মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনা পরীক্ষা কমেছে

গ্রামের মানুষের অনীহা অন্যদের সংক্রমিত করছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

লকডাউনের মধ্যেও রাজধানীর মার্কেট-শপিংমলগুলোতে মানুষের ভিড়। ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মানুষ সারাদেশ চষে বেড়াচ্ছে। গ্রামের হাট-বাজারে মানুষের মধ্যে এখনও মাস্ক পড়ায় অনীহা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও অনেকের মধ্যে লক্ষণ নেই। এসব লক্ষণহীন করোনা আক্রান্ত রোগী হাট-বাজারে ঘুরে বেড়ানোয় প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সচেতনতার অভাবে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছে না। কারও কারও আবার পরীক্ষা নিয়ে আছে অনীহা। আর তাই একজন থেকে অন্যজন সংক্রমিত হলেও পরীক্ষা করাচ্ছে না বা সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। আর সংক্রমণ যখন প্রায় সারাদেশে সর্বোচ্চ ঝুঁকি তৈরি করেছে, মৃত্যু প্রতিদিনই শ’ ছুঁই ছুঁই। ঠিক সেই সময় দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে গেছে। আক্রান্ত অনেকেই শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন। যে কারণে অনেকে নিজের অজান্তেই অন্যদের সংক্রমিত করছেন। এছাড়া গ্রামে করোনা টেস্ট বুথের সংখ্যাও কম তাই টেস্টের প্রতি অনীহায় করোনায় আক্রান্তদের বিষয়ে দেশের সঠিক চিত্র আসছে না। পাশাপাশি আক্রান্তদের চিহ্নিত করে পৃথকভাবে রাখা বা সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা বা মনিটিরিং করা কোন কিছুরই বলাই নেই।

অবশ্য এ পরিস্থিতে জাতীয় পরামর্শক কমিটি সরকারিভাবে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত বলে মত দিয়েছেন। পাশাপাশি বেসরকারি ল্যাবে পরীক্ষার ফি কমানোর সুপারিশ করেছেন তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকেই শনাক্তের বাইরে থাকছেন। যারা নিজেদের অজান্তেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন। তাই এই বিষয়ে দ্রæত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মত দেন তারা।

সূত্র মতে, বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এটি সবচেয়ে কম। আওয়ারওয়ার্ল্ডইনডেটা ডট ওআরজি-এর তথ্য অনুযায়ী, মালদ্বীপ প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে এক হাজার ২৭২টি নমুনা পরীক্ষা করে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে, প্রতি এক হাজারে ভুটান ৮৫৩টি, ভারত ১৯১টি, শ্রীলংকা ১১৫টি, নেপাল ৮০টি ও পাকিস্তান ৫০টি নমুনা পরীক্ষা করে।

বৈশ্বিক তথ্য অনুযায়ী, ডেনমার্ক প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে চার হাজার ১৬৬টি নমুনা পরীক্ষা করে সবার উপরে অবস্থান করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতি হাজারে চার হাজার ১৬০টি, যুক্তরাষ্ট্র এক হাজার ১৯৩টি এবং যুক্তরাজ্য দুই হাজার আটটি নমুনা পরীক্ষা করছে। চলতি বছরে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এরপর থেকে পজিটিভ ফলাফলের হার গত সপ্তাহে বেড়ে ২৩ শতাংশ হয়েছে। সারাদেশে করোনার নুমনা টেস্ট ৩৫ হাজারের উপরে ছিল। যা বর্তমানে ১৬ হাজার নিচেও নেমেছে। যদিও গতকাল ছিল ২৪ হাজারের কিছুটা বেশি।

এক সপ্তাহ ধরে কাশি, জ্বর, ডায়রিয়াসহ করোনার সব লক্ষণ নিয়ে স্বাভাবিকভাবে ঘুরছেন বরিশালের মিজানুর রহমান। লক্ষণ দেখে টেস্ট করানোর কথা বললে তিনি জানান, করোনা বলতে কিছু নেই। এটা মানুষকে হয়রানি করার জন্য হুদাই বলা হচ্ছে। তাই করোনার টেস্ট করোনার দরকার নেই বলে মনে করেন তিনি। অবশ্য লক্ষণ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আবুল হোসেন নামে একজন জানান, করোনার নমুনা পরীক্ষা কোথায় হয় তা জানিনা। কোথায় যাবো, কে কি বলবে জানিনা। তাই অসুস্থ হলেও কারো সঙ্গে বলছি না। অবশ্য তাদের মতো অনেকেরই করোনার নমুনা পরীক্ষায় অনীহা বা হয়রানির অভাবে অন্যকে সংক্রমিত করছে প্রতিদিন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, পজিটিভ ফলাফলের হার সাত থেকে ছয় শতাংশে নেমে না আসা পর্যন্ত দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে সঙ্গ-নিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় পরামর্শক কমিটি সুপারিশ করেছে, বাজারে কিটের মূল্য কমে যাওয়ায় বেসরকারিভাবে করোনা পরীক্ষার ফি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। এটি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং অধিকসংখ্যক মানুষের সক্ষমতার মধ্যে আসবে। এছাড়া সরকারিভাবে পরিচালিত নমুনা পরীক্ষার ল্যাবগুলোর ওপর চাপ কমাবে। এভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
শওকত আকবর ২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৩৫ এএম says : 0
নিম্ন আয়ের দরিদ্র হতদরিদ্র দীনমজুর কৃষক কামলা এক কথায় শ্রমজীবি কোন মানূষ আক্রান্ত হয়েছেন - গাঁও গ্রামে না থাকায় এ ধারনা জম্মেছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন