আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে ঃ মুসলমানদের প্রধান ২টি ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি ঈদ-উল-আজহা। আর মাত্র কয়েকদিন বাকি ঈদের। ঈদ সামনে রেখে মানুষের ঈদের সামগ্রী কেনাকাটায় ধুম পড়েছে বিপণী বিতান ও প্রসাধন সামগ্রীর দোকানগুলো। তেমনি ঈদের বাজারকে সামনে রেখে রাত দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন মাদারীপুরের বাটিক শিল্প কারখানার শ্রমিকরা। এ শিল্পে জড়িত থাকায় অসহায় মহিলাদের জীবনে এসেছে সচ্ছলতা। এ বাটিক কারখানার পোশাকের চাহিদা ঢাকার নামীদামী শো-রুমগুলোতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বছরের অন্য সময়গুলোতে এক প্রকার বিরামই কাটাতে হয় এসব শ্রমিকদের। এদের মধ্যে ৯৫% নারী শ্রমিক। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নাধীন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ঘেঁষে মাদারীপুর গণউন্নয়ন প্রচেষ্টা নামের একটি বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) এর উদ্যোগে গড়ে ওঠে গ্রামীণ জীবন যাত্রার চিত্র নিয়ে এ বাটিক শিল্প। দেশ ও বিদেশ খ্যাতনামা বাটিক শিল্পের কদরে সারা বছরে ভাটা থাকলে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে এ চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। বছরের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে বাটিক শিল্প সামগ্রী চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার গতিশীলতা বাড়ায়। প্রতিবছরের মতো এবার বাটিক শিল্পীরা ব্যস্ততম সময় পার করছেন।
এ ব্যাপারে সেলিনা আকতার নামে এক নারী বাটিক শ্রমিকের সাথে কথা হয় গণউন্নয়ন প্রচেষ্টাসংলগ্ন কারখানায়। তিনি জানান, স্বামীর সংসারে যখন আর্থিক অনটনের বাসা বাধে তখন গণউন্নয়ন প্রচেষ্টা কর্মকর্তা, এলাকার বাটিক শিল্প বিশেষজ্ঞ খায়রুল মর্তুজা মজুমদার-এর আহ্বানে যোগ দেই তার বাটিক শিল্পকারখানা ‘গাপ বাটিক শিল্প কারখানা’য়। কারখানা কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ছেলে-মেয়েদের পরিধেয় বস্ত্র বাটিকের পরমেট এ চাপা করি । সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এ কাজ করে কিছু বাড়তি আয় করতে পারায় সাংসারিক অভাব-অনটন কিছুটা লাঘব হচ্ছে। তবে সরকারীভাবে এর যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা হলে এ শিল্পের কদর দেশ-বিদেশে বাড়বে। পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে। দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাটিক শিল্পের শ্রমিকরা দিন রাত পরিশ্রম করলেও তাদের মজুরী নিয়ে রয়েছে নিজেদের মধ্যে অসন্তোষ। তাই এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার শিল্পের মর্যাদার দিকে নজর রাখতে হবে সকলকে । যদিও বেশীর ভাগ সময়গুলোতে অলসভাবেই আমাদেরকে সময় পার করতে হয়। মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব-এর পাশাপাশি হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব ও বিভিন্ন উপলক্ষে বাটিক শিল্প সামগ্রীর চাহিদা বেড়ে যায়। তবে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ও বাংলা নববর্ষসহ জাতীয় দিবসগুলোতে ক্রেতাদের বাটিক সামগ্রী ব্যাপক নজর কাড়ে। তাই সারা বছরের লোকসানকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে পোষাতে উল্লেখিত সময়গুলোতে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়।
নারী বাটিক শ্রমিক সেলিনা আক্তারের সাথে কথা বলার পর আশেপাশে ঘুরে দেখা গেলো এবারের ঈদের বাজারকে সামনে রেখে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাটিক কারখানায় এখন চলছে পোশাক তৈরীর ব্যস্ত সময়। নিখুঁতভাবে তৈরি করছে আঁকাবাঁকা নয়নাভিরাম চিত্রকর্ম। এখানকার বাটিক কারখানার শ্রমিকরা রাতদিন পোশাক তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অপরদিকে রাজৈরের হস্তশিল্প কারখানা গণ উন্নয়ন প্রজেক্ট (গাপ) বাটিক শিল্প কারখানা’র সমন্বয়কারী খায়রুল মুর্তজা মজুমদার বললেন, রাজৈরের অধিকাংশ বাটিক শিল্প কারখানার তৈরী পোশাকের রং কেমিকেল ছাড়াই পাকানো হয়। ফলে এতে তাদের খরচ একটু বেশি পড়লেও দিন দিন এই হস্তশিল্প পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। আড়ং, জাগরণী চক্র নাগরদোলা, সোর্সসহ দেশের বড় বড় শোরুমগুলোতে এখানকার তৈরী পোশাক সরবরাহ করা হয়। ঈদের বাজারে তাদের এখন কাজের প্রচুর চাপ রয়েছে। তার মতে, রাজৈরের হস্তশিল্প পোশাক কারখানা বাটিক’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মালিক, শ্রমিকদের প্রত্যাশা শুধু ঈদের মৌসুমেই নয় সারা বছরই এই হস্তশিল্প পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। দেশের মানুষ সারা বছরই এই পোশাক কিনে ব্যবহার করবে। এদিকে মাদারীপুর গণউন্নয়ন প্রচেষ্টা আঞ্চলিক পরিচালক খন্দকার নুরুল ইসলাম শওকত বলেন, গণউন্নয়ন প্রচেষ্টার উদ্যোগে এলাকার বাটিক শিল্প বিশেষজ্ঞ খায়রুল মর্তুজা মজুমদার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এলাকায় গড়ে ওঠে বাটিক শিল্প কারখানা এখানে সামগ্রী হিসাবে মেয়েদের শাড়ি কাপড়, সেলোয়ার কামিজ ওড়না পুরুষদের পাঞ্জাবী,শার্ট, কোর্তা, ক’টি, লুঙ্গি, ফতুয়া রুমাল সোপাটের কুসন, কভারসহ বিভিন্ন সামগ্রী ছাপা করা হয়। এলাকার অসহায় দরিদ্র ও হতদরিদ্র মেয়েদেরকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য বাটিক শিল্পকারখানা তৈরী করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন