শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

কিশোর গ্যাং কালচার রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৩ এএম

বিশ্বে করোনাভাইরাস অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকে সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সীমিত হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে অনেক ধরণের অপরাধ কমে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি প্রকার অপরাধ বাংলাদেশেও কমে আসার খবর বেরিয়েছিল গত বছর। এখন দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আগের চেয়েও প্রবল প্রাণঘাতী আকারে দেখা দিয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন করে লকডাউনের ভেতরই দেশে কিশোর অপরাধিচক্রের মাথাচাড়া দেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের মধ্যেও ঢাকা-নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া আচরণের শিকার হচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণ। প্রশাসন ও স্থানীয়ভাবে এদের নিয়ন্ত্রণ করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অবশ্য করোনাভাইস অতিমারী শুরুর আগে থেকেই কিশোর গ্যাং কালচার দেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। লকডাউনের সময় অন্য সব অপরাধ কমে গেলেও কিশোর অপরাধিদের তৎপরতা অব্যাহত থাকার পেছনে সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানাবিধ সংকটের কথা বলছেন দেশের সমাজ বিজ্ঞানী, অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এমনকি পুলিশের সর্বোচ্চ মহলের পক্ষ থেকেও কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠা ও তাদের বেপরোয়া কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

করোনাকালেও কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পেছনে অন্যতম সামাজিক কারণ হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকা, শিশু-কিশোর সন্তানদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দেয়া এবং নৈতিক শিক্ষা ও পারিবারিক নজরদারি না থাকাকে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কিশোর গ্যাং কালচারসহ দেশের সামগ্রিক দুর্নীতি ও অপরাধচিত্রের জন্য বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেও দায়ী করা হয়। এ কারণে কিশোর গ্যাং কালচারসহ এ ধরণের সমস্যা সমাধানের প্রশ্নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তীক্ষè নজরদারির পাশাপাশি পিতামাতা, অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার ভ’মিকা পূর্নমূল্যায়ণ জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষত প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত ধর্মীয়-নৈতিক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ বিষয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষকে উদাসীন ও অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে। এক সময়ের বাধ্যতামূলক ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাকে এখন সঙ্কুচিত ও ঐচ্ছিক করে তোলায় শিক্ষার্থীরা নৈতিক শিক্ষা ও পারিবারিক নিয়ন্ত্রণের থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। পিতামাতা ও অভিভাবকদের ঔদাসীন্য ও দায়িত্বহীন ভ’মিকাও এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি শিশু-কিশোরদের আসক্তি ও অপব্যবহারের কারণে পারিবারিক বন্ধন ও মূল্যবোধগুলো শিথিল হয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিশোররা একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গত কয়েক মাসে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাং সদস্যদের আভ্যন্তরীণ কোন্দল ছাড়াও বেশকিছু মানুষ হতাহত হয়েছে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা, গণমাধ্যম, সেটেলাইট টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব আমাদের চিরায়ত ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক-পারিবারিক মূল্যবোধ থেকে শিশু কিশোরদের দূরে সরিয়ে দেয়ায় মনস্তাত্তি¡কভাবে তারা সহজেই বিজাতীয় অ্যাডভেঞ্চারিজমে জড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে সন্তানদের দিকে নজর রাখা, আচরণগত পরিবর্তন এবং অশুভ সংঘের সাথে জড়িয়ে পড়ার জন্য পিতা-মাতার দায় সবচেয়ে বেশি। কিশোর গ্যাংয়ের হাতে একাধিক কিশোর নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতমাসে একটি বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশের একজন সমাজবিজ্ঞানী বলেন, দেশে আইনের শাসন না থাকার কারণেই এ ধরণের গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে। উঠতি বয়েসী বিপথগামী কিশোরদের ব্যবহার করে এক শ্রেণীর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারের প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত হওয়ার কারণে এসব কিশোর সামাজিক শাসন ও পুলিশি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় তারা ক্রমে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ জন্য যে সব এলাকায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে সেখানকার সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে কিশোর গ্যাং এর মদতদাতা বা পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আজকের কিশোররাই আগামী দিনে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব ও জাতির সমৃদ্ধির কারিগর। এদেরকে অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতেই হবে। কিশোর গ্যাং কালচারেরর নেপথ্য কারণগুলো চিহ্নিত করার সাথে সাথে এর বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। করোনাকালে গার্মেন্ট কারখানা খোলা থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা ধরণের বিরূপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে। শিশু-কিশোরদের সুশিক্ষা, সুষ্ঠু বিনোদন, খেলাধুলা, পারিবারিক ও সামাজিক মেলবন্ধনের ক্ষেত্রগুলো আরো প্রশ্বস্ত করতে হবে। স্কুল-কলেজ, মাদরাসা-মসজিদসহ ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা, জনমত ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Dadhack ৩০ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫৯ পিএম says : 0
Only Qurranic rule can prevent all these gang culture. In Islam prevention is better than cure. In Islam muslim do not have any free time, they have to engaged in fruitful matters.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন