নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তাঁত কারিগরের তৈরি শাড়ি ও জামদানির কদর দিনকে দিন বেড়েই চলছে। এই অঞ্চলের তাঁতের চাদরসহ বিভিন্ন প্রকার শীতবস্ত্র দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। তৈরি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি ও সাধারণ সুতায় গাঁথা তাঁতের শাড়ি। তবে হাতে বোনা তাঁতী ও পাওয়ারলুম চালিত দেশীয় তাঁতের হতাশা ক্রমেই বাড়ছে। করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের অর্থনীতি। সামনে ঈদ থাকলেও নেই ক্রেতা সমাগম। তবু হাল ছাড়েননি রূপগঞ্জের মাছিমপুর এলাকার তাঁতীরা। ধরে রেখেছেন সেই পুরনো পেশা।
সরেজমিন রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মাছিমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানকার ৩০টি পরিবারের প্রধান পেশা তাঁতবুনন। তাই তাদের উঠানের আঙিনায় শোভা পাচ্ছে দু’একটি করে হাতেবোনা তাঁতের কল। এসব তাঁতকলগুলো চালনা করছেন পরিবারের সদস্যরা।
মাছিমপুরর এলাকার তাঁতী হারুন উর রশিদের স্ত্রী রুমা বেগম জানান, তার ৩ মেয়ে ১ ছেলের সংসার। তার স্বামী কৃষি কাজের পাশাপাশি বাড়িতে দুটি তাঁত কল বসিয়ে দিয়েছেন। ৩ মেয়েকেই শিখিয়েছেন তাঁতবুনন কৌশল। বড় মেয়ে হ্যাপিকে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর বিয়ে দিয়েছেন। মেঝো মেয়ে শাহনাজ শিল্পি এবার এইচএসসিতে পড়ছে এবং ছোট মেয়ে নাজমীন সুইটি ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একমাত্র ছেলে সোহাগকে ও লেখাপড়া করাচ্ছেন স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে।
রুমা বেগম জানান, তার পরিবারের সবাই কর্মক্ষম। মেয়ে দুটি তাদের স্কুল ও কলেজ শেষে তাঁতবুনন কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাদের হাতে বোনা তাঁতকল থেকে দিনে ২ থেকে ৪টি কাপড় তৈরি হয়। প্রতিটি কাপড় তৈরিতে খরচ হয় ২৫০ থেকে শুরু করে ৪শ’ টাকা। আর তা স্থানীয় পাইকারি বাজারখ্যাত ভুলতার গাউছিয়া, নরসিংদীর বাবুর হাট, তারাবোর জামদানি পল্লি ও ডেমরা বাজারে পাইকারিভাবে ৬শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারেন। এভাবে এ তাঁতবুনন থেকে তাদের মাসিক আয় হচ্ছে ৪ হাজার টাকা।
একই চিত্র দেখা গেছে, একই গ্রামের আরো ৩০টি পরিবারের মধ্যে। তাদের প্রতিজনের বাড়িতেই রয়েছে ২টি থেকে ২০টি পর্যন্ত তাঁতকল। স্থানীয় মজিবুর, আমজাদ, হবিবুর ও খোকন মিয়ার ৬০টি তাঁতকল দেখা গেছে। তারা পরিবারের সদস্য ছাড়াও তাঁতীদের বেতন দিয়ে রাখছেন। কেউ কেউ বাণিজ্যিকভাবে বসতঘরের এককোণে বসিয়েছেন এ তাঁতকল। এভাবে প্রায় ৮৬টি তাঁতকল দেখা গেছে এই গ্রামটিতে। তাই এ গ্রামটিকে তাঁতের গ্রাম বলে থাকেন পাশের গ্রামের লোকজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ গ্রামের প্রতিটি পরিবার সাবলম্বীদের তালিকায়। কারণ হিসেবে তারা বলেন, প্রাচীন পেশা তাঁত বুননের কৌশলটি নানা সমস্যার পরও ধরে রেখেছেন। জামদানি তাঁত ও হাতে বোনা তাঁতের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ এলাকার তাঁতগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে দেশীয় তৈরি তাঁতের বাজার তৈরি না হওয়ায় ইতোমধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ তাঁত বন্ধের পথে। কেউ কেউ এ ব্যবসা গুটিয়ে অন্য ব্যবসায় ঝুঁকছেন। ফলে উপজেলার তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নানা বাধা সত্তে¡ও শীতের প্রস্তুতি নিতে এখানকার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শাড়ি তৈরিতেও পিছিয়ে নেই তারা।
সরকারিভাবে গ্রামীণ জনপদে প্রশিক্ষণের কোন সুব্যবস্থা না থাকায় কেবল দেশীয় তাঁত বিদেশী প্রযুক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে দেশীয় তাঁত পড়েছে হুমকির মুখে। দেশের বৃহত্তম পাইকারি মার্কেট রূপগঞ্জ থানার গাউছিয়া, নরসিংদীর সেখের চর, তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া জামদানি পল্লী, কাঞ্চন বাজার, মুড়াপাড়া বাজার, ইয়াপুরার হাটে সপ্তাহের বিভিন্ন দিন জমজমাট হাট বসে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন