শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

বগুড়ায় ১৬ মাসে খুন ১৬৮

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ২ মে, ২০২১, ৬:০৫ পিএম

নেপথ্যে ভুমি ও বালু দস্যুতা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার মাদক কারবারি পরকিয়া চাঁদাবাজি
বগুড়ায় ভুমি ও বালু দস্যুতা, পুর্ব শত্রুতা, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, মাদক কারবারি, পরকিয়া, চাঁদাবাজি, এমনকি ছিনতাইকারীদের হামলা ইত্যাদীতে খুন হচ্ছে মানুষ। খুনের সংখ্যা নেহাত কম ও নয়। পুলিশের খাতার হিসাবে বগুড়ায় গত ১৬ মাসে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৬৮ টি ।
সচেতন মহলের অভিমত, দ্রুত আইনী ব্যবস্থা হিসেবে আসামী গ্রেফতার ,চার্জশিট প্রদান ইত্যাদী পুলিশী ব্যবস্থায় গাফিলতি ও আদালতে সহজে জামিন লাভ খুনির্দে উৎসাহ যোগাচ্ছে । বাড়ছে খুনের ঘটনা।
পুলিশ সুত্রে জানা যায় , বগুড়ায় ২০১৯ সালে খুন হয়েছে ৭৮টি। ২০২০ সালে ৭৭টি এবং চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ঘটেছে ১৩টি নির্মম হত্যাকান্ড।
চলতি রমজানের প্রথম রাতে ছিনতাইকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন বগুড়া শহরতলীর মাটিডালি উত্তর পাড়ার মরহুম আইনুল কাজীর ছেলে শফিউল্লাহ ওরফে শিপন (৩০) নামের এক যুবক । নিহত শিপন বগুড়া শহরের রাজাবাজারের একটি আড়তের কর্মচারি হিসেবে নিজের কর্মস্থলে রাত ১২ টা পর্যন্ত কাজ করে রমজানের বাজার করে অটো রিক্সাযোগে বাড়ি ফিরছিল । মাঝরাতে সে বাড়ির সামনের রাস্তায় নামলে তার ওপর ছড়াও হয় ছিনতাইকারীরা ।
বাধা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছিনতাইকারীরা তার ওপর এলোপাতাড়ী ছুরিকাঘাত করে । এমনকি তার চোখ দুটি উপড়ে ফেলে। এই ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হলেও পুলিশ কোন আসামীকে ধরতে পারেনি। নিহতের স্বজনরা বলছেন , পুলিশ মোটেও আন্তরিক নয় ।
এর আগে ৪ এপ্রিল বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে রাত ৯ টার দিকে ছিনতাইকারীদের হাতে নির্মম খুনের শিকার হন ওই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র মেস নিবাসী বিশু মিয়া। ঘটনার রাতে সে শিবগঞ্জে তার পৈতৃক বাড়ি থেকে কলেজ পড়–য়া ও মেস নিবাসি তার এক বোনের জন্য ৪ হাজার টাকা নিয়ে ফিরছিল । ছিনতাইকারীরা পথ আটকিয়ে তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিতে বাধার সম্মুক্ষিণ হওয়ায় ছুরিকাঘাতে তাকে মেরে ফেলে ।
নিহত বিশু মিয়ার পরিবার প্রভাবশালী না হওয়ায় মামলাটি হিমঘরে ফাইলচাপা পড়ে আছে । পুলিশের ভুমিকা নিরব ।
রাজনৈতিক প্রভাব টিকিয়ে রাখতে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগ নেতা ও চিহ্নিত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী আব্দুর রউফ তারই প্রতিদ্বন্দি¦ অপর ছাত্রলীগ নেতা তাকবির ইসলাম খানকে ১১ মার্চ রাতে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে আহত করে । হাসপাতালে ভর্তি হয় তাকবির। এই ঘটনায় তাকবিরের মা আফরোজা খান বাদি হয়ে রউফ সহ ১৪ জনকে আসামি করলেও পুলিশ তাকবিরকে আসামী করে হামলাকারীদের করা একটি মামলা আগে এন্ট্রি করে পরে তাকবিরের মামলাটি গ্রহন করে । উদ্দেশ্য যাতে তাকবির মারা গেলে খুনি রউফ আইনের আনুকল্য লাভ করে ।
১৬ মার্চ মারা যায় তাকবির । চারিদিকে হৈচৈ পড়ে গেলে পুলিশ বাধ্য হয়ে তাকবিরের মায়ের দায়ের করা মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রুপান্তর করে আল আমিন নামে একজনকে গ্রেফতার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহন করে তাকে জেল হাজতে পাঠায় । অপরদিকে এই ফাঁকে রউফ হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাকবিরের বাবা জহুরুল ইসলাম খান।
এদিকে বগুড়ার শিবগঞ্জের কৃষকলীগ নেতা আজাহারুল ইসলাম নান্টু হত্যাকান্ডের ২ ও ৩ নম্বর আসামীর কাছে একটি ৮ লাখ টাকা মুল্যের কার গাড়ি গিফট নিয়ে পুলিশের এএসপি র‌্যাংকের কর্মকর্তা আসামীদের ধরতে বাধা দিচ্ছেন মর্মে অভিযোগ করেছেন নিহত নান্টুর বাবা । মৌখিক অভিযোগ পেয়ে অবশ্য মামলাটির আইও বদলে শিবগঞ্জ থানার বদলে বগুড়া ডিবিতে স্থানান্তর করেছের বগুড়ার এসপি আলী আশরাফ ভুঞা ( বিপএম, বার)।
এসপি বলেছেন , খুনের মামলার ব্যাপারে কোন আপোষ নেই । তিনি জানান, প্রত্যেকটি খুনের মামলার তদন্ত হচ্ছে । আসামী গ্রেফতার ও চার্জশিট প্রদানের কাজও চলছে ।
পুলিশ যে বসে নেই তার উদাহরন দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন , গত ১৩ এপ্রিল বগুড়ার শাজাহানপুরে সিয়াম নামের একজন শিশু খুনের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ হত্যার কারন উদঘাটন সহ একমাত্র অসামিকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে ।
তিনি জানান , ভুমি ও বালু দস্যুতা , মাদক কেনাবেচা , রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার , পরকীয়া সহ সামাজিক অবক্ষয়জনীত কারনে অসহনশীলতার কারনে খুনের ঘটনা বাড়ছে । খুনিরা জামিন পাচ্ছে আদালতে । তাই সার্বিকভাবে সবকিছু না দেখে শুধু পুলিশের ওপরই সব দায় চাপানো ঠিক হবেনা ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন