এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : হাটে কোরবানীর পশু বিক্রেতাদের অভিযোগ-পুলিশকে টাকা না দিয়ে সড়ক দিয়ে কোনও পশু বাজারে নেয়া যাচ্ছে না। আর টাকা না দিলেই হয়রানি করা হচ্ছে। তাই ৫০/১০০ টাকা দিয়ে রক্ষা পেতে পাচ্ছেন গরু বিক্রেতারা। আর হাটের আশপাশে দালাল চক্রের উপদ্রব ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যাদের ১০০/৩০০ টাকা দিতে হয়। টাকা না দেয়া পর্যন্ত পশু বহনকাজে নিয়োজিত গাড়ি হাটে ঢুকতে বা বের হতে দেয়া হয় না। পুলিশ ও দালাল চক্রের দৌরাত্ব্যে অতিষ্ঠ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই।
একটি পশু পরিবহন গাড়ীর চালক মো. মামুন বলেন, ‘খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আঠার মাইল ও খর্ণিয়া হাটে যাতায়াতের পথেই এ ধরনের উৎপাত বেশি হচ্ছে।’
ঈদুল আজহা উপলক্ষে আঠার মাইল পশুর হাটে প্রতি সোমবার এবং খর্নিয়া হাট বৃহস্পতিবার বসছে। ডুমুরিয়ার শাহপুরে বৃহস্পতিবার থেকে পশু হাট শুরু হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর থেকে খুলনা মহানগরীর জোড়াগেটে পশু হাট শুরু হয়। এছাড়া খুলনার তেরখাদা, দাকোপ, ফুলতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পশু হাট শুরু হয়েছে। এসব হাটকেন্দ্রিক একশ্রেণির দালাল ও পুলিশের উৎপাত বেড়ে চলেছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন পশু বিক্রেতা ও পশুবাহী যানবাহনের চালকদের। নানা প্রতিকূলতায় ক্ষতি গ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন হাট ইজারাদাররা।
সূত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার প্রগতি স্কুল সংলগ্ন এলাকা, চুকনগর থেকে আঠারো মাইল, মালতি এলাকা, কাঠালতলায় মহাসড়কে, পোড়াবাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অবস্থান নিয়ে ব্যাপারী ও পশুবাহী যানবাহন থেকে টাকা আদায় করছে। হাইওয়ে পুলিশ দিন ও রাতে এ তৎপরতায় রয়েছে। আর ডুমুরিয়া থানা পুলিশ রাতে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় এবং এক ঘণ্টা পরপর স্থান পাল্টায়।
যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোর্ট এলাকা থেকে গরু নিয়ে বিক্রির জন্য আঠারো মাইল হাটে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় বন্যা হওয়ায় গরুর খাবারের দাম বেড়েছে। আগে আমরা ১ পণ খড় কিনতাম ৭৫ টাকায়। আর এখন তা কিনতে লাগছে আড়াই’শ টাকায়। গরু নিয়ে হাটে আসার পথে পুলিশরে টাকা দিতে হয়েছে। না দিলে হাটে আসতে দিচ্ছে না তারা। নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জাতপুর থেকে গরু কিনতে আসা তারক দাস জানান, ‘আঠারো মাইল পশু হাটে গরু কেনার পর হাট ফি বাবদ ৫০০ টাকার ¯িøপ কাটা হয়। কিন্তু ৩০০ টাকা দিয়ে ছাড়া পাই। এরপর হাট থেকে বের হয়েই দালালদের উৎপাত।
আঠারো মাইল পশু হাটের ইজারাদার রোকুনুজ্জামান মন্টু বলেন,এবার ৪১ লাখ টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিয়েছি। সাথে দিতে হয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ আয়কর এবং ৫ শতাংশ জামানত। সব মিলে প্রায় ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। এ হাটে কোনো প্রকার দালাল নেই।
তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে ৩ শতাংশ ইজারা নেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ৩ শতাংশ ইজারা নেয়া হলে এ হাটে পশু আসা কমে যাবে। সে কারণে আমরা ইজারা তুলনামূলক কম নিচ্ছি।
ডুমুরিয়া উপজেলা কর্মকর্তা সিফাত মেহনাজ বলেন, ‘আঠারো মাইল হাট নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। তবে শিগগির জাল টাকা সনাক্তকরণ মেশিনের ব্যবস্থা করা হবে।’
খুলনা জেলা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) শিকদার আক্কাস আলী জানান, বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের পর বুধবার আঠারো মাইল হাট সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় পশু বহনকারী যানবাহন থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগে ৩ দালালকে গ্রেফতার করা হয়।
ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম জানান, ডুমুরিয়ায় থানা বা কোনো ফাঁড়ি পুলিশ কোথাও কারও কাছ থেকে কোনও প্রকার অর্থগ্রহণ করছে না। তবে অভিযোগ ওঠায় পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন