দিগন্ত জুড়ে এখন শুধু সবুজ আর সবুজ। মাঠে মাঠে সবুজের ঢেউ খেলছে। মাঠ ভরে গেছে বোরোতে। ধান দ্রæত বেড়ে উঠছে। প্রতিদিনই পাল্টে যাচ্ছে ধানের চেহারা। হালকা বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরো ধান।এতে মন দুলছে কৃষকদের। ভিন্ন আমেজ সঞ্চারিত হচ্ছে তাদের হৃদয়ে। সকাল থেকে রাত অবধি ধান পরিচর্যা ও সেচ দেয়ার কাজে ব্যতিব্যস্ত। আশায় দিন গুনছেন তারা কবে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারবে। গাঢ়ো সবুজের মাঠ দেখে শুধু কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তা নয়, সবাই খুশি।
মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বোরো ধানের অবস্থা খুবই ভালো। দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে মাঠে বোরো ধানের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আসাদুল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আশা করা হচ্ছে এবার বোরো ধানের উৎপাদন আশানুরূপ হবে। ইতোমধ্যে আগাম আবাদের কিছু ধান কাটার উপযোগী হয়েছে। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের সদরে ১০ একর জমির ধান কাটা শুরু হয়েছে বলে জানালেন তিনি।
মহাপরিচালকের কথা, সারাদেশে ৪৮ লাখ ৫ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। বাস্তবে বেশ কিছু জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতিহেক্টরে ৪দশমিক ২ মেট্রিক টন হিসাবে প্রায় ২ কোটি মেট্রিক টন চাল।
মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা জানান, মাঠে মাঠে এখন জোরেশোরে চলছে বোরোর পরিচর্যা। ধানের দাম বেশি হওয়ায় এবার অতিমাত্রায় কৃষকরা ধান উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছেন। সূত্র জানায়, সেচনির্ভর বোরো ধান আবাদের ক্ষেত্রে যাতে কোনরূপ অসুবিধা না হয়, তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, পাবনা, বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মাঠের খবর হচ্ছে, উচ্চফলনশীল জাতের ধান আবাদ এবার তুলনামূলক বেশি হচ্ছে। বেশি ফলনের আশায় কৃষকরা বেশি বেশি হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করেছে। বৃষ্টি হওয়ায় সেচের খুব বেশি অসুবিধা হয়নি।
কৃষি কর্মকর্তাদের কথা, আবাদ ও উৎপাদনের শীর্ষে বোরো। সেচনির্ভর হওয়ায় খরচ এমনিতেই বেশি। তবে নদ-নদী খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় দোনা ও সেউতি পদ্ধতিতে কোথাও আবাদের সুযোগ না থাকায় এবার বোরো আবাদ পুরোপুরি সেচনির্ভর হয়। সাধারণত এই সময়ে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এবার কোথাও রোগ-বালাইয়ের উপদ্রব হয়নি। তাদের কথা, আমরা সার্বক্ষণিক মাঠে তদারকি করছি। করোনাকালে সতর্কতার সাথে কৃষকরা নির্বিঘেœ ধান পরিচর্যা করছেন। বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, ধানের অবস্থা খুবই ভালো। আমাদের কথা ধান ওঠার সময় যাতে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় সেদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। তা না হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যশোরের শার্শার ডিহি ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলম বাবুল আক্তার ও জসিম উদ্দীন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার কফিল উদ্দিন, ফরিদপুরের নগরকান্দার ইশারত আলী, ঝিনাইদহের চরমুরারীদহ গ্রামের ছমির উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক মাঠে ধান পরিচর্যার সময় অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে জানালেন বোরো আবাদ পরিস্থিতি খুবই ভালো। অনেক মাঠে দেখা গেছে চাষিদের সাথে তাদের পরিবার-পরিজনও ধান পরিচর্যা করছেন এক বুক আশা নিয়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন