মিজানুর রহমান তোতা : টানা এক মাস পানির মধ্যে বসবাস করছেন যশোরের ভবদহ অঞ্চলের ৩ লাখ মানুষ। খাদ্য, স্বাস্থ্য ও আশ্রয়সহ নানা সঙ্কটের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনও তাদের মিটছে না। চাষাবাদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা বন্ধ। স্বাস্থ্যসেবা নেই। নেই রান্নার জায়গা। ছোট ছেলেমেয়েদের পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয়ে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। গ্রামকে গ্রাম মাঠ, ঘাট, কাঁচা-পাকা রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। ভেসে গেছে মাছের ঘের। এবারই প্রথম কেশবপুর বাজার তলিয়ে গেছে। যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগরের প্রায় ২শ’ গ্রামে পানি এখনো থৈ থৈ করছে। একটুও সরেনি পানি। পানিবন্দীরা বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তনাদ করছেন। ভবদহ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে ধীরগতিতে। এসব নিয়ে উপদ্রুত অঞ্চলে অসন্তোষ বাড়ছে। বুধবার দুপুরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী আন্দোলনের ৬টি সংগঠনের উদ্যোগে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব মানবিক বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরেন। ভবদহ পানি নিষ্কাশন আন্দোলনের নেতা ইকবাল কবীর জাহিদসহ নেতৃবৃন্দ বলেছেন, যুগ যুগ ধরে ভবদহের পানিবদ্ধতার জন্য মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি দায়ী। তারা প্রকল্পের পর প্রকল্প গ্রহণ করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে অথচ সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান হয় না। তারা স্থানীয় জনগণ ও আন্দোলনের নেতাদের কখনো সম্পৃক্ত করেন না।
যশোরের ভবদহ অঞ্চলে পানিবদ্ধতা নিরসনে এক সপ্তাহ আগে উভচর (এমফিভিয়েন) মেশিন দিয়ে কাজ শুরু হয়। কিন্তু পলি অপসারণ কাজের দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। এতে পানিবন্দী প্রায় ৩ লাখ মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। ভবদহ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনে পলি অপসারণের জন্য মাত্র একটি স্কেভেটর মেশিন নামানো হয়েছে। এভাবে কাজ করলে আগামী ছয় মাসেও পানি সরবে না। তাই উভয় পাশে আরো চারটি করে স্কেভেটর মেশিন নামিয়ে পলি অপসারণের দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, একদিক দিয়ে ড্রেজিং করা হচ্ছে অন্যদিক দিয়ে সেখানে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পানি সরানোর নামে ছেলে ভোলানোর কাজ করা হচ্ছে। ভবদহ ও হরিহর নদীর অববাহিকায় মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানিবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দুর্নীতির উদ্দেশ্যে ভবদহ স্লুইস গেট বন্ধ রেখে নদী খননের নামে প্রহসন করা হয়েছে। বিল কপালিয়ার জোয়ারাধার প্রকল্প (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট-টিআরএম) কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র, ক্ষমতাসীনদের দুই গ্রুপের রশি টানাটানি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি, কতিপয় ঘের মালিক ও সরকারি দলের কোন্দলের কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করা হলেও পাউবো গুরুত্ব দেয়নি। যার ফলে ভবদহ অঞ্চলে ভয়াবহ পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দুর্গত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বিভিন্ন এনজিওর সপ্তাহের কিস্তি আদায় বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিমের নদী আন্দোলনে ৬টি সংগঠনের নেতা ইকবাল কবীর জাহিদ, অনিল বিশ্বাস, মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ এমপি, অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিকী, কাওছার আলী, রনজিৎ বাওয়ালি, গাজী আবদুল হামিদ, জিল্লুর রহমান ভিটু, ইলাহদাদ খান। ঘোষণা করা হয় আগামী ২২ অক্টোবর যশোরে কনভেশন করা হবে। আজ (বৃহস্পতিবার) ভবদহ পানিবন্দীদের রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে স্মারকলিপি দেয়া হবে প্রশাসনের কাছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন