মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

দৈনিক হাতিয়ে নিচ্ছে ২০ হাজার টাকা বাগেরহাট কারাগারে অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত

প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা : বাগেরহাট জেলা কারাগার এখন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সরকার যেখানে কারাগার আধুনিকতার ছোঁয়ায় শোধন করার চেষ্টা করছে সেই মুহূর্তে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার অসৎ উদেশ্যের কারণে তা ভেস্তে যাচ্ছে। ৪ বছর আগে বাগেরহাট কারাগারে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এক কারারক্ষী চাকরিচ্যুত হয়েছেন। তার পরও থেমে নেই কতিপয় কর্মকর্তার অপকর্ম। সেখানে অর্থ ছাড়া যেন কোনো কাজই বৃথা। অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
কারাগারের কয়েকজন বন্দির সাথে কথা বলে জানা গেছে, কারাগার মানেই একটি বন্দি জীবন। নানা সুবিধা-অসুবিধার মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় এখানে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ অনেক সময় কারা অভ্যন্তরে এ ধরনের ঘটনাও কম নয়। তবে কেউ জানে না একজন বন্দীর জন্য সরকার দৈনিক কী পরিমাণ খাবারের বরাদ্দ দিয়েছে। বাজার দরে কারা অভ্যন্তরে ক্যান্টিন চালু করা হলেও চড়া দামে কিনতে হয় পণ্য সামগ্রী। প্রত্যেকটি দ্রব্যের মূল্যের ২-৩ গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হয়। আর এই অর্থ কয়েকজন ভাগবাটোয়ারা করে নেয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারারক্ষী জানান।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কারাগারের দুই প্রধান কারারক্ষী দেলোয়ার হোসেন ও শরীফুল ইসলাম প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা অবৈধ পন্থায় আয় করার লক্ষ্যে নানা কৌশল ব্যবহার করছেন। তিন বছরের বেশি একই স্থানে চাকরি করার সুবাদে এই দুই প্রধান কারারক্ষী ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করে চলছেন। বদলীর আদেশ আসলেও বিভিন্ন উপায় ম্যানেজ করে বহাল তবিয়াতে রয়েছেন। তারা দুজন ৮শ বর্গফুটের কোয়ার্টারে থাকলেও দুই বছরের বেশি সময় ধরে ভাড়া কর্তন করছেন না। ডেপুটি জেলারের কক্ষে বন্দীদের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থায় জনপ্রতি ২-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্য কর্মকর্তাদের সহয়তায় মসজিদের ছাদ তৈরির নামে সাক্ষাৎকারীদের কাছ থেকে পাওয়া দান বাক্সের অর্থ অর্ধেকেরও কম টাকা জমা রেখে বাকি টাকা লোপাট করছে। আরও জানা গেছে ১৬টি কোয়র্টারের প্রতিটিতে একটি করে পরিবারের বসবাসের নিয়ম থাকলেও সেখানে সাবলেট দিয়ে ২টি পরিবার বসবাস করছে। কারাগারে কোনো প্রকার অনিয়ম যেন না হয় সে বিষয়টি দেখভাল করার জন্য শামীম আক্তার নামে এক সিআইডি রক্ষী। তিনি রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করছেন। ভাগবাটোয়রায় তিনিও অংশীদার। এর নেপথ্যে রয়েছেন জেল সুপার ও জেলার। চাহিদামতো টাকা দিলে কারাগারের মধ্যে রান্না করে খাওয়া যাবে, মিলবে মাদকদ্রব্য, থাকা যাবে রাজার হালে। গুরুতর অসুস্থ না হয়েও কারাগারের বাইরে হাসপাতালের কেবিনে থাকার সুযোগ মিলবে। যাওয়া-আসাসহ কোর্ট হাজতে বসে মোবাইল ফোনে কথা যাবে। আর যেসব হাজতী ও কয়েদীরা টাকা দিতে পারবে না তারা যতোই অসুস্থ হোক না কেন, তাদের ন্যূনতম চিকিৎসা মিলবে না। বাগেরহাট জেলা কারাগার চত্বর ও কোর্ট হাজতখানা ঘুরে হাজতী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বাহিরদীয়া গ্রামের আব্দুল গহর শেখ (৮০) কারাগারের তার স্বজনদের সাথে দেখা করার বিষয়ে বলেন, দুপুরে ৩ জনের সাথে ২০ মিনিট কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্য করারক্ষীদের দিতে হয়েছে ৬০০ টাকা। একেক প্যাকেট সিগারেটের জন্য বাড়তি দিতে হয়েছে ৫০ টাকা করে। মাসে ২ হাজার টাকা দিলে একেকজন স্বজনদের ভালো খাবার ও থাকার জায়গা দেয়া হবে বলেও কারারক্ষীরা তাকে জানিয়েছে। এমনই অভিযোগ করলেন, কারাগারে আটক স্বজনদের দেখতে আসা পিরোজপুর শহরের মাছিমপুর সড়কের গৃহবধূ আকলিমা বেগম, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শিবনগর গ্রামের নজরুল ইসলাম, যাত্রাপর এলাকার তহমিনা আক্তার, মোড়েলগঞ্জের নিমানবাড়িয়া এলাকার একরাম হোসেনের।
বাগেরহাট সহকারী আইনজীবী সমিতির কয়েক জন নেতার দাবী প্রতিটি ওকালত নামায় আসামীদের স্বাক্ষর আনার জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হয়। এই অনিয়ম বন্ধের দাবী জানান তারা। বাগেরহাট জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. একে আজাদ ফিরোজ টিপু বলেন, বাগেরহাট কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি জেলা আইন শৃঙ্খলা ও জেলা লিগ্যাল এইড এর মাসিক সভায় একাধিকবার উত্থাপন করা হয়েছে। বাগেরহাট জেলা কারাগারের জেলার মোস্তফা কামাল কারাগারের সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ২০০৮ সালে চালু হওয়া এই কারাগারের ধারণক্ষমতা চারশত জনের হলেও বর্তমানে গড়ে পাঁচশত জন হাজতী ও কয়েদী থাকছে। কারাগারে চিকিৎসার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের অসুস্থ বন্দীদের নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বাগেরহাট কারাগারের সুপার গোলাম দোস্তগীর অনিয়মের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবী করে জানান, আগের তুলনায় কারাগার অনেক উন্নত হয়েছে। কারা অভ্যন্তরে বন্দীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণসহ বিনোদনের সব রকমের ব্যবস্থা রয়েছে। এর বেশি কিছু তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন