পবিত্র ঈদুল আজহায় ঢাকার দুই সিটিতে লাখ লাখ কোরবানিকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার কাজটি বরাবরই একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। ঈদ পেরিয়ে ৪-৫ দিন পরও ঠিকমত বর্জ্য অপসারিত না হওয়ার উদাহরণও আছে অতীতের অনির্বাচিত নগর প্রশাসকদের আমলে। ২০১৫ সালের ডিসিসি নির্বাচনের পর থেকে ঢাকার দুই সিটি মেয়র যত দ্রæত সম্ভব কোরবানির বর্জ্য অপসারণের বাস্তবোচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। ঈদের আগেই ঘোষণা দিয়ে ৭২ বা ৪৮ ঘণ্টার এবার কোরবানির বর্জ্য অপসারণের প্রতিশ্রæতি দিয়ে তারা প্রতিশ্রæতি অনেকটাই রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। গত বছর দুই সিটি কর্পোরেশন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিলেও এবার তারা ৪৮ ঘণ্টায় সব পশু বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিল এবং যথারীতি সফলও হয়েছে। যদিও এবার ঢাকাসহ দেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রচারণা বা নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের দিন প্রায় সারাদেশেই ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কোরবানির কাজে কিছুটা বিঘœ ঘটলেও এ পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দুর্গন্ধ দূর করার ক্ষেত্রে অনেকটাই কাজে এসেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তা বা স্থানগুলোকে যারা কোরবানির জন্য বেছে নিয়েছিলেন তারা অশেষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। এসব রাস্তায় উপচে পড়া বৃষ্টির পানির সাথে কোরবানির বর্জ্য, রক্ত এবং স্যুয়ারেজের ময়লা একাকার হয়ে গিয়েছিল।
নিয়মিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের চরম ব্যর্থতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ইতিমধ্যে ঢাকা নগরী বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য ও অনিরাপদ শহরের তালিকায় স্থান লাভ করেছে। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ার জন্য দায়ী কলকারখানাগুলোকে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিশোধনব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতেও চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে সিটি করপোরেশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও বিভাগগুলো। বিশেষত: বুড়িগঙ্গা দূষণের অন্যতম অনুঘটক হাজারিবাগের টেনারিশিল্প স্থানান্তরে ব্যর্থতার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের শৈথিল্য অনেকাংশে দায়ী। এবার কোরবানীর আগেই টেনারিশিল্প স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হলে লাখ লাখ পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে হাজার হাজার টন তরল ও ভারী রাসায়নিক দূষণ থেকে বুড়িগঙ্গা রক্ষা পেতে পারতো। স্বাভাবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হলেও ঈদে লাখ লাখ পশু কোরবানির ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত হাজার হাজার টন বর্জ্য অপসারণে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ এবং সাফল্য থেকে প্রতীয়মান হয়, কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট উদ্যোগ ও সদিচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব। নগরীর যানজট নিরসন, স্যুয়ারেজ লাইনের সংস্কার এবং ফুটপাতগুলোকে দখলমুক্ত করতেও দুই সিটি মেয়র প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন, এই দাবী সকলের। নগর কর্তৃপক্ষ নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ উন্নয়নে এভাবে সারাবছর তাদের জনবল এবং লজিস্টিক কাজে লাগাতে পারে না কেন, তার যথাযথ মূল্যায়নপূর্বক কার্যকর উদ্যোগ নিলেই ঢাকা বিশ্বের অন্যতম নোংরা শহরের বদনাম ঘুচিয়ে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
গত বছর কোরবানির ঈদের অনেক আগে থেকেই দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদ্বয় বর্জ্য অপসারণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। স্বাভাবিক কারণেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ প্রাসঙ্গিক উদ্যোগ দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভাগুলোতে প্রভাব ফেলে। প্রচার-প্রচারণা ও গণসচেতনতার কারণে এবং উদ্যোগ, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ত্বরিৎ পদক্ষেপ এবং ভারী বৃষ্টিপাত কোরবানির বর্জ্য ও উদ্ভুত দুর্গন্ধ ও দূষণ থেকে অনেকটা রক্ষা পেয়েছেন নাগরিকরা। এবার কমিশনারগণ এমনকি মসজিদ থেকে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও বর্জ্যরে বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে কোরবানির জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেয়ার উদ্যোগ কতটা সফল হয়েছে তার সঠিক বিচার-বিশ্লেষণ এখনই সম্ভব নয়। দুই সিটি কর্পোরেশনের এ ধরনের সিদ্ধান্ত শুরু থেকেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অধিকাংশ স্থানেই এ নিয়ম মানা হয়নি বলেই অনুমান করা যায়। সার্বিক বিচারে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন প্রশাসন কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সফল হয়েছেন। দুই মেয়র এ ব্যাপারে বিশেষভাবে ধন্যবাদ পেতে পারেন। এই সাফল্যের জন্য তাদেরকে আমাদের অভিনন্দন। ভবিষ্যতে তারা আরো আধুনিক, রীতিসম্মত ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নেবেন এটাই নগরবাসীদের প্রত্যাশা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন