আবু হেনা মুক্তি : ঈদুল আযহা দরজায় কড়া নাড়ছে। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে পশুর হাটগুলো। বিপনী বিতানগুলোও এখন শেষ বেলায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মশলার দোকানে ভিড়। অপরাধী চক্রও নানা কৌশলে এখন বেপরোয়া। আর আসন্ন ঈদ উৎসবকে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘœ করতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে গড়ে তোলা হয়েছে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বলয়। এছাড়া মহানগরীতে ১৬টি এবং জেলার নয়টি উপজেলায় ৫৪টি চেকপোষ্টে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একইভাবে আজ চাঁদ রাতে একই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। মহানগরীর নিরাপত্তা বলয়ের স্তর তিনটি হলো পোশাকধারী, পোশাক ছাড়া এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা (ডিবি) ও নগর বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) পুলিশ। চব্বিশ ঘন্টার নিয়মিত টহলে রয়েছে এলিট ফোর্স র্যাবের বেশ কয়েকটি টিম। পাশাপাশি তাদের গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে। এদিকে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে ঈদের প্রধান ও প্রথম জামায়াতকে ঘিরে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। যে কোন ধরনের নাশকতা এড়াতে পুলিশ হার্ডলাইনে থাকবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত থাকবে এলিট ফোর্স র্যাবের সদস্যরা।
শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো। খুলনা মহানগরীর সর্ববৃহৎ ও একমাত্র পশুর হাট জোড়াগেটে এখন গরু ছাগলে টইটুম্বুর। পুরোদমেও বেচাকেনা শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। এবার হাটে গরু আমদানী যথেষ্ট থাকলেও দামও বেশ চড়া। ক্রেতাদের আকর্ষণ মাঝারী ও ছোটগরুর দিকে। তাই বড় গরুর চেয়ে তুলনামূলক ভাবে ছোট ও মাঝারী গরুর দাম বেশি। দুই মণ ওজনের একটি গরু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৪ হাজার টাকায়, দেড় মণ ওজনের গরু বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৮ হাজার টাকায় আবার ৫ মণ ওজনের গরু বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ হাজার টাকায়। নগরীর মোড়ে মোড়ে হোগলা পাটি, গরুর গোশত কাটার খাইট্টা, গোখাদ্যর বিক্রির ধুম পড়েছে। মহানগরীর বাড় বাজারে মশলা পট্টিতে ভিড় পড়েছে মশলা ক্রেতাদের। এ অঞ্চলের মানুষের প্রিয় চুইঝাল বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে হাজার টাকা কেজিতে। ক্রেতারা জানান, গতবারের তুলনায় এবার গরম মশলার দাম বেশি। পেয়াজের দাম সহনীয় হলেও রসুনের দাম বেশি। বেড়েছে লবন ও জিরার দাম। এদিকে কোরবানির ঈদ হলেও শেষ মুহূর্তে খুলনা বিপনী বিতানগুলোতে শাড়ি কাপড় থ্রিপিচ পাঞ্জাবি শার্ট প্যান্ট ব্যাপক হারে বিক্রি হচ্ছে। মার্কেটগুলোতে হঠাৎ করেই এখন উপচে পড়া ভিড়। অপরদিকে, মৌসুমী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়েছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাসীরা ঈদ বোনাসের নামে করছে নিরব চাঁদাবাজি। আর মাদক ব্যবসায়ীরা দেদারসে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা সাপ্লাই দিচ্ছে নগরীর বিভিন্ন মাদক পয়েন্টে। তবে এসব রুখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও নানা কৌশল অবলম্বন করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদুল আযহা উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে ২ হাজার পুলিশ এবং ১৬টি চেক পোস্টের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চেক পয়েন্টে সন্দেহজনক যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশীর ব্যবস্থা করা হয়। এর বাইরেও রয়েছে সাব চেকপোস্ট। যা’ ঈদের দিন এবং তার পরের দিনও অব্যহত থাকবে। যে কারণে ওসি থেকে শুরু করে অনেক র্ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঈদের ছুটি দেয়া হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, খুলনা মহানগরীর সকল বিপনী বিতান এবং পশুর হাটে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে পোশাকধারী পুলিশ, মহিলা পুলিশ, সাদা পোশাকী পুলিশ ও গোয়েন্দা টিমের সদস্যরা ঈদের দিন পর্যন্ত নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করবে। ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকারী বা প্রতারকদের প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। টাকা-পয়সা লেনদেনের সময় গ্রহকদের টাকা ছিনতাই বা প্রতারণার হাত থেকে রক্ষার জন্য সর্বদা পোশাকধারী ও গোয়েন্দা টিম প্রস্তুত থাকবে। সাথে রয়েছে জাল টাকা সনাক্তকারী মেশিনের ব্যবস্থা। সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের নিমিত্তে মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ট্রাফিক পুলিশের ৪৫টি টিম কাজ করছে। এ ব্যাপারে কমিউনিটি পুলিশিং-এর সদস্যগণও তাদেরকে সহযোগিতা করবেন। ছিনতাইসহ অপরাধ প্রবণ ও সংবেদনশীল এলাকায় বিশেষ টহল এবং ফুট পেট্রোলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধে গোয়েন্দা শাখার বিশেষ টিম তৎপর থাকবে। কেএমপি’র পোশাকী, সাদা পোশাকী ও গোয়েন্দা শাখার সদস্যে সমন্বয়ে ২০০০ এর অধিক সদস্য ঈদের আইন-শৃঙ্খলা রার্থে সর্বদা নিয়োজিত থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন