ক্যান্সার যে একটি ‘মরণ ব্যাধি’ এটা কারোরই অজানা নয়। দিন দিন ক্যান্সার যেমন বাড়ছে, পাশাপাশি বাড়ছে এই রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা। প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময় এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সচেতন রোগীর প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে যথাযথ চিকিৎসায় ক্যান্সার পুরোপুরি সেরে যেতে পারে অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়। কাজেই ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। ক্যান্সারের সাধারণ কিছু লক্ষণ : ১) অল্প অল্প বা বেশি জ্বর হওয়া, রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া, ২) স্বাভাবিকের চাইতে বা অতীতের চাইতে ক্ষুধা কমে যাওয়া, ৩) শরীরের যে কোনও জায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেয়া। কখনও এই চাকায় ব্যথা হতে পারে, কখনও ব্যথা নাও হতে পারে, ৪) দীর্ঘস্থায়ী কাশি থাকা, কোনও কিছুতেই না সারা। কিংবা অনেকদিন যাবত গলা ভাঙ্গা থাকা, ৫) মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন আসা। ঘন ঘন ডায়রিয়া,কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া, ৬) বিনা কারণেই খুব ক্লান্ত বোধ করা, ৭) অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া, তবে প্রাকৃতিকভাবে কিছু খাবার আছে যা এই মরণ ব্যাধিকেও প্রতিরোধ করতে সক্ষম। শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দিন যত যাচ্ছে ততই রোগের প্রতিকারের নিত্য নতুন গবেষণা ও চিকিৎসায় পরিবর্তন আসছে। চিকিৎসকরাও বর্তমানে পুষ্টিকর খাদ্যের মাধ্যমেই বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের কথা বলছেন। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলো রাখা হলে মরণব্যাধি ক্যান্সারকে দূরে রাখা সম্ভব। আজকে আমরা ক্যান্সার প্রতিরোধ কাজ করে এমনই কিছু খাবারের নাম জেনে নেবো।
* রসুন: অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যারা রসুন খান তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। এটি ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করে। এমনকি কিছু ক্যান্সারের কোষ ভেঙ্গে ফেলে। তাই প্রতিদিন একটি কোয়া রসুন খান, এটি আপনার ভেতরের ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করবে।
* গ্রিন টি: গ্রিন টি বা সবুজ চা ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক উপকারী। এই সবুজ চায়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যাটচীন নামক উপাদান থাকে, যা বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। গবেষণায় আরো দেখা গেছে গ্রিন টি টিউমার হওয়া প্রতিরোধ করে থাকে। সাধারণ চায়ের চেয়ে গ্রিন টি বেশি উপকারী। তাই চা না খেয়ে গ্রিন টি বা সবুজ চা খেতে পারেন।
* গাজর: গাজর অনেক পুষ্টিগুণ ও ভিটামিনে ভরপুর খাদ্য। আর এই গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারটিন আছে যা বিভিন্ন ক্যান্সার যেমন ফুসফুস ক্যান্সার, শ্বাসনালী ক্যান্সার, পাকস্থলী ক্যান্সার, অন্ত্র ক্যান্সার এমনকি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে। প্রতিদিন একটি গাজর বা এক গ্লাস গাজরের রস পান করলে এই সকল ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
* টমেটো: টমেটো এক প্রকারের ফল, আবার অনেকে একে সবজি বলে কারণ এতে বীজ আছে তাই। কিন্তু এতে মসলাদার সুগন্ধের জন্য সবজি হিসেবেও ব্যবহৃত হয় বেশি। টমেটো ফল না সবজি সেটা কোন বিষয় না। টমেটো হচ্ছে “নিউট্রিশনাল পাওয়ার হাউজ” যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। টমেটোতে লাইকোপেন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা হৃদরোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে থাকে। টমেটোতে ভিটামিন এ, সি, এবং ই থাকে যা কিনা ক্যান্সার বান্ধব মৌলের শত্রু। টমেটোর রস ক্ষতিকর ডিএনএ এর কোষ নষ্ট করে ফেলে। তাই সপ্তাহে ২ থেকে ৩ টি টমেটো খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
* বাদাম: বাদামে প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকে। আর হৃদপিন্ডের সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাট থাকে বাদামের মধ্যে। যদি আপনি ক্যান্সারের সাথে সম্পর্কযুক্ত ক্ষুধাহীনতায় ভুগে থাকেন অথবা ওজন কমাতে চান তাহলে বাদাম সবচেয়ে ভাল, কারণ অল্প পরিমাণ বাদাম আপনাকে অনেক পরিমাণ পুষ্টি প্রদানে সক্ষম। বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকার পাশাপাশি পটাশিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন ই থাকে। এছাড়াও কিছু প্রোটিন ও ফাইবারও থাকে। আখরোট প্রদাহ রোধী ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিডের চমৎকার একটি উৎস। কিছু গবেষণায় জানা গেছে যে, সাপ্লিমেন্টের চেয়ে খাদ্য থেকে এই পুষ্টি উপাদানটি শোষণ করা ভালো। বাদামে সেলেনিয়াম নামক অ্যান্টি ক্যান্সার উপাদান বিদ্যমানের কারণে কোলন, ফুসফুস, যকৃত, এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। তাই সকালে কিংবা বিকালের নাস্তায় বাদাম রাখতে পারেন। এ ছাড়াও বাদামের মাখনও আপনার শরীরকে ক্যান্সার থেকে দূরে রাখতে পারবে।
* হলুদ: আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে হলুদে ‘কারকিউমিন’ নামক উপাদান আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়া এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করে ভেতর থেকে দেহকে ক্যান্সার প্রতিরোধী করে তোলে। প্রতিদিন কাঁচা হলুদের দুধ, বা মাছ ও মাংসের মত তরকারিতে প্রয়োজন মত হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। হলুদ ক্যান্সার কোষকে শরীরের ভাল কোষকে নষ্ট করতে বাধা দেয় এবং ক্যান্সার কোষকে নিস্তেজ করতে সাহায্য করে। সুতরাং নিয়মিত খাদ্যের মধ্যে হলুদ খেতে চেষ্টা করবেন।
* ফুলকপি বা ব্রকলি: ফুলকপি ও ব্রকলি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং ভেষজ উপাদান সমৃদ্ধ একটি সবজি। ফুলকপি, বাধাঁকপির মত ব্রকলি একটি আঁশযুক্ত সবজি যা শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে থাকে। এছাড়া গ্যালাকটোজ উপাদান অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার দূর করতে অনেক সহায়ক। ব্রকলির সালফোরোফেন, ইনডোলস উপাদান ফুসফুস, ব্লাডার, লিমফোমা ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এতে আরও রয়েছে বিপুল পরিমাণ ক্যান্সার ফাইটিং ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস।
* তরমুজ: ফলের মধ্যে তরমুজ অনেক উপকারী। এই তরমুজের এক টুকরাতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রতিদিনের চাহিদার ৮০% ভিটামিন সি, ৩০% ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন বিদ্যমান থাকে। তাছাড়া তরমুজেও লাইকোপেন থাকে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। বর্তমান এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফল ও শাকসবজিতে ফুসফুস, মুখের, খাদ্যনালীর এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকির মুক্তি পাওয়া যাবে।
* সবুজ শাক: সবুজ শাক ফাইবার, ফোলেট, ক্যারোটিনয়েড ও ফ্লেভনয়েডের চমৎকার উৎস। এই যৌগ গুলোর বেশীর ভাগেরই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপকারিতা আছে যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। ফলে ক্যান্সারের প্রতিরোধে সবুজ শাক অনেক উপকারী। তাছাড়া ক্যারোটিনয়েড চোখের প্রতিরক্ষার কাজ করে এবং মেকুলার ডিজেনারেশন এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে অন্ধতার সমস্যা হতে পারে। ফলে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খাওয়া ভাল।
* পেঁয়াজ: নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। পুষ্টিবিদদের মতে পিঁয়াজেরও রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান যা টিউমারের বেড়ে ওঠাকে বিলম্বিত করে। সুতরাং রান্নার ক্ষেত্রে পিঁয়াজ অনেক উপকারী।
* মাশরুম: আধুনিক খাবার হিসেবে বাংলাদেশে মাশরুমের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটছে। যারা ব্যক্তি মাশরুম সংগ্রহ করে খায়, তারা মাইকোফেজিস্টস বা ‘মাশরুম খাদক’ হিসেবে পরিচিত। মাশরুম খোঁজার প্রক্রিয়াকে সাধারণত: মাশরুমিং বা মাশরুম শিকারি নাম বলা হয়। মাশরুমে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধ।
ডাঃ মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা,
হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
কো- চেয়ারম্যান: হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ইমেইল: drmazed96@gmail.com
০১৮২২৮৬৯৩৮৯।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন