সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

বর্ষপূর্তিতে রেকর্ড শনাক্ত

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। সংক্রমণ শনাক্তের বর্ষপূর্তিতে রেকর্ড ৫১৮ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। গত বছরের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এক বছরের মাথায় গতকাল শুক্রবার দৈনিক শনাক্ত রোগীর নতুন রেকর্ডে স্বাস্থ্য বিভাগসহ জনমনে উদ্বেগ-শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর আগে গত বছরের ২৯ জুন সর্বোচ্চ ৪৪৫ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল।

এদিকে এখানকার হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়তে থাকায় আইসিইউ সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠেছে। সরকারি কোন হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। এতে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ নিশ্চিত করা না গেলে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে সার্বিক চিকিৎসা সেবাও ভেঙ্গে পড়বে। সরকারের নির্দেশনার পরও নগরীতে অহেতুক ভিড় জটলা থামছে না। অনেকে মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন। তাতে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫১৮ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আসিফ খান বলেন, সাতটি ল্যাবে দুই হাজার ৫৩৫টি নমুনা পরীক্ষায় এই ৫১৮ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ২০ শতাংশের কিছু বেশি। এর আগে গত বছরের ২৯ জুন শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তবে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবের দুই দিনের রিপোর্ট যোগ হওয়ায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা।
এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ৮০১ জনে দাঁড়াল। তাদের মধ্যে ৩২ হাজার ৪৯৮ জনই নগরীর বাসিন্দা। বাকিরা জেলার ১৪টি উপজেলার। আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাতে চট্টগ্রামে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৮৯ জন। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বৃহস্পতিবারই চট্টগ্রামের সব বিনোদন কেন্দ্র আগামী ১৪ এপ্রিল পযন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। একই সাথে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জনসমাগম হয় এমন কোনো আয়োজন না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা সঙ্কট ফের তীব্র আকার ধারণ করেছে। এখন সরকারি কোনো হাসপাতালেই আইসিইউ শয্যা খালি নেই। ফলে বাধ্য হয়েই গুরুতর রোগীদের সাধারণ শয্যায় রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সঙ্কট অব্যাহত থাকলে মৃত্যুর হার বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে করোনা রোগীদের জন্য আন্দরকিল্লা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল-২ হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, চমেক হাসপাতালের ২৫০টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। নির্দিষ্ট বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোতে ৬০-৭০টি আইসিইউ শয্যা আছে। মুমুর্ষ রোগীদের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে চমেক হাসপাতালে ৮০টি, জেনারেল হাসপাতালে ৩০টি, বিআইটিআইডিতে ১০টি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০০টি।
সাধারণ শয্যার সংখ্যা সরকারি হাসপাতালে ৭৫০টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৫৫০টি। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউর একটি শয্যাও খালি নেই। প্রতিদিন একাধিক রোগী শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউ শয্যার জন্য অপেক্ষমাণ থাকছেন। সরকারি হাসপাতালের সাধারণ শয্যা এখনো ১০-১৫ শতাংশ খালি রয়েছে।
সন্ধ্যা ৬ টার পর ওষুধ কাঁচা বাজার ছাড়া সবকিছু বন্ধ
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া সবকিছু বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল সন্ধা থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে রেকর্ড সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতি ওষুধের দোকান এবং কাঁচাবাজার ছাড়া হোটেল রেস্টুরেন্ট. দোকান পাট, মার্কেট শপিং মল সন্ধার পর বন্ধ থাকবে। এই নির্দেশনা মেনে চলছে কি না তা তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে থাকবেন জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন