শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

অভিনন্দনযোগ্য কর্মসূচী

প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গতকাল বুধবার কুড়িগ্রামের চিলমারিতে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সেখানে এক জনসভাতেও ভাষণ দিয়েছেন। তিনি ভাষণে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচীর কথা জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এই কর্মসূচীর আওতায় দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার ১০ টাকা কেজিতে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও আগামী বছরের মার্চ ও এপ্রিল পর্যন্ত এ কর্মসূচীর চাল পাবে পরিবারগুলো। কুড়িগ্রামে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৭৯টি পরিবার এ কর্মসূচীর আওতায় চাল পাবে। এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ কর্মসূচী সারাদেশে বহাল থাকবে। পরিবারগুলো নির্ধারনের জন্য থানা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, চালের মূল্যবৃদ্ধিসহ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চাল সরবরাহ চালু থাকবে।
বর্তমানে জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য টিসিবির মাধ্যমে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়ে আসছে। খুচরা বাজারদর অনুযায়ী এখন চালের সর্বনিম্ন মূল্য হচ্ছে মোটা ইরির কেজি ৩২ টাকা। আর সর্বোচ্চ মূল্য হচ্ছে কাটারিভোগের ৮০ টাকা কেজি। মধ্যবিত্তের চাল বলে পরিচিত নাজিরশাইলের মূল্য ৪৫ থেকে ৫৬ টাকা। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে বর্তমানে অর্থনৈতিক বৈষম্যের বাস্তবতা বেড়েছে। একদিকে বিশাল জনগোষ্ঠী টানাপোড়োনের মধ্যে জীবনযাপন করছে অন্যদিকে একটি শ্রেণী আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। দেশে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ পরিস্থিতির মন্দার কারণে সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র খুব একটা আশাপ্রদ নয়। প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও ভূমিহারাবার কারণে রাজধানী ঢাকায় দিন দিন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কাজের অভাবে গ্রামের মানুষ এখন রাজধানীমুখী হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানুষের ভারে ডুবতে বসেছে রাজধানী। মানুষের এই ঢলের প্রধান কারণ যে মানুষের বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা তাতে কোন সন্দেহ নেই। খোলাবাজারে চালের যে দাম প্রকৃতপক্ষেই তা কিনে খাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাস্তবতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত এবং তা বাস্তবায়ন করার যে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে অভিন্দনযোগ্য। এপ্রসঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবেই একথা বলা প্রয়োজন যে, এ ধরনের চাল বিক্রির ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয়। সরকার টিসিবির মাধ্যমে কম মূল্যে যে চাল দিচ্ছে সে চাল নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এ চালে বিভিন্ন ধরনের মিশ্রণ থাকে যার ফলে প্রকাশ্য মূল্য আর প্রকৃত মূল্যের ক্ষেত্রে খুব একটা তারতম্য হয় না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণ কর্মসূচীর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ইতোপূর্বে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সরকারের গুদামে থাকা নিম্নমানের চাল সরকার কম দামে বিক্রি করতে চাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যে কর্মসূচীর উদ্বোধন করেছেন তার আওতাধীন মানুষ হতদরিদ্র। যাদের নূন আনতে পান্তা ফুরোয় তারা। তাদের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থ জোগাড় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এই শ্রেণী যাতে কোন প্রকার বঞ্চনার শিকার না হয় সেদিকটি নিশ্চিত করতে কড়া নজরদারি প্রয়োজন হবে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইস্তেহারে পাঁচটি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিল। এগুলো হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য হ্রাস ও মহামন্দা মোকাবিলা, দুর্নীতি দমন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র্য মোচন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। এই পাঁচটি খাতের বাইরেও মুক্তিযোদ্ধা ও দুস্থদের ভাতা দ্বিগুণ করা, স্নাতক পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের বিনা বেতনে পড়ার ব্যবস্থা করা, প্রত্যেক পরিবারে জন্য একজন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের জন্য এমপ্লোরমেন্ট গ্যারান্টি স্কীম চালু করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। আজকের বাস্তবতায় বলা যায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার ফলে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভাল নয়। আমরা মনে করি, শুধু ১০ টাকা কেজি চালের কর্মসূচীই নয়, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির নিমিত্তে অন্য যেসব কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার সবগুলোরই বাস্তবায়ন করা হবে। সেই সাথে প্রতিটি কর্মসূচীর সুফল যাতে সাধারণ মানুষের ঘরে পৌঁছতে পারে সেদিকেও সতর্কদৃষ্টি রাখতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন