সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : শরীর ও মনস্তত্ত¡বিদদের মতে মানুষ হচ্ছে একটি মনোদৈহিক সংগঠন। মানুষের দেহের জন্য যেমন দৈনন্দিন খাদ্যের প্রয়োজন হয় তেমনি মনের জন্যও প্রয়োজন হয় বিনোদনের। প্রয়োজন হয় একটু আনন্দ-উল্লাসের। দেহ ও মনের বিকাশ সমান্তরাল না হলে মানুষ প্রতিবন্ধীত্বের শিকার হয়। আর এই বৈজ্ঞানিক তত্ত¡ বা সত্যকে সামনে রেখে উন্নত দেশগুলো তাদের দেশের নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করে থাকে। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সুস্থ বিনোদনের অবাধ সুযোগ থাকে। অনুন্নত এলাকা হিসেবে নরসিংদীসহ দেশে সে সুযোগ খুবই সীমিত। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যা কিছু আছে তা উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সাধারণ মানুষের জন্য বিনোদন বলতে যা আছে তা হচ্ছে ভারতীয় টিভি চ্যানেল। এসব টিভি চ্যানেলসমূহের অসুস্থ, অসঙ্গত বিনোদন ব্যবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষ অসুস্থ বিনোদনের দিকেই ঝুঁকে পড়ছে। মানসিকভাবে হয়ে পড়ছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন। এরপরও মানুষ মনের তাগিদে পাহাড়, নদী, বনাঞ্চল খুঁজে বেড়ায়। খুঁজে বেড়ায় ইট-পাথরের খাঁচার বাইরে একটু মুক্ত আকাশ আর একটু মুক্ত বাতাস। বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে মানুষের মন চার দেয়ালের বাইরে বেরিয়ে যেতে চায়। নরসিংদী জেলা শহর ও এর আশপাশের এলাকায় সরকারি কোনো পার্ক নেই। নেই ঘুরে বেড়াবার একটু ভালো জায়গা। নরসিংদীর হাড়িধোয়া, পুরনো ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর পানি কারখানার দূষিত বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে গেছে। পানির দুর্গন্ধে এসব নদ-নদীর কিনারা দিয়ে হাঁটা যায় না। কিছুটা ভালো আছে আড়িয়ালখাঁ ও পাহাড়ি কলাগাছিয়া নদীর পানি। এবারের কোরবানির ঈদে নরসিংদী জেলা শহরের মানুষ তাদের বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেয় নরসিংদী শহরসংলগ্ন বাদুয়ারচরের আড়িয়াল খাঁ সেতু। সদ্য নির্মিত নরসিংদী-রায়পুরা সড়কের এই সেতুটি নির্মিত হয়েছে ঢাকা-চট্রগ্রাম রেল সড়কের একটি রেল সেতুর পাশে। দু’পাশে নি¤œভূমির বুক চিড়ে উত্তর দিক থেকে দক্ষিণে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে আড়িয়াল খাঁ নদ। নদের পূর্ব পাশে বিস্তীর্ণ নি¤œভূমিতে সবুজ ঘাসের বিছানা এর উপর শরতের পড়ন্ত বিকেলের সোনা রোদের আভা এক অপরুপ নৈসর্গিকতার অবতারণা ঘটায়। এর মধ্যে রেল সেতুর পাশাপাশি আড়িয়াল খাঁ নদের উপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন সড়ক সেতুর প্রশস্ত অবয়ব এখানকার নিসর্গ শোভাকে আরো মাতিয়ে তুলেছে। আর এতটুকু নৈসর্গিকতার আবাহনেই ঈদের পরদিন বিকেলে শহরবন্দি হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ছুটে যায় বাদুয়ার চরের আড়িয়াল খাঁ সেতুতে। ঈদের নতুন রং-বেরংয়ের দৃষ্টিনন্দন পোশাকে হাজারো মানুষের সম্মিলন সেখানকার পরিবেশকে আরো উচ্চে নিয়ে যায়। মানুষ মনের আনন্দে সেলফিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মত্ত হয়ে পড়ে গল্প-গুজবে আর ঈদের শুভেচ্ছায়। এর মধ্যে ঝালমুড়ি, ফুসকা খেলাধুলা সামগ্রীর দোকানসহ বিভিন্ন ফেরিওয়ালাদের উপস্থিতি এলাকাটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। পরিণত করে একটি বৈকালিক বিনোদন কেন্দ্রে। সেখানকার বিশেষ আকর্ষণ ছিল পাগলা পানি নামে একটি সুস্বাদু আচার। তেঁতুল, আমলকি, হরিতকি, বহেরা, লেবু, আমড়াসহ আটটি অ¤øরস সমন্বয়ে তৈরি টক, মিষ্টি, ঝাল স্বাদের এই আচার মানুষের আনন্দে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে। এছাড়া সেতুর নিচে আড়িয়ালখাঁ নদে নৌকা নিয়ে কিশোর-কিশোরীরা গানের তালে নেচে-গেয়ে আনন্দ-উল্লাস করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন