সর্বাত্মক লকডাউনে সরকারের কোনো রোডম্যাপ নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকারের কোনো সমন্বয়, পরিকল্পনা, রোড ম্যাপ নেই। এই যে ৭ দিন লকডাউন দিয়েছে তার পরে কী হবে? যারা দিন আনে দিন খায় তাদেরকে খাওয়ার তারা কি ব্যবস্থা করছেন? এই লোকগুলোকে তো ঘরে রাখতে পারবেন না। যার পেটে ভাত নেই তাকে লকডাউন দিয়ে কী করবে, করোনা দিয়ে কী করবে- সে তো চিন্তা করতে পারবে না। এই সংখ্যা কিন্তু অনেক।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
কীভাবে লকডাউন সফল কিভাবে করা যাবে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ব্যাপারটা তো সহজ নয়, অত্যন্ত কঠিন নিসন্দেহে। তারপরে দেশটা ড্যান্সলি পপুলেটেড এরিয়া, ১৮ কোটি মানুষ এখানে। এখনো তো আলাউদ্দিন চেরাগ কারো হাতে নেই যে, মুহুর্তে ঠিক করে ফেলবেন। এখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রত্যেকটা এলাকাতে জাতীয় কমিটি তৈরি করেন-সমস্ত রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক সংগঠন, এনজিও, বিশেষজ্ঞ তাদেরকে নিয়ে কমিটি তৈরি করেন। দে উইল সুপারভাইজ যে ঠিকমতো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে কিনা? বাংলাদেশে তো ইতিহাস আছে, আমরা বন্যা, সাইক্লোন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিভাবে মোকাবিলা করেছি, সেই ভাবেই যদি জনগণকে সম্পৃক্ত না করেন তাহলে তো তারা সুফল পাবে না।
তিনি বলেন, এখানে কী হচ্ছে? জনগণকে সরকার সম্পৃক্ত করতে চায় না একটা মাত্র কারণে যে, তারা লুটপাট করবে, টাকা চুরি করে নিয়ে যাবে।
লকডাউনের বিরোধিতা করছেন কিনা এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, না আমরা লকডাউনের বিরোধিতা করছি না। তারা লকডাউন নাম হিসেবে ব্যবহার করছে। এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি যে, অকার্যকর একটা শাটডাউন করছে। হাজার হাজার লোকজন বেরুচ্ছে, হাজার হাজার লোক বাজারে যাচ্ছে। দেখুন কতটা স্ববিরোধিতা। আবার শিল্পকলকারখানা খোলা রাখছে। কোনো পরিকল্পনাই নাই।
গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ বা নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যখন করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বর্তমান অনির্বাচিত গণবিচ্ছিন্ন সরকার লকডাউনের নামে একটা অকার্যকর শাটডাউন জাতির উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এখান না লকডাউন না শাটডাউন। পত্রিকাতে দেখছেন নিউ মার্কেটের এলাকায় হাজার হাজার মানুষ, ফেরিতে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ- এগুলো হচ্ছে তাদের লকডাউনের নমুনা। এখানে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে দিন আনে দিন খায় মানুষজনে। এটা দায়িত্ব সরকারের যে এই মানুষগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। যেটা সরকার করতে ব্যর্থ হয়েছে সম্পূর্ণভাবে।
দেশে করোনার কোনো টেস্ট নেই: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এবার সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার যে ভেরিয়েন্ট, সেই ভেরিয়েন্ট ঢুকে পড়েছে। এই ভাইরাস প্রচ-ভাবে সংক্রামক, এটাতে মৃতের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তাই ঘটতে যাচ্ছে এখন। গতকাল ৮৩ জন মারা গেছেন। টেস্ট তো হচ্ছে না। আমার বাসায় যারা কাজ করেন তাদের টেস্ট করানোর জন্য আামি গত তিনদিন ধরে চেষ্টা করছি। প্রত্যেক দিন বলে যে, ফরম নাই করা যাবে না। অর্থ্যাৎ এখানে বড় একটা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন সরকার। জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, বুঝাচ্ছে। টেস্ট হচ্ছে না। টেস্টের সুবিধাও কিন্তু সারা দেশে নাই। ২০ টি জেলায় কোনো সুবিধাই নাই, তাদেরকে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে টেস্ট করতে হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দশ মাস আগে এসে এয়ারপোর্টের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাহায্যে তিন‘শটা ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন সরবারহ করা সামগ্রি এসেছে সেগুলো ছাড় করা হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে যে, প্রকল্প নেয়া হয়েছে, দশ মাস আগে ইকুপমেন্ট এসেছে কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের কতটা ব্যর্থতা হতে পারে যে, এখন পর্যন্ত সেটা ছাড় করে হাসপাতালগুলোতে তা পৌঁছাতে পারেনি। এই সরকারের কোনো দায়বদ্ধ নেই যার ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বক্ষেত্রে তারা আজকে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে এবং জনগণকে তাদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে।
সিন্ডিকেটের হাতে বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি: চাল-সোয়াবিন তেল-চিনি-আটা-ময়দাসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের সময়ে একদিকে লাগামহীন দুর্নীতি চলছে, আর লুটেরা সরকারের সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনাও জিম্মি হয়ে আছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার দূরীকরণের কোনো বিকল্প নাই। এমতাবস্থায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপির নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণময় সরকার প্রতিষ্ঠার সামগ্রিক আন্দোলনে অংশ নিতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই সরকারকে সরিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবার।
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার দিবসকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো ঘটালো সরকার আমি এটাকে পুরোপুরিভাবে পরিকল্পিত ঘটনা বলে মনে করি এবং স্বাধীনতা দিবসের এই অবস্থাটা তৈরি করে এখন তারা এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করবার আরেক বড় প্রজেক্ট তারা হাতে নিয়েছে। এই লকডাউনের মধ্যেও তারা আমাদের যারা বিরোধী দলে আছে তাদের এবং যারা কথা বলছেন, যারা আন্দোলন করছেন তাদের ওপর আবার তারা চড়াও হবে এবং গ্রেপ্তার করবে। ইতোমধ্যে হেফাজতের বিভিন্ন নেতা এবং কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা করেছে এবং কিছু লোককে গ্রেপ্তারও করেছে। আমাদের প্রশ্নটা হচ্ছে অন্য জায়গায়। আমরা হেফাজতের পক্ষে কথা বলছি না। কথা বলার অধিকার সকলে আছে। ২৬ মার্চ তাদের (সরকার) প্রোভোকেশন ছিলো সবচেয়ে বেশি, সেই প্রোভোকেশন সব জায়গায়, ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে তারা সিচুয়েশন তৈরি করেছে, এখন তারা বিরোধী দলের ওপর চড়াও হচ্ছে।
তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জনগণের চোখের দৃষ্টিটা বুঝে নিন, ভাষাটা বুঝে নিন। আপনারা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেন। দেশে একটা প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন করবার জন্য একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন