শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

অবিলম্বে এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে হবে

প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিদের রায় লেখা নিয়ে কিছুদিন আগে প্রধান বিচারপতি একটি মন্তব্য করেন। এরপর থেকেই তার ওই মন্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে অভিমত আসছে। টিভি চ্যানেলের টকশোতে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংসদেও আলোচনা হয়েছে। আলোচকদের অনেকেই এবং সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেছেন। তাদের সমালোচনার ভাষা বেশ কঠোর। সুপ্রিমকোর্টের সদ্য অবসরে যাওয়া একজন বিচারপতি টিভির টকশোতে প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে যা বলেছেন, অনেকেই তাতে বিব্রত বোধ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে আরেকজন বিচারপতি, যিনি কয়েকমাস আগেও বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, এ ধরনের কথা বলতে পারেন কিনা। এই সদ্য সাবেক বিচারপতি প্রধান বিচারপতি বরাবরে গত রোববার একটি চিঠি পাঠিয়ে দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে সেই চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশ করেছেন। তিনি চিঠিতে অবসরে লেখা তার রায় ও আদেশ গ্রহণ করার বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। অভিযোগ করেছেন, তাঁর লেখা রায় ও আদেশ জমা দিতে চাইলে গ্রহণ করা হয়নি। প্রধান বিচারপতি ‘সংবিধান, আইন ও প্রথা-বিরোধী’ আচরণ করেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছিলেন, অবসরে গিয়ে বিচারপতিদের রায় লেখা সংবিধান বিরোধী। এরপরই মৌচাকে ঢিল পড়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, বাক-বিত-া চলছেই। এ বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা ও সর্বসম্মত একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যেখানে কাম্য ছিল, সেখানে তর্ক-বিতর্কের ডালাপালা বিস্তৃত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সদ্য সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী সবচেয়ে বেশি সোচ্চার বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। বিচারপতিদের নিয়ে বিশেষ করে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে টিভি টকশো, এমন কি সংসদে আলোচনা-সমালোচনা যেমন প্রত্যাশিত নয় তেমনি সদ্য সাবেক একজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করবেন, তাও কাম্য হতে পারে না।
এই আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক-বিত-া বিচার ব্যবস্থা, বিশেষত সর্বোচ্চ আদালতের ভাব-মর্যাদার জন্য মোটেই অনুকূল নয়। এটা সমাজের সর্বস্তরে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি করছে। জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার পর সুপ্রিমকোর্টের তরফে একটি ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। সেখানে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে তার কাছে যতগুলো অনিষ্পত্তিকৃত রায়ের ফাইল রয়েছে তা রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসে অতি সত্বর ফেরৎ দানের অনুরোধ জানানো হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, তার রায় ও আদেশ গ্রহণ করা-না করার যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তার সমাধান হয়ে গেছে। এ নিয়ে লোক জানাজানি ও বিত-া বাড়ানোর কোনোই প্রয়োজন ছিল না। এতে বিচারাঙ্গনসহ কারোরই মর্যাদা বাড়েনি। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, জনসম্মুখে বিচারপতিদের এ ধরনের বক্তব্য বিব্রতকর। বিশিষ্ট আইনবিদ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, যেভাবে বিচারপতিদের পাল্টা বিবৃতি হচ্ছে, তা সুপ্রিমকোর্টের ভাব-মর্যাদা উজ্জ্বল করছে না। বিচারপতিদের ওপর জনগণের প্রত্যাশা সুদৃঢ় হচ্ছে না।
সুতরাং, অবিলম্বে এই আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের অবসান হওয়া দরকার। অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিদের রায় লেখা সাধারণ ও নৈতিক দিক দিয়ে সমর্থন করা যায় না। এর ওপর রয়েছে প্রচলিত আইন ও সংবিধান। এটা ঠিক যে, অবসরে গিয়ে রায় লেখার একটা প্রথা চালু আছে। এ ব্যাপারে অবশ্যই একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। অবসরে গিয়ে রায় লেখা নীতিনৈতিকতা, আইন ও সংবিধানের পরিপন্থী বিবেচিত হলে তা বন্ধ করা যেতে পারে। বিচারপতিরা অবসরে যাওয়ার আগেই যাতে তাদের সকল রায় লিখে জমা দিয়ে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট বিধি বা আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। প্রধান বিচারপতি এ সম্পর্কে একটি নির্দেশনাও দিতে পারেন। আমরা আশা করবো, বিষয়টির সুরাহার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দ্রুতই এই আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের অবসান ঘটাতে হবে। জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই এটা জরুরি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন