সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কোরবানির ঈদের পশুর চামড়ার কেনাবেচা নিয়ে এবারও দোটানায় পড়েছেন গতবারে লোকসানের মুখে পড়া কুমিল্লার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। গত বছর চামড়া বেচাকেনায় মূল ব্যবসায়ীরা ভালো মুনাফা করলেও লাভের মুখ দেখেননি মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। তবে এবার চামড়া কেনা নিয়ে কুমিল্লার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনেকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কেননা পশুর চামড়ার মূল্য নিয়ে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। কোরবানির চামড়ার মূল্য নিয়ে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় ঈদের আগেই হতাশ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা।
প্রতি বছর কোরবানি এলেই কুমিল্লায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী চামড়ার বাজার বেসামাল করে তোলে। আর তখন চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েন। যার প্রভাব স্থানীয় বড়মাপের চামড়া ব্যবসায়ীদের ওপর পড়ে। গত বছর চামড়া কেনাবেচা নিয়ে কুমিল্লায় একাধিক সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় চামড়ার নির্ধারিত দর ঠিক থাকেনি। চামড়া কেনাবেচা নিয়ে দেখা দেয় হ-য-ব-র-ল অবস্থা। কুমিল্লায় চামড়া ব্যবসায়ীদের সাইনবোর্ডসর্বস্ব সমিতি থাকলেও হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। যার ফলে ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকেই চামড়া কিনে লাভের মুখ তো দূরের কথা লোকসানে পড়ে রাগে-ক্ষোভে সিন্ডিকেটধারীদের গালমন্দ করেছেন। এবারও চামড়া কেনাবেচার মূল্যদর নিয়ে তারা দোটানায় পড়েছেনÑ ব্যবসা করবেন কী করবেন না। কুমিল্লা জেলায় চামড়া বেচাকেনার অন্যতম এলাকা হলো নগরীর গাংচরের ঋষিপট্টি ও লাকসাম উপজেলার দৌলতগঞ্জ বাজার। এছাড়াও বুড়িচংয়ের ময়নামতি বাজার, বুড়িচং বাজার, সদর দক্ষিণের সুয়াগঞ্জ, চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার, চৌদ্দগ্রাম বাজারে চামড়া বেচাকেনার ব্যবস্থাস্থল গড়ে উঠেছে। ঢাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের তিনটি সংগঠন কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম রাজধানীর বাইরে প্রতি বর্গফুট কত টাকা হবে তা প্রতি বছর নির্ধারণ করে দিলেও এ ধরনের দাম মূলত মানা হয় না। কারণ ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়ার বাজারমূল্য নিয়ে কারসাজি শুরু করে সিন্ডিকেট। ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ে গরুর চামড়া বেশি দামে কিনে এনে স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে হয় ক্রয় মূল্যে নয়তো লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়।
কুমিল্লার কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার আড়তদাররা ঈদের আগে প্রতি বর্গফুট চামড়ার বাজারদর যা নির্ধারণ করে দেন ঈদের পর সেই দর কমে যায়। তখন ঢাকার আড়তে চামড়া বিক্রি করার ক্ষেত্রে দরদাম নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। গত বছর কুমিল্লার চামড়া ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো দরদাম ঠিক করে ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনেছেন। যার ফলে পরবর্তীতে লবণযুক্ত চামড়া ঢাকায় আড়তে বিক্রি করে মুনাফা গুনেছেন স্থানীয় মূল ব্যবসায়ীরা। এবারও কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা গতবারের চেয়ে বেশি মুনাফা যেমন আশা করছেন তেমনি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চামড়ার বাজারদর ঘিরে লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কাতেও ভুগছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
এদিকে এবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে চামড়া পাচার সিন্ডিকেট। প্রতি বছরই ভারতীয় চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এখানকার সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতদের মাধ্যমে চামড়া সংগ্রহের জন্য কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে থাকে। এবারও এ ধরনের চামড়া পাচারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন