দীর্ঘদিনের সংসার করে ত্যক্ত বিরক্তের ঘটনা কিংবা পরকীয়ায় হত্যা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে হরহামেশায়। কিন্তু নববধুর হত্যার ঘটনা একেবারেই কম। মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার দাইরপোল গ্রামের নববধু মেঘলা খাতুন হত্যার ঘটনা ঘটেছে। যশোরের বসুন্দিয়ায় ছেলের লাঠির আঘাতে সরোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। তুচ্ছ ঘটনায় সৎ ভাই গলা কেটে হত্য করে কুষ্টিয়া দৌীলতপুরের জামালপুর গ্রামের ফামিদকে। যশোর সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে গেমস খেলা নিয়ে বিরোধে সহপাঠী সোহানের ছুরিকাঘাতে রাকিবুল ইসলাম খুন হয়। গত এক পক্ষকালে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এসব হত্যাকান্ড।
দিনে দিনে সবকিছুরই মূল্য বাড়ছে। শুধুমাত্র কমছে জীবনের মূল্য। ক্রমাগত বেড়েই চলেছে হত্যাকান্ড, হিং¯্রতা ও নিষ্ঠুরতা। অসহিঞ্চুতার মাত্রা এতটা বেড়েছে যে তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা ও সামান্য স্বার্থে একের পর এক মানুষ খুন করতে দ্বিধা করছে না। কোন এক ব্যক্তির হত্যাকান্ডের ঘটনা শুধু ব্যক্তির নয় ওই পরিবারকে হত্যা করা হচ্ছে। কতটা বেদনার, কষ্টের, বিপদের ও শূন্যতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে হত্যাকান্ডের শিকার পরিবারকে তা ভুক্তভোগীরাই বোঝে ‘ব্যথিত বেদন বুঝিবে সে কিসে দংশেনি যারে’ এর মতোই।
খুলনার নিউমার্কেট এলাকার রিকসাচালক আক্কাছ আলী বললেন, চোখের সামনে যেসব ঘটনা মাঝেমধ্যে দেখি তাতে বলা যায় মানুষের জীবনের মূল্য দিনে দিনে কমছেই। যশোরের দিনমজুর বেলেরমাঠ গ্রামের ফয়েজ গাজী বললেন, সমাজের উচুস্তরের মানুষের কথা আলাদা তারা অস্ত্রের লাইসেন্স পান, গাড়ীতে চলাচল করেন, কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা বাই সাইকেল ও রিকসা-ভ্যানে দিন অথবা রাতে জরুরী কাজে রাস্তায় বের হন, তারা নিশ্চিন্ত নিরাপদের বড় অভাববোধ করে থাকেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা বললেন, গ্রাম কিংবা শহর সমানতালে প্রভাবশালীদের দাপট চলছে। সেইসাথে চলছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। জমিজমা নিয়ে গোলযোগে, সামান্য কথাকাটাকাটিতে, রাজনৈতিক কারণে, মাদক ব্যবসা কিংবা তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা নিয়ে রক্তপাত ঘটছে।
পুলিশ ও পিবিআইএর যশোর ও খুলনার কয়েকটি হত্যা মামলার নথি ঘেটে জানা যায়, তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনায় হত্যাকান্ডের মতো শিউরে ওঠার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে একেবারে হাসতে হাসতে। শুধু হত্যাকান্ড নয়, সড়ক দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যাসহ যেসব ঘটনায় জীবনহানি ঘটছে তার প্রকৃত কারণ উদঘাটন জরুরি। তা না হলে জীবনহানির মাত্রা বেড়েই যাবে। আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনাকারীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার আইন থাকলেও তা সিংহভাগ ক্ষেত্রেই হয় না।
যশোর সরকারী এম এম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগি অধ্যাপক কামরুল এনাম আহমেদ জানান, তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনায় হত্যাকান্ডের মতো লোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে একের পর এক। সামাজিক অবক্ষয় মারাত্মক পর্যায়ে। পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ প্রায় বিলীন হওয়ার পথে যে কারণে ভয়ঙ্কর অপরাধের দিকে ধাবিত হচ্ছে যুব সমাজ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন