কক্সবাজারের রামুতে নদীর বালি নদীতে রেখেই বাঁকখালী নদীর ড্রেজিং চলছে। উপজেলার হাইটুপি, গাউচ্ছাপাড়া, রাজারকুল আতিক্কাবিবির ঘাট এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে এ অভিনব ড্রেজিং কার্য়ক্রম। নদী থেকে স্কেভেটর দিয়ে বালি তুলে সেই বালি রাখা হচ্ছে নদীর বুকেই। আবার সেই বালি নিয়ে যাওয়ার জন্য নদীর তলদেশ ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে ট্রাক চলাচলের রাস্তা। এ অবস্থায় বর্ষা ঘনিয়ে আসায় ড্রেজিং-এর সিংহভাগ বালি নদীতেই তলিয়ে যাবে। এমন আশঙ্কার কথা বললেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রামু শাখার সভাপতিও মাস্টার মো. আলম।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, নদীটির প্রায় সাড়ে ২৮ কিলোমিটার ড্রেজিং-এর মধ্যে প্রায় ২৫ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। বর্ষার আগেই বাকি কাজ শেষ হবে এবং এসব বালি সরানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প এটি। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দুই উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের ১৯ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। বন্যা থেকে রক্ষা পাবে রামু সদরের ৩ লাখ মানুষ। পাশাপাশি নদী ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পাবে অন্তত ২ হাজার পরিবার। এদিকে এমন পরিস্থিতিতে চলমান এ প্রকল্পের রামুর বিভিন্ন অংশে কাজ পরিদর্শন শেষে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নেতৃবৃন্দসহ সচেতন মহল।
নদী ড্রেজিং মানে, নদী থেকে বালু বা মাটিগুলো তুলে নিরাপদ দুরত্বে রাখা হবে, আমরা এটাই বুঝি। কিন্তু বাঁকখালীর এই খনন কাজ দেখে আমরা বিষ্মিত হয়েছি। বললেন মাস্টার মো. আলম। তিনি আরো বলেন, নদী থেকে বালি উত্তোলন করে নদীতেই রাখা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সেই বালি নিয়ে যাওয়ার জন্য আবার উল্টো নদীর তলদেশ ভরাট করে রাস্তাও করা হয়েছে। কিন্তু যেভাবে ধীর গতিতে বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমরা আশঙ্কা করছি, বর্ষার আগে এসব বালুর সিংহভাগ নদীতেই চলে যাবে। তাই এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
কক্সবাজার বেতারের সংগীত প্রযোজক, সাংস্কৃতিক সংগঠক মো. বশিরুল ইসলাম বলেন, বাঁকখালী নদী ড্রেজিং এটি রামু-কক্সবাজারের মানুষের জন্য দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের মত। কিন্তু ড্রেজিং এর কাজটি যথাযতভাবে না হলে সরকারের মহৎ উদ্যোগের সুফল পাবেনা জেলাবাসী। তিনি আরো বলেন, শুধু ড্রেজিং-এ অনিয়ম নয়, এসব বালি নিয়েও নানা অনিয়ম চলছে। কিন্তু এসবে আমাদের মাথা ব্যাথা নয়, আমরা চাই ড্রেজিং এবং বাঁধের কাজগুলো যথাযথভাবে হউক। কারণ এখানে লাখ লাখ মানুষের স্বার্থ জড়িত। অধ্যাপক নীলোৎপল বড়–য়া জানান, বাঁকখালী নদী ভরাটের কারণে বন্যাসহ নানা ভোগান্তি আমাদের পোহাতে হয়। কিন্তু যেভাবে কাজ চলছে তা কতটুকু কার্যকর কাজ হবে তা বোধগম্য নয়। বর্ষার আগে তা সম্পন্ন করা যাবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, বাঁকখালী নদী ড্রেজিং ও খনন করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নৌ-চলাচলের পথ সুগম করা, দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে সাগরের নৌকা-ট্রলার এর নিরাপদ অবস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পোতাশ্রয় হিসাবে বাঁকখালী নদী ব্যবহার করা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য ২০১৬ সালে প্রায় ১৯৫ কোটি ৫৪৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প গ্রহণ করে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ওয়েস্টান ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
ওয়েস্টান ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা মো. সরওয়ার নামের ব্যক্তি জানান, নদীর দুইপাশে জায়গা সঙ্কটের কারণে বালিগুলো নদীর বুকে রাখা হয়েছে। আগামী একমাসের মধ্যে সব বালি তুলে নেয়া হবে এবং পিকআপ চলাচলের জন্য ভরাট করা মাটিও তুলে ফেলা হবে। হাইটুপী অংশে পাশে ৪০ মিটার ড্রেজিংয়ের কথা থাকলেও দুইপাশে জায়গা না থাকায় তা করা যাচ্ছেনা। এদিকে সরকারের এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তদারকিতে উপজেলা প্রশাসনের উদাসীনতা আছে বলেও মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন নেতৃবৃন্দ। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, এ প্রকল্পটি জেলা থেকে তদারকি করা হয়। এখানে উপজেলা প্রশাসনের কোনো এখতিয়ার নেই। কেউ অভিযোগ করলে তা আমরা দেখতে পারি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, এ প্রকল্পে সাড়ে ২৮ কিলোমিটার ড্রেজিং-এর কাজ ছিল, সেখান থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ২৫ কিলোমিটার ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে। নদীর দুইপাশে পাহাড় থাকাতে কয়েক কিলোমিটার কাজ করা যাবে না।
খুব শীঘ্রই বালি বেচার জন্য প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। ইতিমধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে, শুধুমাত্র রেজুলেশনে সই বাকি আছে। এটি শেষ হলে আগামী দুয়েক দিনের মধ্যেই সেখান থেকে বালি সরানোর কাজ শুরু করা হবে। তবে নদীর দুইপাশে প্রয়োজনমত জায়গা না থাকায় সিডিউল অনুযায়ী কাজ হতে পারছেনা বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন