শত শ্রমিকের সমান কাজ করছে একটি রিপার মেশিন। করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ম্যাজিকের মতো কাজ করে যাচ্ছে সিলেটের হাওরে বরাদ্দকৃত এ মেশিনগুলো। কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ২৯৫টি ও ১৭৬ টি রিপার মেশিন বরাদ্দ করা হয়েছে ঘরে তুলেছে বোরো ধান। এর মধ্যে কৃষকদের মধ্যে ২৫৭টি হারভেস্টার মেশিন ও ১০৭টি রিপার মেশিন বিতরণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। চলমান রয়েছে বিতরণ কার্যক্রমও। প্রতিদিন একটি মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে সম্ভব হচ্ছে প্রায় হেক্টর জমির। এছাড়া প্রতিদিন ৩ লাখ ৬৭ হাজার ১শ ৪৭ জন শ্রমিক ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে সিলেট অঞ্চলে। এর মধ্যে নিয়মিত শ্রমিক প্রায় ৩ লাখ, অনিয়মিত শ্রমিক প্রায় ৫০ হাজার, ১৯ হাজার শ্রমিক নিয়ে আসা হয়েছে বিশেষত উত্তরবঙ্গের।
এখন পর্যন্ত আবাদকৃত বোরো ধান কাটা হয়েছে মাত্র ৪৬ ভাগ। এর মধ্যে হাওর এলাকায় ৬০ শতাংশ, বোরো উপযোগী সাধারণ কৃষি জমি (উঁচু এলাকার) ২২ শতাংশ। আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুক‚ল থাকলে চলতি মাসেই ধান কাটা শেষ হবে হাওর এলাকার ৯০ শতাংশ জমির এছাড়া বোরো উপযোগী সাধারণ কৃষি জমির (উঁচু এলাকার) ধান কাটা সম্ভব আগামী মে মাসের মধ্যেই। ধান কাটা ও কৃষকের গোলায় সফলভাবে উত্তোলনের উপর নির্ভর করছে সিলেট বিভাগে মোট আবাদের বিপরীতে ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ, সেই লক্ষ্যেই সার্বিক প্রস্তুতি ও বাস্তবিক সহায়তা নিয়ে মাঠে তৎপর রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা, এমন তথ্যই দৃড়তার সাথে জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরে সিলেটের হাওরাঞ্চলে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে বোরো ধান। এছাড়া সাধারণ কৃষি জমি (উঁচু এলাকা) ২ লাখ ৮ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে করা হয়েছে বোরা ধানের আবাদ। সেই হিসেবে এ বছর বোরো ধান আবাদের জমির পরিমান ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৮ হেক্টর। আবাদকৃত এ ধানের বিপরীতে উৎপাদিত চালের পরিমান নির্ধারন করা হয়েছে ১৯ লক্ষ ৩৭ হাজার ৯৭৮ মেটিক টন। চালের সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ত্বরান্বিত হয়েছে এ মৌসুমে বোরো ধানের ফলনে। সেই সোনালী ধানের ফলন ঘরে তুলতে কৃষকদের পাশে মাঠে রয়েছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে গতকাল (রোববার) পর্যন্ত হাওর এলাকায় সম্পন্ন হয়েছে ৬৪ শতাংশ ধান কাটা। সেই হিসেবে আবাদকৃত জমির মধ্যে ধান কর্তন সম্ভব হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮ শত ৬৫ হেক্টর জমির। অপরদিকে, এছাড়া বোরো উপযোগী সাধারণ কৃষি জমির (উঁচু এলাকার) ধান কর্তন হয়েছে ২২ শতাংশ। সেই হিসেবে ধান কাটা শেষ হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৪ হেক্টর জমির।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী বলেছেন, আবহাওয়া আগামী ১০ দিন অনুক‚ল থাকলে পুরো ধান কেটে ঘরে নিতে পারবে কৃষক। এবার আশাতীতভাবে ফলন ভালো হয়েছে বোরো ধানের। তবে দ্রুত ফসল তোলার তাগিদ দিচ্ছেন এ শীর্ষ কর্মকর্তা। এছাড়া তিনি বলেন, বোরো ধান কাটতে সরকারী উদ্যোগে ৫০/৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে দিয়ে সিলেট অঞ্চলে কৃষকদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৯৫টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ১৭৬ টি রিপার মেশিন। এতে করে কমে গেছে শ্রমিক নির্ভরতা কৃষকদের। প্রতিবছর শ্রমিক সংকটে হাঁসফাঁস করতে হতো কৃষকদের। এবছর সেই সংকটে ম্যাজিকের মতো কাজ করছে উন্নত যন্ত্র। যন্ত্রের ব্যবহার কৃষকদের মধ্যে নতুন এক অভিজ্ঞতা ও সৃষ্টি হয়েছে যন্ত্র ব্যবহার উপযোগী মানসিকতার। এতে করে মনোবলে হয়ে উঠছেন শক্তিশালী কৃষিকরা।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো: মশিউর রহমান এনডিসি বলেন, হাওরের এবার শ্রমিক সংকট নেই। বরাদ্দকৃত মেশিনগুলোও ধান কাটতে ও মাড়াইয়ে কৃষকদের বিরাট সহায়ক হয়ে উঠেছে। এছাড়া সরকারী নির্দেশনা অনুযাীয় উত্তরবঙ্গ সহ দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে শ্রমিক। প্রয়োজনে আরো আনা হবে। শ্রমিক সংকটের জন্য কোন ব্যাঘাত হবে না ধান কাটায়। সম্ভাব্য সময়ের মধ্যে কৃষকের গোলায় উঠে যাবে ধান।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র মতে, হাওর ভূক্ত ৭টি জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর। এর মধ্যে শুধু মাত্র হাওরে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর বোরো ধান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন