যশোর শহরের রায়পাড়ার বাসিন্দা হেলেনা পারভীন ও সুফিয়া বেগম। অসচ্ছল পবিরারে কিছুটা আলো আশায় এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। ওই টাকা কাজে লাগিয়ে কিছু দিন ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু হঠাৎ লকডাউনের থেমে গেছে জীবিকা। থমকে আছে তাদের অর্থনীতির চাকা। ফলে বর্তমানে দৈনিক আহারের ব্যবস্থা যেখানে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে, সেখানে এনজিও কিস্তি শোধ করা তাদের পক্ষে প্রায়ই অসম্ভব। তবে তা সত্তে¡ এনজিও ঋণের কিস্তি আদায়ে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। কোথাও কিস্তির টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এনজিও কর্মীরা অপমানজনক আচরণ করছেন। একই অভিযোগ করে জাগরণী চক্র থেকে ঋণ নেয়া চাঁচড়ার দারোগার বাড়ির মোড় এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক জানান, এমনিতেই আমরা বিপদে তার উপর মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ। এমন অভিযোগ শুধু যশোর নয়, খুলনা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্নস্থানের।
নন গভর্মেন্ট অরগানাইজেশন (এনজিও) সরকারের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বহুমুখী কর্মতৎপরতা করে থাকে। কিন্তু এবারের বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনাভাইরাসের মহাসঙ্কটে এনজিওগুলো উল্লেখযোগ্য তৎপরতাবনেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। উপরন্তু বিভিন্নস্থানে ক্রেডিট প্রোগ্রামের অধিকাংশ এনজিও কিস্তি আদায়ে ঋণগ্রস্তদের চাপ সৃষ্টিতে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের প্রশ্ন, এনজিওগুলো দেশের মহাসঙ্কটে চুপচাপ বসে আছে এটি দুঃখজনক। এদের ব্যাপারে এই মুহূর্তে সরকারি একটা নির্দেশনা জরুরি।
যশোর শহরের ঘোপ এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কবিরুল ইসলাম, ঝিনাইদহের আরাপপুরের আব্দুর রহিম. খুলনার নিউ মার্কেট এলাকা তবারক হোনেসহ বেশ কয়েকজন এনজিও’র ঋণ গ্রহিতা বললেন হৈ চৈ হবার পর কিছুদিন কিস্তির টাকা আদায় বন্ধ করেছিল এনজিওগুলো। আবার চাপ সৃষ্টি করছে। তাদের প্রশ্ন মানুষের এই মহাবিপদে অধিকাংশ এনজিও’র কোনরূপ ভ‚মিকা নেই কেন? ঘরবন্দি গরীব মানুষের সাহায্য সহযোগিতা বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেও তাদের তৎপরতা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় এনজিও’র সংখ্যা ৮হাজার ৩শ’ ৩৬টি। যার সিংহভাগই সুদের কারবার চালায়। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বেশ কয়েকজন বললেন, গ্রামীণ দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলের দোহাই দিয়ে এনজিও’র ক্রেডিট প্রোগ্রামের নামে প্রায় সব গ্রামেই চলে ফ্রিস্টাইলে সুদের কারবার। এতে গরীব ও অসহায় মানুষ স্বনির্ভরতার বদলে হয় সর্বস্বান্ত। অথচ অথিকাংশ ক্রেডিট প্রোগ্রামের এনজিও মালিকরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়।
সমাজসেবা অধিদপ্তর এনজিওগুলোর রেজিস্ট্রেশন দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাইক্রোক্রেডিট অথরিটি থেকে লাইসেন্স নিয়ে ক্রেডিট প্রোগ্রাম করে থাকে এনজিওগুলো। তারা পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) থেকে নামমাত্র হারে সুদে ক্রেডিট প্রোগ্রামের অর্থ সংগ্রহ করে এলাকাভিত্তিক ঋণ দেয়। কিন্তু আদায় করে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ যশোর মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের নাসিম রেজা বললেন, গ্রামীণ দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলের দোহাই দিয়ে যেসব এনজিও বছরের পর বছর সুদের কারবার চালায়, তারা অন্তত দেশের মহাসঙ্কটে এগিয়ে আসা জরুরি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে এনজিওগুলোর মধ্যে আরআরএফ, জাগরণী চক্র, শিশু নিলয়, শাপলা, লাইফ, সমাধান, বাঁচতে শেখা, বন্ধু কল্যাণ ফাউনেশন, সুশীলন, প্রত্যাশা ও সৃজনীসহ শতাধিক এনজিও’র মাইক্রেডিট অথরিটির লাইসেন্সধারী।
গ্রাহকদের অভিযোগ, এনজিও’র কর্মীরা বাড়ির উপর এসে কিস্তির জন্য বসে থাকছেন। জোর করে চাপ সৃষ্টি ছাড়াও। কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে অপমানসূচক কথাবার্তাও বলছে। যশোর উপশহর এলাকার বাসিন্দা হোসনে আরা বেগম জানান, উদ্দীপন সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি এনজিও ঋণগ্রাহক তিনি। বরাবরই ঠিকভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করে আসছেন। কিন্তু লকাডাউনের মধ্যে তাদের পারিবারিক ব্যবসায় বন্ধ রয়েছে। যার জন্য কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। কিন্তু লকডাউনের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা শুনতে চাইছে না এনজিও কর্মীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন