখ, মুখ, নাক দিয়ে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের জন্য মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে। ধুলাবালি ফুসফুসে প্রবেশ করলে একজন সুস্থ মানুষও অ্যাজমা, এলার্জি, সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী কলিঙ্গা এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ভাই আর কি কমু ধুলার লাইগা ঘর থেইক্কা বাইর হইতে মন চায় না। মাইনষের ক্ষেতে কাম কইরা সংসার চালাই। ক্ষেতে ধান লাগাইলেও ধুলা গিয়া ক্ষেত্রে ফসলও নষ্ট অইয়া যায়। কবে যে এই ধুলা থেইকা নিস্তার পামু আল্লাই জানে’।
মুশুরি এলাকার বাসিন্দা আলম হোসেন বলেন, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কে বেহাল দশার কারণে ধুলাবালির সৃষ্টি হয়। প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়কটি জুড়েই ধুলাবালি। এতে করে বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কটি কয়েক বছর আগে নির্মাণ করা হলেও এক বছর যেতে না যেতেই এটি পুনরায় নষ্ট হয়ে যায়।
এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক দিয়ে চলা সূজন মিয়া জানান, রাজউকের উন্নয়নের কাজ চলায় এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক ও পূর্বাচল উপশহরের আশপাশে ধুলাবালি উড়তে থাকে। এতে করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তার চোখে একসময় কোন সমস্যা ছিল না। ধুলাবালি দিয়ে চলাচলের কারণে তার চোখ দিয়ে এখন পানি পড়ে। কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র রকিফুল ইসলাম রফিক বলেন, রাস্তাঘাটের ধুলাবালির কারণে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে ৩শ’ ফুট সড়ক, রূপসী-কাঞ্চন সড়ক ও ডেমরা কালীগঞ্জ সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। এ কারণে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে এ দুর্ভোগ সাময়িক। রাস্তাঘাট ঠিক হয়ে গেলে দুর্ভোগ থাকবে না। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগে দুর্ভোগ কমাতে ঠিকাদাররা যদি দিনে তিন থেকে চারবার রাস্তায় পানি দেন তাহলে ধুলাবালি অনেকটা কমবে। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী এনায়েত কবির বলেন, এ মূহূর্তে ছুটিতে রয়েছি। তাই এ ব্যাপারে আমি কোন প্রকার বক্তব্য দিতে পারছি না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন