শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

মিটার নিয়ে চোর-পুলিশ খেলা চট্টগ্রামে অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য থামছে না

প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম নগরীতে অটোরিকশায় মিটারে ভাড়া আদায় নিয়ে চলছে ‘চোর-পুলিশ খেলা’। চালকেরা মিটারের বদলে গলাকাটা হারে ভাড়া আদায় করছে। এ ব্যাপারে নির্বিকার রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। অটোরিকশায় মিটার সংযোজনের বেধে দেয়া সময় শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরেও বেশিরভাগ অটোরিকশায় মিটার বসেনি। মিটার সংযোজন করা হয়েছে এমন অটোরিকশায়ও ভাড়া আদায় হচ্ছে আগের মত। এতে করে যাত্রীরা এখনও অটোরিকশা চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে। মিটার আছে কিনা তল্লাশি করছে পুলিশ কিন্তু মিটারে ভাড়া আদায় হচ্ছে কিনা তা দেখা হচ্ছে না।
মহানগরীতে বৈধ ১৩ হাজার অটোরিকশার সাথে আরও অন্তত ৮ হাজার অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করছে। গণপরিবহন সংকটকে পুঁজি করে অটোরিকশায় রীতিমত ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। মধ্যবিত্তের বাহন হলেও দিনে দিনে অটোরিকশা মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুণ বেশি আদায় করা হচ্ছে। পুলিশি অভিযানের অজুহাতে অটোচালকেরা বেশি ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এতে করে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ অটোরিকশায় মিটার নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে চালকেরা। রাস্তায় পুলিশি অভিযান চলছে, গণহারে মামলা দেয়া হচ্ছে- এমন অজুহাতে বেশি ভাড়া হাঁকছে চালকেরা। পুলিশি অভিযানের মুখে মিটারবিহীন কিছু অটোরিকশা রাস্তায় নামছে না। অন্যদিকে গ্যাস সংকটের কারণেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অটোরিকশা রাস্তায় নেই। এ কারণে নগরীতে অটোরিকশার সংখ্যা কমে গেছে। এ সংকটকে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে চালকেরা।
যেসব পয়েন্টে অটোরিকশা তল্লাশি হচ্ছে সেসব পয়েন্ট এড়িয়ে বিকল্প পথে চলাচল করছে বেশিরভাগ অটোরিকশা। বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছার অজুহাতেও বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। যাত্রীরা বাধ্য হয়ে চালকদের দাবি মেনে নিচ্ছে। কয়েকজন চালক জানান, মামলার ভয়ে তড়িঘড়ি করে মিটার সংযোজন করেছেন তারা। কিন্তু মিটার নিম্নমানের হওয়ায় তা কাজ করছে না। এছাড়া বেশিরভাগ অটোরিকশা মিটার ছাড়াই ভাড়া আদায় করছে। এ অবস্থায় যে স্বল্পসংখ্যক অটোরিকশায় মিটার সংযোজন করা হয়েছে তারাও মিটারে ভাড়া আদায় করছে না। কয়েকজন যাত্রী ক্ষোভের সাথে বলেন, পুলিশ ১ ফেব্রæয়ারি থেকে মিটারে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করার ঘোষণা দিলেও এখনও তা কার্যকর করতে পারছে না। ট্রাফিক পুলিশ অটোরিকশায় মিটার আছে কিনা তা দেখে দায়িত্ব শেষ করছে। মিটারে ভাড়া আদায় হচ্ছে কিনা তা দেখার কেউ নেই।
কয়েকজন চালক জানান, আমরা অনেক টাকা খরচ করে মিটার লাগিয়েছি। অথচ বেশিরভাগ অটোরিকশায় মিটার নেই। তারা মিটার ছাড়া ভাড়া আদায় করছে। এ অবস্থায় আমরা মিটারে ভাড়া নেব কিভাবে? তা হলে তো আমাদের লোকসান হয়ে যাবে। ঘোষণা দিয়ে মহানগরীতে পহেলা ফেব্রæয়ারি থেকে মিটারবিহীন অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের ওই নিষেধাজ্ঞা মানেনি অটোরিকশা চালকেরা। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মহানগরীতে চলাচলরত অটোরিকশায় মিটার সংযোজনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৫ ভাগ অটোরিকশায়ও মিটার সংযোজন করা হয়নি। পুলিশের অভিযানের মুখে অটোরিকশায় মিটার সংযোজনের হার বেড়েছে।
গতকাল (রোববার) হাটহাজারীর বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মিটার ক্যালিব্রেশন করতে অটোরিকশার দীর্ঘ লাইন। সেখানে দায়িত্বরত পরিদর্শক মামুনুর রশীদ জানান, এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৯৩টি অটোরিকশায় মিটার সংযোজন করে বিআরটিএ’র মাধ্যমে ক্যালিব্রেশন করা হয়েছে। এ কাজের জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারেও ওই দফতর খোলা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ওইদিন ৩৩৩টি অটোরিকশায় মিটার ক্যালিব্রেশন করা হয়েছে। মহানগরীতে বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা ১৩ হাজার। এ হিসেবে এখনও অর্ধেক অটোরিকশাতেও মিটার সংযোজন করা হয়নি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ-উল হক বলেন, ১ ফেব্রæয়ারী থেকে মিটারবিহীন অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত ৩০০ অটোরিকশা আটক করা হয়েছে এবং ২ হাজারের বেশি অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। যেসব অটোরিকশায় মিটার সংযোজন করা হয়েছে সেগুলোতে মিটারে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এখনও মিটার সংযোজন করা হয়েছে কিনা তা দেখছি। তবে কোন যাত্রী যদি মিটারে ভাড়া আদায় না করার বিষয়ে অভিযোগ করে তখন ওই অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন