শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

রূপগঞ্জে তুচ্ছ বিরোধেও অস্ত্রের মহড়া

দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক তুচ্ছ ঘটনার বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দিনে-দুপুরে দেখা যায় দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া। এ মহড়ায় তরুণ থেকে শুরু করে বয়স্করাও প্রতিপক্ষের বাড়ি ঘরে হামলা করে ভাঙচুর, লুটপাট চালায়। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কতিপয় নেতা কর্মী এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে এমন অস্ত্রের মহড়া চালায়। এতে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েই চলছে। এসব বিষয়ে মামলা হলে অভিযোগ কিংবা এজাহারে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রের কথা উল্লেখ থাকে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ওইসব অস্ত্র উদ্ধারে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের তৎপরতা কম থাকায় জনমনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সূত্র জানায়, পূর্ব শত্রæতার জেরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুস সোবহানকে কুপিয়ে জখম করে তার প্রতিপক্ষরা। গত শনিবার দিবাগত রাতে ওই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগে লেখা হয়, দেশীয় অস্ত্রসহ প্রতিপক্ষের ৭-৮ জন রাম দা, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে হামলা চালায়। বাড়ি ঘর লুট করে। এ বিষয়ে মামলা রুজু করা হয়। কিন্তু কোন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি।

একইভাবে গত সোমবার ভুলতা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামে আমপাড়া নিয়ে দুই পরিবারের বিরোধের জেরে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে একে অপরের বাড়ি ঘরে হামলা ভাঙচুর চালায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, নারী পুরুষ প্রায় সবার হাতে বড় রাম দা, ছুড়ি, বল্লম নিয়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাদের হাতে থাকা অস্ত্রের সবগুলোই অবৈধ।

রাজউকের অধীনে নির্মাণাধীন পরিকল্পিত পূর্বাচল নতুন শহর ঘিরে বিগত দুই যুগ ধরে আশপাশের ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় গড়ে ওঠছে আবাসন কোম্পানি। তারা স্থানীয়দের জমি দখলে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীদের ব্যবহার করেছেন। আর তাদের ক্ষমতার জানান দিতে জমি মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করলেই দল বেধে হামলা করে বাড়ি ঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। এ সময় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে থাকে। শুধু তাই নয়, ঠুসঠাস ককটেল ফাটিয়ে, পিস্তলের রাউন্ড রাউন্ড গুলি ছুড়ে স্থানীয়দের আতঙ্কে রেখেছে। এভাবে বহু জমিতে আবাসনের নামে বালি ফেলে দখলে নিয়েছে।

সূত্র জানায়, ওইসব বস্তা বস্তা অস্ত্র কোথায় রাখা হয় এসব বিষয়ে পুলিশ জানলেও রহস্যজনক কারণে অভিযান পরিচালনা করে না। এমনকি ওইসব অস্ত্রধারী প্রভাবশালীদের কার্যালয়ে রূপগঞ্জ থানার কিছু এসআইদের নিয়মিত আসা যাওয়া রয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, প্রভাব টিকিয়ে রাখতে উঠতি বয়সী তরুণদের হাতে দেয়া হচ্ছে ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র। এসব অস্ত্র ব্যবহারে তরুণরাই আগ্রহী বেশি। এমন এক ঘটনায় উপজেলার দাউদপুরের খৈসাইর এলাকায় একটি গার্মেন্টস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকারী স্থানীয় স্কুল পড়ুয়া তরুণরা আগ্রহবশত দেশীয় অস্ত্র হাতে ফেসবুকে পোস্ট করে। এ নিয়ে এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করে। এ বিষয়টি রূপগঞ্জ থানার অধীনে থাকা ভোলাবো তদন্ত কেন্দ্রের এসআই সানোয়ারসহ অন্য পুলিশকে জানালেও কোন সুরাহা পায়নি ওই এলাকার লোকজন।

অধরাই থেকে যায় ওই তরুণ ও তাদের দেখানো অস্ত্রগুলো।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) এইচ এম জসিম উদ্দিন বলেন, অভিযোগ ও এজাহারে অনেকেই লিখে অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। ঘটনা তদন্তের পর দেখা যায় ঘরে থাকা ব্যবহৃত দা, বটি, লাঠিসোটাই ব্যবহার হয়েছে। তবে বহু ঘটনায়ই বেআইনি অস্ত্রের ব্যবহার হয়। ওইসব অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশ অভিযুক্তের বাড়ি ঘর তল্লাশি করে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এসব বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এসএসপি- গ সার্কেল, রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার) আবির হোসেন বলেন, এ সার্কেলে আমি নতুন যোগ দিয়েছি। ফলে এখনো সব তথ্য জানা নেই। তবে এজাহারে উল্লেখিত অস্ত্রগুলো উদ্ধার চেষ্টায় পুলিশ তৎপর থাকে। সন্ত্রাসীদের লুকিয়ে রাখা অস্ত্র সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাবে অনেক সময় জব্দ করা যায় না। অস্ত্র উদ্ধারে আরো তৎপর হয়ে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন