শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

আরমানিটোলার কেমিক্যাল গুদামে অগ্নিকান্ড মালপত্র নিতে পারবেন

অগ্নিদগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু ভবনের ভাড়াটিয়ারা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

পুরান ঢাকার আরমানিটোলার কেমিক্যাল গুদামে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হাজী মুসা ম্যানশন ভবনটি ঘটনার পর থেকে সিলগালা করে রেখেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি)। এতে ওই ভবনের ১৮টি পরিবারের সব মালামাল ভেতরে থাকলেও পরিবারের সদস্যরা বাইরে অবস্থান করছেন। আটকে থাকা এসব মালামাল আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ভবনের বাসিন্দাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

অন্যদিকে ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সাফায়েত হোসেন (২৮) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট থাকাবস্থায় গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে হাজী মুসা ম্যানশনের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৫জনের মৃত্যু হয়েছে। একই হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন সাফায়েতের মা লায়লা বেগম। ছেলের মৃত্যুর খবর শোনে আর হাসপাতালে থাকতে চাননি। চিকিৎসকদের বলে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন তিনি। এদিকে আগুনের ঘটনায় আহত সাফায়েতের বাবা দেলোয়ার হোসেন, ভাই শাকির হোসেন, স্ত্রী মিলি আক্তার ও দুই বছরের মেয়ে ইয়াশফাও হাসপাতালে থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন।

এদিকে রোববার সকাল থেকেই আরমানিটোলার আরমানিয়ান স্ট্রিটের হাজী মুসা ম্যানসন ভবনের সামনে উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা গেছে। আগের তুলনায় সেখানে পুলিশি নিরাপত্তারও কিছুটা ঢিলেঢালা রয়েছে। ভবনের সামনে পাহায়রত কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। এছাড়া ভাড়াটিয়াদের অনেকেই ভবনের কলাপসিবল গেটের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ভেতরের পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করছেন। অনেকে ভবনের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকছেন। গতকাল ডিএসসিসি ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মো. আলমগীর বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হাজী মুসা ম্যানশন ভবন আমার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। আমরা ভবনের প্রতিটি ভাড়াটিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এরই মধ্যে তারা তাদের বাসায় থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র (টাকাপয়সা স্বর্ণালঙ্কার, জমির দলিল) অনেকেই তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে নিয়ে গেছেন। সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চল ৪-এর কর্মকর্তা হায়দার আলী, লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারসহ স্থানীয়ে ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো প্রতিটি ভাড়াটিয়াকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিধি পাঠিয়েও তাদের মালামালগুলো নিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান তিনি। ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরো বলেন, ভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চাওয়া হবে। বিশেষজ্ঞদের পরিদর্শন করার পর তাদের দেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে ভবনের বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বংশাল থানার ওসি মো. শাহিন ফকির বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনরের নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। মামলার তদন্ত চলছে।
গত শুক্রবার ২৩ এপ্রিল ভোররাত সোয়া ৩টার দিকে আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানসনে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। সংবাদ পেয়ে পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টা চালিয়ে সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।

জানা গেছে, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ হয়ে বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে বাসিন্দারা আটকে পড়েন। ভবনটিতে ১৮টি পরিবার বসবাস করতেন। অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে প্রথমে আশপাশের ভবন থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়। আটকে পড়া অনেককেই মুমুর্ষূ অবস্থায় গ্রিল কেটে, জানালা ভেঙে, ছাদের দরজা ভেঙে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ভবনের নিচে কেমিক্যাল গুদাম থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। আরো ১৬জন বর্তমানে শেখ হাসিনা বার্ন অ্য্ন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে, কেউ এখনো আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্য্ন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন