ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে যখন সারাদেশের সকল রাজনৈতিক দল বিরোধীতা করে আসছে। এর মধ্যেও বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী সব নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে ইভিএম একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে টেকসই একটি নীতিমালা করতে চায় নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি ইসির এক সভায় এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
রাজনীতি বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, আসলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আমলে কোন জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে সকল ভোট অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপক্ষভাবে করতে পারেনি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে এখনো সকল রাজনীতিক দলের মধ্যে বির্তক রয়েছে। তারপর কি ভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নামে নতুন প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্প মানে বর্তমান কমিশনের আর একটা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবসা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা হয়। পরবর্তীতে পরীক্ষামূলকভাবে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করে কমিশন। বর্তমান সিইসি শুরু থেকেই ভোটে স্বচ্ছতা আনার জন্য ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে অবস্থান নেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে ইসি।
সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ইসি’র এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ও স্কুল-কলেজের আইসিটি- তে দক্ষ শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। এছাড়া ইভিএম প্রকল্পের মাধ্যমে কেনা যন্ত্রপাতি সচল রাখতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্যও তাগিদা দেওয়া হয়। ইভিএম প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে জুলাই ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের অনুকূলে মোট ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৪৮ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৭৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ ইভিএম মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮২ হাজার ইভিএম মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। ৩৪ হাজার ইভিএম মেশিন তাদের কাছে রয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে আরও ৩৪ হাজার মেশিন ক্রয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। জুলাই ২০২০ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত একাদশ সংসদের ৪ টি আসনে উপ-নির্বাচন এবং ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে উপ-নির্বাচন ও একটি ইউনিয়নে সাধারণ নির্বাচন ও ১২১টি পৌরসভা সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল মো. কামাল উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, আমরা যতো দূর সম্ভব সর্বোচ্চ সংখ্যক নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চাই। সব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কথা বললেই তো আর হবে না। কারণ সক্ষমতারও একটা বিষয় আছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কী ধরনের চিন্তা-ভাবনা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে তো আমি মন্তব্য করতে পারবো না। এই মূহুর্তে এই বিষয়ে বলা কঠিন। একাদশ জাতীয় সংসদে ৪০ হাজারের বেশি ভোট কেন্দ্র এবং ২ লাখের বেশি বুথ ছিলো। এর সংগে আরও ৫০ শতাংশ বাড়তি ধরা হলে ৩০০ আসনে নির্বাচনের জন্য ৩ লাখের মতো ইভিএম-এর প্রয়োজন হবে। এছাড়া এসব ইভিএম পরিচালনার জন্য সক্ষম জনবলও প্রয়োজন।
কর্নেল মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ধাপে ধাপে নির্বাচনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সক্ষমতা অর্জন হচ্ছে। এখন আমাদের কাছে যে পরিমাণ ইভিএম আছে সেগুলো দিয়ে তো আর সব আসনে নির্বাচন করা যাবে না। এগুলো দিয়ে হয়তো আমরা ৩০০ আসনের মধ্যে ১০০ আসনে করতে পারবো। আর ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা পর্যায়ের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করায় দিন দিন সক্ষমতা বাড়ছে। পরবর্তী ধাপগুলোর সব নির্বাচন ইভিএম-এ করতে পারবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একবারে সবগুলোতে তো আর হবে না। তবে যতো দূর সম্ভব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বাড়ানো হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১০ সালে দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় ইভিএম প্রযুক্তির সূচনা করে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সেই ইভিএম তৈরি করে দেয়। ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটি আর সারাতে পারেনি কমিশন। এমনকি ত্রুটি হওয়ার কারণও উদ্ধার করতে পারেনি। এছাড়া বুয়েটের সংঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৬ সালে তখনকার সব মেশিন পরিত্যক্ত হিসাবে নষ্ট করে দেয়। একইসংগে নতুন ও উন্নতমানের ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান কেএম নুরুল হুদা কমিশন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ইভিএম নিচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন