শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

অধরা নোমান, কুতুব ভাগ্য কনস্টেবল তৌহিদেরও

এ মাসেই রায়হান হত্যা মামলার চার্জশিট

ফয়সাল আমীন : | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

সিলেটে রায়হান হত্যা মামলার চার্জশীট প্রদানে ২য় দফা সময় বাড়িয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আদালত প্রদত্ত সময়সীমার মধ্যে চার্জশীট প্রদানে আশাবাদী সংস্থাটিও। কিন্ত র্দীঘ ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও গ্রেফতার হয়নি হত্যা ঘটনার আলামত নষ্টকারী আব্দুল্লাহ আল নোমান। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় নোমান গ্রেফতার না হলেও শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল তদন্ত কার্যক্রম। তবে পলাতক নোমানের সহযোগী এসআই হাসান আলীকে গ্রেফতার পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রাপ্তিতে নতুন মোড় নেয় এ মামলার তদন্ত।

এছাড়া প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভ‚ঁইয়াকে পালাতে সহায়তা করেছিলেন এসআই হাসান আলী। এ অবস্থায় নোমানের সহযোগী এসআই হাসান আলীকে গত ২৯ জানুয়ারি গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয় পিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদে হাসান আলী জানায়, নগরীর গ্যালারিয়া শপিং সিটির একটি দোকান থেকে ১২০০ টাকায় ৫০০ গিগাবাইটের হার্ডডিস্ক কিনে নির্যাতন-হত্যার ভিডিও রেকর্ড হওয়া ফাঁড়ির হার্ডডিস্কটি বদলে ফেলেছিলেন নোমান। ঘটনার আগে-পরে ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৫৯ বার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে হাসান ও নোমানের মধ্যে। এমনকি প্রথমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আকবর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও গোপন করেছিলেন এসআই হাসান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ও পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন জানিয়েছিলেন, হাসানকে গ্রেফতারের পর একদিনের রিমান্ডে এনে করা হয় জিজ্ঞাসাবাদ। পরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে তাকে। এ অবস্থায় মধ্যে দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত এগিয়ে যায় বহুদূর।
পিবিআই এ মামলা তদন্তের সময় বৃদ্ধির জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মুমিনের আদালতে আবেদন করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি আবেদনের শুনানির পর ৩০ কার্যদিবস সময় বৃদ্ধিও করেন আদালত। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে চ‚ড়ান্ত হয়নি অভিযোগপত্র। পুনরায় ২য় দফার সময় বৃদ্ধির গত ২৮ মার্চ আবেদন করেন তদন্ত সংস্থা পিবিআই। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবার ২য় দফায় ৩০ দিনের সময় বাড়িয়েছেন আদালত।
পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদ উজ জামান বলেন, তদন্ত কার্যক্রম এগিয়েছে, চার্জশীটও অনেকটা প্রস্তত। তবে চার্জশীটে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, বরখাস্ত হওয়া টুআইসি এসআই হাসান আলীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হচ্ছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। চার্জশীটে আর কাদের আসামি করা হচ্ছে এ ব্যাপারে এখনই মুখ খুলতে রাজি নয় পিবিআই।
সূত্র আরও জানায়, রায়হান হত্যাকান্ডের ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ৬ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। অভিযুক্ত ৬ জন এখন কারাগারে রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস। চার্জশিটে এই ৬ জনকে আসামি করা হবে কি-না তা স্পষ্ট করেননি পিবিআই সংশ্লিষ্টরা। রায়হান হত্যাকান্ডের পর পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন ও প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াকে পালাতে সহায়তাকারী কোম্পানীগঞ্জের আবদুল্লাহ আল নোমানকে আসামী করা হবে কি-না এ বিষয়টিও পরিষ্কার নয় এখনো।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে রহস্যজনক কারণে এ মামলায় ৬ মাসেও গ্রেফতার হয়নি বন্দরবাজার পুলিশের কর্মরত তৎকালীন এএসআই কুতুবউদ্দিন। অথচ হত্যা ঘটনার রাত ৩ টায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির রাত্রিকালীন টহলরত পৃথক ২টি ডিউটি পার্টির ইনচার্জ ছিলেন এএসআই কুতুবউদ্দিন ও এএসআই আশেক এলাহি। এই ২টি টিম নগরীর কাষ্টঘরের সুলাইলালের ঘর থেকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে রায়হানকে। এএসআই কুতুব উদ্দিনের ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এখনো অন্ধকারে। মামলায় যেমন গ্রেফতার হননি কুতুব উদ্দিন, তেমনি এখনো নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, আলোচিত কনেস্টবল তৌহিদ মিয়াকে রক্ষায়ও চেষ্টা চলছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। অথচ কনেস্টবল তৌহিদ মিয়ার ফোন থেকে ফোন করে ১০ হাজার টাকা আনতে বলা হয়েছিলো মর্মে তথ্যও প্রকাশ পেয়েছিল। কৌশলে কুতুব উদ্দিনকে যেমন আড়াল করা হয়েছে তেমনি কনেস্টবল তৌহিদকে গ্রেফতার দেখানো হলেও বাদ পড়তে পারে মামলার চার্জশীটে। পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা কনেস্টবল তৌহিদের আত্মীয়, সেই জোরে তাকে শেষ রক্ষার ছক সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। সে কারণে এএসআই কুতুবের ভাগ্যে কনেস্টবল তৌহিদও পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদ উজ জামান বলেন, তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে এখনো কিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে তদন্তে যাদেরই সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে আসামি করা হবে তাদেরকে। চার্জশিট প্রন্তুত জানিয়ে পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামান বলেন, চার্জশিট দাখিলের আগে সংবাদ সম্মেলন ডেকে পুরো তদন্ত কার্যক্রম ও আসামিদের ব্যাপারে অবগত করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন