শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারে ভূমিকা জোরদার করুন

এসকাপের ৭৭তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ-এসকেপের ৭৭তম অধিবেশনে চার দফা প্রস্তাব পেশ করে কোভিড-১৯ মহামারী থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারে উন্নত বিশ্ব ও উন্নয়ন অংশীদারদের ভূমিকা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল ৭৭তম বার্ষিক জাতিসংঘ-এসকেপ অধিবেশনে প্রচারিত তার ধারণকৃত বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে সার্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পন্থা, দক্ষ নীতি এবং কৌশল গ্রহনের আহ্বান জানান। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসকেপ) তিন দিনের গতকাল ৭৭তম অধিবেশন এশিয়া ও প্রশাসন্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে সংকট থেকে আরও ভালোভাবে উত্তোরণ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যের ওপর ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুরু হয়েছে।

শেখ হাসিনা তার বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে জোর পূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে টেকসই প্রত্যাবাসনের দিকে মনোনিবেশ এবং যৌথ সমৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি প্রথম প্রস্তাবে বলেন, উন্নত বিশ্ব, উন্নয়ন অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএফএস) কোভিড মহামারী থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসা উচিত। দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন পদ্ধতি হওয়া উচিত যে কোনও সংকট থেকে আরও ভালোভাবে উত্তেরণের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক এবং পরিবেশ বান্ধব। তৃতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচিত একটি শক্তিশালী ও সার্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য দক্ষ নীতি ও কৌশল গ্রহণ করা।

চতুর্থ প্রস্তাবে তিনি বলেন, বাণিজ্য, পরিবহন, জ্বালানি ও আইসিটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, মিয়ানমার থেকে ১১ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সমাধানের জন্য এই বিষয়ে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে বিধ্বস্ত করেছে। প্রায় ২ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে এবং প্রতিদিন আরও হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। মহামারী অনেক মানুষকে আরও দরিদ্র করে তুলেছে এবং আরও অনেকে দারিদ্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ এর আক্রমণ মোকাবিলায় তার সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি, চাকরি ধরে রাখা এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের জিডিপির প্রায় ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রায় ১৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। আমাদের সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কোভিড-১৯ থেকে পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশকে অবাধ ও টেকসই এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত করা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার দিকে গতিপথ নির্ধারণের কৌশল অন্তর্ভুক্ত ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার পরিবেশ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে অর্থায়নে পরিচালিত কর্মসূচিগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতাকে পারস্পারিক সমৃদ্ধি অর্জনে সর্বাধিক টেকসই উপায় বলে মনে করে। আমরা সার্ক (সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন), বিমসটেক ( বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনোমিক কোঅপারেশন), বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল), বিসিআইএম-ইসি (বাংলাদেশ, চায়না, ইন্ডিয়া ও মিয়ানমার ইকোনোমিক কোরিডোর) এবং ট্রিলেটারেল হাইওয়ের সাথে আমরা যুক্ত আছি।

শেখ হাসিনা বলেন, সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের সাথে অংশিদারিত্বের মাধ্যমে সহায়তা করছে। আমরা ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ এবং এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের ইএসসিএপি-এর উদ্যোগের একনিষ্ঠ সমর্থক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আন্তঃসীমান্ত কাগজ-বিহীন বাণিজ্য, এশিয়া-প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তি, পিপিপি নেটওয়ার্কিং ও নবায়নযোগ্য জ্বালানীসহ ইউএন-ইএসসিএপি-এর অন্যান্য উদ্যোগের সাথেও সক্রিয়ভাবে জড়িত আছে।

তিনি বলেন, আমরা গ্লোবাল কম্প্যাক্ট ফর সেফ, অর্ডারলি অ্যান্ড রেগুলার মাইগ্রেশন অর্জনে অঙ্গীকারাবন্ধ। এসকাপ ইউনাইটেড নেশনস ইকোনোমিক অ্যান্ড সাশাল কাউন্সিলের এখতিয়ারভুক্ত পাঁচটি আঞ্চলিক কমিশনের অন্যতম। এই কমিশন ৫৩ সদস্য ও ৯ অ্যাসোসিয়েট সদস্য নিয়ে গঠিত। সদস্যদের অধিকাংশই এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো ছাড়াও ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রও কমিশনের সদস্য রাষ্ট্র।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারি সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে বিধ্বস্ত করেছে। প্রায় ২ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছেন এবং প্রতিদিন আরও হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। মহামারি অনেক মানুষকে আরও দরিদ্র করে তুলেছে এবং আরও অনেকে দারিদ্র্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আশরাফ গনি, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিইয়েভ, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো ইউদোদো, কিরিবাতির প্রেসিডেন্ট তানেতি মামুয়া, কির্গিজ রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট সাদির জাপারোভ, মার্শাল আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ডেভিড কাবুয়া, মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট বাতুলগা খালতমা, তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমোন এবং তুভালুর প্রধানমন্ত্রী ও প্যাসিফিক আইল্যান্ড ফোরামের চেয়ার কাউসেয়া নাতানো অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রেখেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
আফিফ আবদুল্লাহ ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
করোনা থেকে আত্মরক্ষায় সবচেয়ে কার্যকরী ফর্মূলা হবে অন্যায় অবিচার ও অপরাধ থেকে ফিরে আসা।
Total Reply(0)
Ferdousi Hasan ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইলো খুব সুন্দর উদ্যোগ।
Total Reply(0)
Debraj Ratan ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভব যেকোন বৈশ্বিক মহামারী বা যেকোন আন্তর্জাতিক সমস্যার সুষ্ট সমাধান ও উত্তরন।
Total Reply(0)
মোশারফ হোসেন মইদর ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অফিস ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট খোলা রাখার জন্য অনুরোধ করছি
Total Reply(0)
Mohammad Azizur Rahaman ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
এই চারটা বিষয় জাতিসংঘের মহাসচিব এর মাথায় জীবনেও আসতো না যদি না আমাদের ভালোবাসার শ্রদ্ধেয় মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী এগুলা জাতিসংঘকে না জানাতো। বিশ্ববাসী অন্তত এবার করোনা থেকে মুক্তি পাবে এই ৪ টি যুক্তির কারণে। ধন্যবাদ মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী
Total Reply(0)
Rajon Amin ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Total Reply(0)
রুবি আক্তার ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শগুলো আমলে নিলে মহামারি মোকাবেলা সহজ হবে।
Total Reply(0)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ৬:০৬ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে গভীর শ্রদ্ধা ওসালাম।দেশ ও জাতির জীবনের স্বার্থ আগে। জীবন থাকলেই জীবিকা করা যাবে। মহামারীতে আক্রান্ত গোটা পৃথিবী বাংলাদেশ তার একটি অংশমাত্র। হটাৎ ভারতের পরিস্থিতি ভয়ংকর মৃত্যুপুরী অক্সিজেন সংকট হাসপাতালে জায়গা নেই মৃত্যু আর মৃত্যু কিয়ামতের নমুনা। আমরা কতটুকু নিরাপত্তার মাঝে আছি? আমাদের এই মুহুর্তে নিরাপত্তা দেশের তিন দিকে রেড এলাড জরুরী। শক্তিশালী সিদ্ধান্ত কঠোর শৃংখলা একমাত্র বেচে থাকার ঔষধ। প্রতিদিন নানাভাবে সিদ্ধান্ত আসে কেন?ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত শৃংখলার জন্যে ভারতীয়দের কিয়ামতের নমুনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে নির্দেশনা দিন। ঈদের মার্কেটিং মানুষের আনা গোনা জীবিকার জন্যে ব‍্যবসায়ীদের প্রস্তুতি হাঠে বাজারে রাস্তায় মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানা বেপরোয়া চলাচলের বিরুদ্ধে জরুরী অবস্থা ঘোষণার মত সেনাবাহিনী দিয়ে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে নির্দেশনা দিন। পাশ্ববর্তী ভারতে মহামারীর আগুনের শিখা কিয়ামত ইয়া ইয়া নফসির মত পরিস্থিতি ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেছে ভারতজুড়ে। করোনার ভারতীয় ভ‍্যারিযেন্ট থেকে বাচতে যুদ্ধের মত শক্তিশালী নিরাপত্তা জরুরী। দেশের সমুহ যোদ্ধাদের আইন শৃংখলা বাহিনী ডাক্তার নার্স নিরাপত্তাব্যবস্থা নিযোজিত জরুরী ঘোষণা দিয়ে উৎসাহি করুন। টাকা নয় জাতীয় বীরের মর্যাদা সম্মান দিন। আপনার সুস্বাস্থ্য শারীরিক নিরাপত্তার জন্যে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া প্রার্থনা করছি। আপনি শারীরিক ভাবে ভাল থাকুন। আমিন আমিন আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন