রেজাউল করিম রাজু : শেষ মুহূর্তের ঈদ কেনাকাটায় জমে উঠেছে বাজার। পশুহাটগুলোয় পুরোদমে শুরু হয়েছে কেনাবেচা। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুহাট সিটিহাটে পশু আর মানুষের ভিড়ে পা রাখাই দায়। ঈদের ছুটি হবার পর থেকে মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নাড়ির টানে যেমন মানুষ ট্রেন-বাসে চেপে আসছে, তেমনি যাচ্ছেও। স্টেশন, বাসটার্মিনাল সর্বত্র বেজায় ভিড়। গতকাল জুমার নামাজের পর হাটপানে মানুষের ঢল নামে। একটি পশু কেনার জন্য পাঁচ-সাতজন করে যাবার কারণে এমন ভিড়। গ্রামের ঘরে ঘরে লালনপালন করা গরু-ছাগলগুলো নিয়ে এতদিন ভাল দাম পাবার আশায় ছিল। ফড়িয়া দালালরা বিভ্রান্ত করেছিল উল্টোপাল্টা দাম বলে। এখন সব বিভ্রান্ত ঝেড়ে বিক্রির জন্য নিকটবর্তী হাট গুলোয় যাচ্ছেন লালন পালনকারীরা। হাটে নিয়ে যাবার আগে কৃষান বধূ শেষ বারের মত ছলছল নয়নে গরু-ছাগলের গায়ে আদর বুলিয়ে বিদায় দেবার দৃশ্যও নজর এড়ায় না। অনেকে গরু-ছাগলকে চকচকে দেখানোর জন্য শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করাচ্ছে। কালো খাসির চাহিদা বেশি বলে কেউ কেউ ব্যবহার করছে কলপ। গলায় কাগজ ফুলের মালা কিংবা লাল ফিতে বেঁধে সাজিয়ে নিচ্ছে। আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী এমন প্রবাদকে সামনে রাখছে কেউ কেউ। হাটগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় দালালে গিজ গিজ করছে। হাটে ঢোকার মুখেই গরু ছাগলের দড়ি চলে যাচ্ছে দালালদের হাতে। মালিকের কাংখিত দাম জেনে নিয়ে তারপর এরা ক্রেতা বুঝে ইচ্ছেমত দাম হাকাচ্ছে। এখানেও রয়েছে সিন্ডিকেট। ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করার জন্য দালালরা নিজেরা ক্রেতা সেজে উল্টোপাল্টা দাম বলছে। ক্রেতারা সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর জন্য ছুটছেন এ হাট থেকে ও হাটে। অনেকের কাছে এই হাট ঘোরার ব্যাপারটা আনন্দেরও বটে। ভোজন রসিক ক্রেতাদের জন্য হাটে বসা অস্থায়ী হোটেলগুলো রেখেছে লোভনীয় কালো ভাজা গরুর মাংস। কালো ভাজা মাংস খাবার জন্য অনেকে আগেভাগে চলে যাচ্ছেন। দুপুরের খাবারটা সেখানে সারছেন। দিনভর হাট ঘুরে শেষমেশ পছন্দের গরু কিংবা ছাগল কিনে ফিরছেন। এই কেনা কাটায় কেউ জিতছেন আবার কেউ হারছেন। সবচেয়ে বিড়ম্বনার ব্যাপার হলো পশু আনতে গিয়ে পথচারীদের ভাই দাম কত হলো। কতটুকু মাংশ হবে এমন প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে বাড়িতে কোরবানীর পশু আনার পর গৃহবধূ দেখে মেয়েদের চোখে মুখে অন্যরকম আনন্দ। ব্যাস্ত হয়ে পড়ছে আদর-যতœ করতে। গলায় ফিতে বাঁধা খাসিকে ছাগলের পাতা খাওয়ানো গরুকে খৈলভুসি দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে। কোরবানির পশু বলে কথা। নতুন বাড়িতে এসে গরু-খাসিগুলো নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে হাম্বা হাম্বা আর ব্যা ব্যা শব্দে শোরগোল তুলছে। রাতের বেলা খাসীর এমন চিৎকারে অনেকের রাতের নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে মহল্লায় বসেছে খৈল ভুসি খড় আর কাঠালের বিক্রির অস্থায়ী দোকান। মহল্লায় মহল্লায় ফেরি করে হাঁকডাক করছে কাঁঠালের পাতার ফেরীওয়ালারা। শীল পাটা কুটানোর জন্য যেমন কুটানীরা মহল্লায় মহল্লায় হাঁকডাক করছে। তেমনি ছুরি-বঁটি ধার দেয়াওয়ালারাও। শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় কামার বাড়ি আর দোকানগুলোয়। বিক্রি হচ্ছে মাংস কাটার কাঠের ছোট গুঁড়ি। ডালি আর খেজুর পাতার পাটি। কসাইদের এখন বড্ড কদর। তাদের পেছনে ছুটছেন কোরবানি দাতারা। বিশেষ করে যারা গরু কোরবানী করছেন। কসাইদের রেটও বেড়ে গেছ্ েএনিয়ে চলছে দর কষাকষি।
শেষ মুহূর্তে এসে আরেক দফা গরম বেড়েছে চরম মসল্লার বাজারে। পেয়াজ, আদা, রসুন, দারুচিনি, এলাচ, চিনিÑসবকিছুর দাম বেড়েছে। শসার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি পঞ্চাশ টাকা। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত দাম বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল কাঁচা বাপজারে ছিল ভাল ভিড়। এমন ভিড় কদিন থাকবে। ভিড় দেখা যায় তৈজসপত্রের দোকানগুলোয়। রেডিমেড কাপড়ের দোকান টেইলার্স জুতো স্যান্ডেলের দোকান ও কসমেটিক্সর দোকান গুলোয় ভিড়ের কমতি নেই। ঈদকে সামনে রেখে ফ্রিজ টিভির শোরুম গুলো মাসখানেক আগ থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। কোম্পানীগুলো নানা রকম কিস্তি আর ছাড়ের প্রলোভন দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টার কোন কমতি রাখেনি। ফ্রিজ কিনলে টিভি ফ্রিজ দেবার প্রচারনা চলছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত মাইকিং করে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। মানুষও ঝুঁকছে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যেন এক গরু সাত ভাগ হয়ে সাত ফ্রিজে যাবে। ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর ঈদগাহ ময়দান ও বড় রাস্তায় তোরণ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করেছে। ঈদের পরের কটাদিন নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো লোকে লোকারণ্য হবার আশায় সেসব স্থানে নেয়া হয়েছে নানা রকম প্রস্তুতি। ঈদকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও নিয়েছে বিশেষ প্রস্তুতি। সব মিলিয়ে ঈদ যাপনের জন্য সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন