বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা লঞ্চ ডুবি, ২৯ মরদেহ উদ্ধার

স্বজনদের আহাজারি আর কান্নায় ভারি হয়ে উঠে সেখানকার বাতাস

নারায়ণগঞ্জ থেকে মোঃ হাফিজুর রহমান মিন্টু | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২১, ৬:২৯ পিএম | আপডেট : ৮:২০ পিএম, ৫ এপ্রিল, ২০২১

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কোস্টার জাহাজের ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে এম. এল সাবিত আল হাসান নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে গেছে। রবিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় নির্মিতব্য শীতলক্ষ্যা ব্রিজের কাছে এ ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে নৌপুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং নিখোঁজদের উদ্ধারে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সোমবার সন্ধ্যা ৬টা) ২৪ ঘণ্টায় উদ্ধারকর্মীরা নারী, পরুষ ও শিশুসহ ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ হস্তান্তরের সময় প্রত্যেকের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে যাত্রী নিয়ে মুন্সিগঞ্জে যাচ্ছিল।

নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে তারা হলো, মুন্সীগঞ্জ সদরের নুড়াইতলী এলাকার রুনা আক্তার (২৪), মুন্সীগঞ্জের মোলাকান্দি চৌদ্দমোড়া এলাকার সুমন আলী ব্যাপারীর ছেলে সোলেমান ব্যাপারী (৬০), তাঁর স্ত্রী বেবী বেগম (৬০), মুন্সীগঞ্জ মালপাড়া হারাধন সাহার স্ত্রী সুনিতা সাহা (৪০), মুন্সীগঞ্জ সদরের উত্তর চর মসুরা অলি উল্লাহর স্ত্রী পাখিনা (৪৫), একই এলাকার আরিফের স্ত্রী বিথি (১৮), তাঁদের সন্তান ১ বছর বয়সী আরিফা (১), মুন্সীগঞ্জ সদরের প্রীতিময়ের স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫৩), মুন্সিগঞ্জের মোল্লাকান্দি চরকিশোরগঞ্জের শামসুদ্দিন (৯০), তাঁর স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), বরিশালের উজিরপুর উটরা এলাকার হাফিজুর রহমানের স্ত্রী তাহমিনা (২০), মুন্সিগঞ্জের দক্ষিণ কেওয়ার দেবিন্দ্র দাসের ছেলে নারায়ণ দাস (৬৫), তাঁর স্ত্রী পারবতি রানী দাস (৪৫), বন্দরের কামরুজ্জামান, স্বর্ণা দম্পতির শিশু সন্তান আব্দুল জমীর (০২), মুন্সীগঞ্জ সদরের নুরপুর রিকাবি এলাকার শাহ আলম মৃধা (৫৫), মুন্সীগঞ্জ সদরের রতনপাতরের স্ত্রী মহারানী (৩৭), যাত্রাবাড়ি শনিআখড়ার আনোয়ার হোসেন (৫৫), তাঁর স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০), মুন্সিগঞ্জ সদরের শেয়াগাও পূর্বপাড়া মিঠুন মিয়ার স্ত্রী ছাউদা আক্তার লতা (১৮), শরীয়তপুর নরিয়া এলাকার নুরবকশীর ছেলে আব্দুল খালেক (৭০), ঝালকাঠির কাঠালিয়া এলাকার তোফাজ্জেল হোসেনের মেয়ে জিবু (১৩), বরিশালের স্বরূপকাঠি এলাকার মো. সেকান্দারের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৫০), এবং বন্দরের দক্ষিণ সাবদী এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে মো. নয়ন (২৯)।

এদিকে লঞ্চ ডুবির পর শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে জমায়েত হতে নিখোঁজদের স্বজনরা। তাদের আহাজারি আর কান্নায় সেখানকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে। ডুবে যাওয়ার প্রায় ১৮ ঘন্টা পর সোমবার দুপুর সোয়া একটার দিকে বিআইডবিøউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় নদীর তলদেশ থেকে টেনে লঞ্চটি নদীর পূর্ব তীরে নিয়ে রাখে। লঞ্চটি উদ্ধার করে যখন তীরে নিয়ে আসা হয় তখন ভেতরে কেবল লাশের স্তুপ দেখা যায়। লঞ্চের ভেতর থেকে শিশু, নারী ও পুরুষের ২৩ টি লাশ উদ্ধার করা হয়। ভাষমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয় একটি লাশ। সোমবার বিকেলে আর কোন লাশ না পাওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়। এর আগে রবিবার ডুবে যাওয়ার ৬ ঘন্টার মধ্যে রাত ১২ টার দিকে ৫ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে নারী ১৬ জন, পুরুষ ৯ জন ও শিশু ৪ জন।

্এদিকে, উদ্ধার করা মৃতদেহের মধ্যে নিখোঁজ স্বজনদের না পেয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ঘটনার এত ঘণ্টা পর স্বজনরা জীবিত পাওয়ার আশা তারা ছেড়ে দিয়েছে। তবে অন্তত প্রিয়জনের মৃতদেহটি চান তারা।

স্বজনের মৃতদেহের অপেক্ষা করছিলেন দাউদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মিরপুর থেকে চাকরির জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চে ওঠে তার আত্মীয় মো. সুজন। এখনো তার মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। আমরা তার মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে এখানে এসেছি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মনাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারের নিরাপত্তকর্মী মোহাম্মদ হালিম৷ তিনি বলেন, এসকেএল-৩ (এম: ০১২৬৪৩) নামের একটি কোস্টার জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে অন্তত ২০০ মিটার লঞ্চটিকে টেনে নিয়ে যায়৷ এরপর লঞ্চটি যাত্রীসহ ডুবে যায়৷

অপরদিকে, কোস্টার জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববিকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।

অন্যদিকে বিআইডব্লিউটি এর পরিচালক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক মো রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদসস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে। উদ্ধার অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করা হয়েছে। নৌ চ্যানেল খুলে দেয়া হয়েছে। যাতে করে নদীতে নৌযান চলাচল করতে পারে।

তিনি আরও জানান, এসকেএল-৩ নামের ওই লাইটার জাহাজটিকে আটক করতে নৌ পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) মো. সালেউদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযান শেষ করা হলেও ফায়ার সার্ভিস অভিযান চলমান রেখেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য পাওয়া না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Kader molla ৫ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৪৭ পিএম says : 0
Etai prothom durghotona noi. Rate jatribahi launch, steamer cholachol nishidho kora hok. Rate shudhu cargo ship cholte dea uchit. Ar koto pran jhorle shikkha hobe?
Total Reply(0)
Towhid ৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৩৬ এএম says : 0
Stop all the water transportation at night that are used for public travelers. Only allow the cargo ship to transport goods at night. These kinds of water disasters are not new and occasionally happening. But still why not implement any rules and regulations to control water traffic at night
Total Reply(0)
Towhid ৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৩৬ এএম says : 0
Stop all the water transportation at night that are used for public travelers. Only allow the cargo ship to transport goods at night. These kinds of water disasters are not new and occasionally happening. But still why not implement any rules and regulations to control water traffic at night
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন