পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী বাজারের পূর্ব পাশে শ্রীরামকাঠী-ভরতকাঠী খেয়াঘাটে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে খেয়া ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। এতে জিম্মি হয়ে পড়েছে প্রতিদিন খেয়া পারাপার হওয়া নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলার কয়েক হাজার জনগণ। সরেজমিনে শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের বাজার সংলগ্ন শ্রীরামকাঠী-ভরতকাঠী খেয়া নামে পরিচিত ঘাটে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকার চেয়ে অতিরিক্ত পাঁচগুণ ভাড়া আদায়ের সত্যতা পাওয়া গেছে। সরকারি তালিকানুযায়ী জন প্রতি ভাড়া ৩ টাকা ঘাটে ও ২ টাকা খেয়ায় আদায় করার কথা থাকলেও মূলত আদায় হচ্ছে জনপ্রতি ১০ টাকা, চালকসহ মোটরসাইকেল নেয়া হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন যাবৎ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। রাতের বেলা এ ভাড়া আরো বৃদ্ধি করে তাদের ইচ্ছেমত আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের এসএম জাহিদুল হক জানান, প্রায়ই মোটরসাইকেল নিয়ে খেয়া দিয়ে পারাপার হই। আসতে ৪০ টাকা ও যেতে কোন দিন ৫০ টাকা বা তারও বেশি তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী দিতে হয়। আমরা জানি সরকারি তালিকার ভাড়া আরোও কম কিন্তু কি করবো, তাদের ইচ্ছামত না দিলে খেয়া পার হতে পারি না। আমরা যদি এর বিরুদ্ধে কথা বলি বা ভাড়ার তালিকা দেখতে চাই তা হলে তারা বলে আপনাকে কেন দেখাব। যেটা ভাড়া আমরা সেটাই নেই।
শ্রীরামকাঠী সদর বাজারের স্থানীয় এক যাত্রী মো. রাজু হাওলাদার জানান, আমি প্রতিনিয়ত খেয়ায় পারাপার হই কিন্তু জুলুম করে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে এবং তাদের ইচ্ছেখুশি মত খেয়া পারাপার করে। জানা যায়, দুটি উপজেলার সংযোগ পথ হিসাবে এ খেয়াটি পিরোজপুর জেলা পরিষদের মাধ্যমে ইজারা দেয়া হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে পিরোজপুর পঙ্গু, দুঃস্থ ও বেকার মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিমিটেড শ্রীরামকাঠী-ভরতকাঠী ঘাট জেলা পরিষদ কোঠায় সমঝোতার ভিত্তিতে ইজারা প্রাপ্ত হয়ে সমির কুমার বাচ্চুর নামে এটি ইজারা দেয়া হয়েছে। ইজারাদারের পক্ষে বর্তমানে জিহাদ আলী শেখ খেয়া পরিচালনা করছে বলে জানা যায়। খেয়ার মাঝি মিজানুর রহমান অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ পথে যাত্রী কম হয়ে থাকে। তাই আমরা জন প্রতি ১০ টাকা এবং মোটরসাইকেল ৪০ টাকায় পারপার করে থাকি। প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী পাইনা বলেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করি। ঘাট পরিচালনাকারী জিহাদ আলী শেখকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পঙ্গু, দুঃস্থ ও বেকার মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিমিটেডের আওতায় এই খেয়া আনা হয়েছে। আমরা অতিরিক্ত কোন ভাড়া আদায় করি না বলে জানান তিনি। খেয়ার ইজারাদার সমির কুমার বাচ্চু মুঠোফোনে জানান, এ পর্যন্ত কারো কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি। আমি একটু কাজে ব্যস্ত আছি। কয়েক দিনের মধ্যেই ঘাটে এসে বিষয়টি শুনব এবং জানব। খেয়া পারাপারের জন্য মোট ৫ টাকা হারেই টাকা তোলার কথা রয়েছে। যদি কোন ট্রলার বা নৌকার ইচ্ছামত টাকা তোলার অভিযোগ আসে তা হলে সেই ট্রলার বা নৌকা বন্ধ করে দেব।
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, এ ইজারা আমাদের অফিস থেকে তো হচ্ছে না, এটি জেলা পরিষদ থেকে। সেখানে যে রেট আছে সেই রেটের বাইরে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ রেটের বাইরে গিয়ে ভাড়া আদায় করে তা হলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে তা খতিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন মহারাজ মুঠোফোনে জানান, আমার এই মুহূর্তে মুখস্থ নেই। মূলত ওই খেয়ায় রেট কত তা আমার জানা নেই। তবে অনিয়মের অভিযোগ পেলে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন