সময়ের চাকা ঘুরে আবার আমাদের দ্বারে সমাগত হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। আমরা যারা মুসলমান, ইসলামের বিধান হিসাবে আমরা এ মাসে পালন করি সিয়ামে রমজান। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে বিশ্বের মুসলমানরা এ রোজা পালন করি। কিন্তু এনিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলি না বা এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা বা গবেষণা করতে যাই না।
আমরা সমগ্র রমজান মাস ধরে রোজা পালন করি। সিয়ামে রমজান হচ্ছে ইসলামের অবশ্য পালনীয় বিধান। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর প্রশ্নই আসে না। কিন্তু যারা মুসলমান নয়, ধর্মীয় বিধান হিসাবে সিয়ামে রমজানের গুরুত্ব নিয়ে গবেষণা করা বা গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করার কথা নয় এমনি একজন অমুসলমান গবেষক যখন রোজার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন, তখন তার তাৎপর্যই হয়ে পড়ে আলাদা। আজ একজন ব্যক্তির কথা বলবো, যিনি মুসলমান নন এবং সাধারণ মানুষও নন, অথচ তিনি রমজানের রোজার গুরুত্ব নিয়ে এমন কিছু বলেছেন, যা গণমাধ্যমে সাড়া জাগিয়েছে। তিনি জাপানের একজন গবেষক। তাঁর নাম ওসিনারী ওসুকি। তিনি বলেছেন, রোজা রাখলে ক্যান্সারের জীবাণু মারা যায়। একজন জাপানী গবেষক বললেই তাঁর গুরুত্ব শেষ হয়ে যায় না, তিনি একজন নোবেল বিজয়ী গবেষকও।
সিয়ামে রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র হাদীসে কুদসীতে আল্লাহতায়ালা বলেন: বান্দা যখন সিয়ামে রমজান পালন করে তা করে শুধু আমার জন্য। কারণ, অন্যান্য সব ইবাদতের চাইতে সিয়ামে রমজানের গুরুত্ব ভিন্ন। অন্যান্য অবশ্য পালনীয় ইবাদত পালনে অন্যরা দেখে তথা সাক্ষী থাকে। কিন্তু সিয়ামে রমজান এমন একটি ইবাদত, যার সাক্ষী একমাত্র আমি। এ কারণে এর সওয়াব আমি নিজে দেই।
একথার তাৎপর্য হলো। সালাত, জাকাত, হজ প্রভৃতি ইবাদত পালন করা হয় প্রকাশ্যে, যার সাক্ষী থাকে অন্যান্য মানুষ। কিন্তু সিয়ামে রমজানের বৈশিষ্ট্যই হলো এর সাথে আর কারো সাক্ষী থাকা সম্ভব নয়। এ কারণে এ ইবাদতের পুরস্কার দান করেন আল্লাহ স্বয়ং।
একথার তাৎপর্য হলো, সালাত বা নামাজ একা একা পালন করা যায় না। সালাত আদায় করা হয় অন্যান্য মানুষদের সামনে। যত অধিক লোক একত্রে সালাত আদায় করবে তত বেশি সওয়াব। ইসলামের আরেকটি অত্যাবশ্যকীয় বিধান জাকাত তো একা একা পালনের কথা কল্পনাই করা যায় না। কারণ, জাকাতদাতা ও জাকাতগ্রহিতার উপস্থিতি ছাড়া ও অংশগ্রহণ ছাড়া জাকাত আদায় সম্ভব নয়। ইসলামের অপর একটি অত্যাবশ্যকীয় বিধানের নাম হজ। এই হজ পালন করে থাকে দুনিয়ার সকল দেশের মুসলমান এক সাথে। এ আলোচনার নিরিখে বলা যায়, ইসলামের অবশ্যপালনীয় বিধানসমূহের মধ্যে একমাত্র সিয়ামে রমজানই একা একা পালন করা হয়।
অবশ্য আমরা অনেক সময় বাস্তব ক্ষেত্রে দেখতে পাই, অনেকেই সিয়ামে রমজান পালনের নামে সিয়াম পালনের মহড়া দেই। রোজাদারদের ভোজ দেয়ার নামে ইফতার পার্টি বা ইফতার মাহফিলের আয়োজন করি। এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমরা পরোক্ষভাবে দেখাতে চাই যে, আমরা সিয়ামে রমজান পালন করি। অথচ, আমরা রোজা পালন করি বা না করি মহান সর্বদ্রষ্টা সর্বজ্ঞ আল্লাহতায়ালার তা অজানা থাকার কথা নয়। মনে রাখতে হবে, আল্লাহতায়ালাকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব নয়। এ ব্যর্থ চেষ্টা যেন আমরা না করি। আসুন, সততা, একনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সিয়ামে রমজান পালন করি এবং আল্লাহার প্রতিশ্রুত পুরস্কার লাভের যোগ্যতা অর্জন করি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন