মাঘে বোল, ফাল্গুনে গুটি, চৈত্রে আটি, বৈশাখে কাটিকুটি, জ্যৈষ্ঠে দুধের বাটি। প্রাকৃতিক নিয়মে আম উৎপাদনের মৌসুম সম্পর্কে এটি হচ্ছে খনার বচন। সাম্প্রতিককালে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে খনার বচনের নিয়মে ব্যত্যয় দেখা দিয়েছে। কোন কোন বছর অঘ্রাণ মাসেই গাছে গাছে আমের মুকুল দেখা যাচ্ছে। কোন বছর পৌষ মাসেই মুকুল দেখা যাচ্ছে। আবার কোন বছর ফাগুন মাসেও মুকুল দেখা যাচ্ছে। যার ফলে আমের ফলন দিনদিন কমতে শুরু করেছে। কোন কোন বছর নরসিংদীর বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকা সমতল এলাকা এবং নিম্নভূমিতে বহুসংখ্যক আম গাছ ফলনহীন অবস্থায় থেকে যায়।
চলতি বছর অঘ্রান মাস থেকে আমের মুকুল ধরতে শুরু করেছে। এখন ফাল্গুন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখনো অনেক গাছে মুকুলের দেখা নেই। চাষিদের ধারণা যেসব গাছে এখনও মুকুল ধরেনি, সেসব যাচ্ছে এবছর আর আম হবে না। কিছুদিনের মধ্যেই এসব গাছগুলোতে নতুন পাতা গজাতে শুরু করবে। নরসিংদীতে এখন দেশি আমের জাত প্রায় বিলুপ্তির পথে। উন্নত জাতের আমের প্রতি চাষিদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ির আনাচে-কানাচে উন্নত জাতের আম চাষাবাদ করা হয়। যার ফলে দেশি জাতের আম আর খুব একটা পাওয়া যায় না।
প্রতিবছর বাঙালি পরিবারগুলো কাঁচা আমের আচার বানিয়ে বয়াম ভর্তি করে রেখে দেয়। এরপর সারাবছর গোস্ত পোলাওর সাথে এই আচার আয়েশ করে খায়। এছাড়া দেশি কাঁচা আম সিদ্ধ করে ব্লেন্ডিং করে কাপড়ের ওপর ছড়িয়ে রোদে শুকিয়ে আমসত্ত্ব তৈরি করে কাচের বয়ামে ভর্তি করে রেখে দিলে সারা বছরই শুকনা দেশি আমের স্বাদ গ্রহণ করা যায়। এছাড়া অনেক বাঙালি পরিবার কাঁচা আমের পায়েশ রেঁধে খায়। তাছাড়া এখন দেশে আমের বহুবিধ ব্যবহার বেড়েছে। আম দিয়ে মেংগো বার তৈরি করা হয়। ম্যাঙ্গো ড্রিংকস তৈরি করা হয়। কিন্তু আমের এসব রাসায়নিক মিশ্রন বাঙালির রসনা তৃপ্ত করতে পারে না। উন্নত জাতের আমের স্বাদ মিষ্টি। কিন্তু দেশি আমের মতো এত সুগন্ধিযুক্ত নয়। টক-মিষ্টি জাতের মিষ্টি জাতের আমের স্বাদটাই আলাদা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন