বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নানামুখী সংকটে জর্জরিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম থেকে : প্রতিষ্ঠার ১১ বছরেও নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। দেশের ২৬ তম পাবলিক এ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৭ সালের ২৮ মে। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লার শালবন ময়নামতি এলাকার লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে এক মনোরম পরিবেশে ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১১ বছরে পা রাখলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পরে বাড়ানো হয়নি একাডেমিক ভবন। ফলে ক্লাসরুম সংকট দিনদিন তীব্রতর হচ্ছে। আলাদা লাইব্রেরী ভবন না থাকায় প্রশাসন ভবনের একটি কক্ষে চলে লাইব্রেরীর কার্যক্রম, যা ৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য অপ্রতুল। রাজনীতি ও ধূমপান মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুবি প্রতিষ্ঠিত হলেও ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি চর্চার কারণে শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যহত হচ্ছে বারবার। সর্বশেষ গত ১ আগষ্ট দুটি পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বর্তমানে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে পর্যায়ক্রমে ১৯টি বিভাগ খোলা হয়। বর্তমানে এ সকল বিভাগে প্রায় সাড়ে ৬ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তার মধ্যে প্রকৌশল অনুষদ ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের আলাদা ভবন না থাকায় বাণিজ্য এবং কলা অনুষদইে চলছে এ দুটি অনুষদের অধীনে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে প্রায়ই ক্লাসরুম সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের বারান্দায় বসে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়াও প্রতিটি বিভাগের জন্য রয়েছে মাত্র ২টি করে ক্লাসরুম এবং নেই নিজস্ব কোন পরীক্ষা হল, যা বর্তমানে প্রতিটি বিভাগে ৬ টি ব্যাচের জন্য খুবই অপ্রতুল। অন্যদিকে ভবন সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে এখন অফিসের জটলায় রূপ নিয়েছে। একই ভবনে ভিসি ও প্রকৌশল কার্যালয়, পোস্ট অফিস, মেডিকেল সেন্টার, বিএনসিসির অফিস, শিক্ষক লাউঞ্জ, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, প্রক্টর অফিস, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস, স্টোর অফিস, ব্যাংকিং কার্যক্রম, ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ল্যাব এমনকি শ্রেণিকক্ষও। এর ফলে বিভিন্ন দপ্তরের গোপনীয়তা রক্ষা করা যাচ্ছে না বলে প্রশাসন ভবনের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন।
শ্রেণিকক্ষ সংকট : প্রায় সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে মাত্র ৪২টি শ্রেণিকক্ষ নিয়ে। ১৯টি বিভাগের জন্য যা কোনক্রমেই পর্যাপ্ত নয়। কোন কোন বিভাগের মাত্র একটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। ওই সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের অন্য বিভাগের ক্লাস রুমে গিয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে শ্রেণি কক্ষের সংকট কাটাতে প্রশাসনিক ভবনের তিনটি কক্ষে শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রমও চালানো হয়। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, আইন, সিএসই ও আইসিটি বিভাগের জন্য নেই নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি যথা সময়ে নেওয়া যাচ্ছে না ক্লাস ও পরীক্ষা। এতে সেশনজটের আশঙ্কা করছে শিক্ষার্থীরা।
প্রশাসনিক ভবনে অফিসের জট : প্রশাসনিক ভবনে এখন অফিসের অবস্থা হ-য-ব-র-ল। একই ভবনে রয়ে প্রকৌশল কার্যালয়, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, মেডিকেল সেন্টার, বিএনসিসির অফিস, শিক্ষক লাউঞ্জ, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, প্রক্টর অফিস, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস, স্টোর অফিস, ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ল্যাব এমনকি শ্রেণিকক্ষও। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছায়াও নেই। এখানের প্রতিটি স্থাপনায় যেন পরিকল্পনাহীনতার পরিচয় পাওয়া যায়।
গ্রন্থাগারে নেই পর্যাপ্ত পাঠকক্ষ : দেশের অধিকাংশ বিশ্বিবিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র লাইব্রেরি থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এর ব্যতিক্রম। প্রশাসনিক ভবনের পাঁচ তলায় দুটি কক্ষ নিয়ে চলে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির কার্যক্রম। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র ৬০টি আসন নিয়ে চলছে গ্রন্থারগাটি। পরীক্ষা কিংবা প্রয়োজনীয় নোটের দরকার হলে শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য দীর্ঘ সময় ব্যাপী অপেক্ষায় থাকতে হয়। অন্যদিকে গ্রন্থাগারে সব বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় রেফারেন্স বইও পাওয়া যায় না।
গ্রন্থাগারসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো পড়ার কক্ষ। একমাত্র ছাত্রী হলে পড়ার কক্ষ থাকলেও অন্য কোনো হলে নেই এর ব্যবস্থা। বিভাগ বা অনুষদ ভবনে নেই পড়ার কক্ষ ও কমন রুম। এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস প্রস্তুতিসহ ক্লাসের অবসরে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
একধিক শিক্ষার্থী আভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকরা ক্লাসে যে সমস্ত লেকচার বা যে সকল রেফারেন্স বইয়ের কথা কলে থাকেন লাইব্রেরিতে গিয়ে ওই সকল বই খঁজে পাওয়া যায় না।
নেই আবাসিক চিকিৎসক: প্রশাসনিক ভবনে নিচ তলার একটি কক্ষে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার। নামে মেডিকেল সেন্টার হলেও এটি এক কক্ষ বিশিষ্ট। এতে রয়েছে এক জন মেডিকেল অফিসারসহ চারজন চিকিৎসক, একজন স্বাস্থ্য সহকারী, একজন নার্স। ৯টা-৫টা এদের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও দায়িত্ব পালনে রয়েছে অবহেলার অভিযোগ। এদিকে আবাসিক চিকিৎক না থাকায় আবাসিক শিক্ষার্থীরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ডিসপেন্সারির হাতুড়ে ডাক্তারের ওপর নির্ভর করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের প্রধান ডা. মাহমুদুল হাসান খান জানান, শিক্ষার্থীদের ২৪ঘন্টা চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে লোকবল বাড়াতে হবে। আবাসিক চিকিৎক নিয়োগের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন ঘটবে।
এখনো অসম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ : এখনও বালুময় কুবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পশ্চিমে ১২০ বর্গমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৪৫ বর্গমিটার প্রস্থের একটি খেলার মাঠ নির্মাণের কাজের জন্য তিন ধাপে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে। টেন্ডার আহŸান না করে কোটেশন পদ্ধতিতে ২০১৪ সালের ২২ জুন মাঠের নির্মাণকাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুরুতেই চার লাখ ৪৯ হাজার টাকা, দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুই লাখ ৬৩ হাজার টাকা এবং ১৮ নভেম্বর দুই লাখ ৫৭ হাজার টাকা নিয়ে মাঠ নির্মাণকাজ করে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাগজে-কলমে গত বছরের ২৯ জুন মাঠ নির্মাণকাজ শেষ হয়। কিন্তু কয়েক দফায় কাজ হলেও এখনো মাঠকে অবকাঠামোগত উন্নয়নে রূপ দেওয়া হয়নি।
এত সব সমস্যার পরেও আশার বাণী শুনালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আলী আশরাফ। তিনি বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সমস্যা আছে এটা আমরাও স্বীকার করি। তবে তা উত্তরণের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে নতুন একাডেকিম ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন